পরিভাষা বলিতে একসময় পরিদের ভাষাকেই বুঝিতাম...পরবর্তীতে এ ধারণায় আমূল পরি-বর্তন আসে।পরিদের কল্পনা করিয়া কত পরিকল্পনা যে করিয়াছি তাহা বলিয়া শেষ করা যাইবে না।এখন জীবন পরিচালনা করিতে গিয়াই পরিতাপ করিয়া কোন কূল কিনারা পাইতেছি না।অনুবাদ করিতে গিয়া বাটারফ্লাই এর অর্থ আমি পাল্টাইয়া ফেলায় নম্বর না পাইলেও কিছু বাংলা অনুবাদ সর্বদাই আমাকে হাস্যরসের খোরাক যোগাইয়াছে...যেমন “A mam while climbing a hill each minute he climbs 5 ft and drops 2 ft...if the height of the hill is 80ft how much time is required for the man to climb at the top of the hill?”
এই অংকের বাংলা ভার্সনে ম্যান এর অনুবাদ হইয়াছে বাঁনর এবং হিল এর অনুবাদ হইয়াছে তৈলাক্ত বাঁশ।গ্রামীনফোনের বর্তমানে একটি এড আছে যেখানে এই বাঁশে তেল দেয়া বন্ধের দাবী জানানো হইয়াছে...আসলে বাঁশে তেল দিলে তাহা আরামসে ঢুকিয়া যায় বিধায়ই গ্রামীনফোন এই ব্যবস্থা লইবার দাবি জানাইয়াছে যাহাতে উহাদের গ্রাহকরা ঠিকমতো বাঁশ খাইতে পারে।আসলে বাঁশের টেকসই উন্নয়নে তেলের ভূমিকা এইখানে অগ্রাহ্য করা হইয়াছে...আমাদের সামুর “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” কিংবা টেলিটকের “বাঁধ ভেঙ্গে দাও” স্লোগানে বাঁধের অংশে ধ এর পরিবর্তে শ এর ব্যবহার হইতে পারে যুগান্তকারী।

আমাদের বাংলা ভাষাটা কিছু ক্ষেত্রে নারী বিদ্বেষী...যেমন ছেলেবেলা কথাটার বিপরীতে মেয়েবেলা কথাটা কিন্তু আমাদের ভাষায় নাই...তেমনি রাষ্ট্রপতির বিপরীত রাষ্ট্রপত্নী নাই।এছাড়া আরো অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়।এইসব দিকে যে আমাদের সুশীল সমাজ কবে নজর প্রদান করিবে।অন্যদিকে পাঠ্যবইয়ে “ঝি কে মেরে বউকে শেখানো” এর মত প্রবাদ বাচ্চা কাল থেকেই পড়াইয়া পরিশেষে বিসিএস পরীক্ষার লিখির অংশে কিনা আসে নারীর ক্ষমতায়ন...সত্যি বড় বিচি-ত্র এ দেশ সেলুকাস...
আসলে বাংলা ভাষা যে কত রহস্যময় তা নিচের দুইটি গল্পেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হইয়া যায়...
গল্পঃ১ এক জাপানী শান্তিনিকেতনে বাংলা শিখবার পর গুরুদেবের সাথে তার কথোপকথন...
গুরুদেবঃ বাবা এখানে থাকাটা তোমার কেমন লেগেছে?
জাপানীঃ সব ভালোই লেগেছে কিন্তু গুরুদেব...
গুরুদেবঃ কিন্তু কি বাছা?
জাপানীঃ গুরুদেব এখানে সবাই সবাইকে দাদা বলে ডাকে।যেমন বিমল কে বিমলদা,তপনকে
তপনদা,বিকাশকে বিকাশদা কিন্তু আমাকে কেউই এমন দাদা বলে ডাকে নি...
গুরুদেবঃ তা নাম কি তোমার বাবা?
জাপানীঃ বোকা চো...

গল্পঃ২ এটা আমার বাপের কাছ থেকে শোনা।
একবার এক বিদেশী বাংলাদেশে এসে বাংলা শিখল।তো সে যে খুব ভালো বাংলা পারে সেইটা সে জাহির করিয়া বেড়ায়...তো একদিন এক লোকের কাছে সে তার বাংলা ভাষার বিদ্যা জাহির করিতে শুরু করিল।তো সেই লোক কইল আপনি বাংলা ভাষার কিছুই এক্ষনো শিখেন নাই আসেন প্রমাণ দেখাই।তো সেই লোক বিদেশীটাকে নিয়া নৌভ্রমণে গেলেন।তো কিছুক্ষণ নৌকায় করে ঘোরার পর সেই লোক বিদেশীকে বললেন যে, “নাউ আসক দ্য বোটম্যান টু টার্ন এন্ড মুভ দ্য বোট টু দ্য পোর্ট ইন বেঙ্গলি”। তো সেই বিদেশী মাঝিকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, “ওহে কর্ণধার,তরণী তটে সংলগ্ন কর”।মাঝির মধ্যে দীর্ঘক্ষণেও কোন ভাবান্তর না দেখিয়া তিনি আবার এই কথা বলিলেন।এবার বাঙ্গালী বাবু বলিলেন, “লেট মি ট্রাই”...এরপর তিনি মাঝিকে বললেন, “ওই মাঝি নৌকা ঘাটে নে...” আর এই কথাতেই কাজ হইল...আর ঐ বিদেশীও বুঝল যে তার বাংলা শিখতে অনেক বাকি।
আগের দুই পর্বের লিঙ্ক
বঙ্গ ভাষার রঙ্গ-পার্ট-২(১৮+)
বঙ্গ ভাষার রঙ্গ-পার্ট-১(১৮+)