Continued from বঙ্গ ভাষার রঙ্গ-পার্ট-১(১৮+)
একটু আগে যে মুতিঝিল মডেল পড়িয়াছিলেন উহাকে জলিলীয় উচ্চারণ মনে করিয়া ভুল করিয়া বসিবেন না।স্কুল জীবন হইতেই আমার মনে হইত মতিঝিল নহে বরং মুতিঝিলই সঠিক উচ্চারণ।ঝিলে মূত্রত্যাগের বিষয়টাই এইখানে প্রাধান্য দেয়ার কথা।আর আমরা তো জানি সকল মহৎ চিন্তার উৎস হইল টয়লেট।আর মুতিঝিল নামকরণের সময় বাংলাদেশের মানুষ মুতিবার জইন্য স্যানিটারি ল্যাট্রিন কিংবা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করিত ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে।আর স্কুল,কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটে জামাতের সহিত মূত্র বিসর্জনে শরীক হওয়ার অনুভূতি কি আর যাহারা এর স্বাদ পাইয়াছে তাহাদিগকে বলিবার অপেক্ষা রাখে।শুধু শুধুই তো মুনি- ঋষিরা বলিয়া যান নাই যে, “ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ”।উচ্চারণে ভুলের ব্যাপারে জলিল ভাইয়ের কথা যখন উঠিলই তখন তাহার বিখ্যাত উক্তিটি উল্লেখ না করিলেই নহে... “আর ইউ পম গানা”... ভাগ্যি ভালো উনি সুইডেন কিংবা সুদান লইয়া কথা বলেন নাই।তাহা হইলে জলিলীয় উচ্চারনে স-কে চ উচ্চারণ করিয়া ফেলিলে কিরূপ একটা কেলেঙ্কারি কি হইয়া যাইত না???বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় রসায়ন বিভাগের অধিকাংশ জাপান ফেরত শিক্ষকেই দেখিতাম প কে ফ উচ্চারণ করিত।এই উচ্চারণ কত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করি পারে তাহা নিম্নোক্ত বাক্যে প্রয়োগ করিলেই বুঝিতে পারিবেন, “তাড়াতাড়ি পাক কর, খিদা লাগছে”।পরিসংখ্যান বিভাগে মাইনর ক্লাস করিবার সময়ে একবার উচ্চারণ সংক্রান্ত এক বেশ আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হইয়াছিল।মোতেছেন থুক্কু মোতাছেম বিল্লাহ্কে যাহারা চিনেন তাহারা সকলেই জানেন তিনি কি মচৎকার(!!!!) পড়ান।তার ক্লাসে একদিন এক মেয়ে হঠাৎ বলিয়া উঠিল, “স্যার শোনা যায় না...” এহেন পরিস্থিতিতে মোতাছম বিল্লাহ্ গলার সাউন্ড একটু বাড়াইয়া বলিলেন, “এখন শোনা যায়?”...মেয়েটি বলিয়া উঠিল, “স্যার শোনা যায় তবে বোঝা যায় না”।আসলে আলোচ্য কথোপকথনে শোনার শ-কে আমরা স-তে কনভার্ট করিয়া ফেলায় উক্ত সংলাপটির তাৎপর্য যে কত গুরুত্বপূর্ণ হইয়া গিয়াছে সকলেই উপলব্ধি করিতে পারি।অবশ্য বাংলা ভাষায় উচ্চারণ আর বানান ঠিক রাখিয়াও যে অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝাইতে অসুবিধা হয় তাহার উৎকৃষ্ট উদাহরন হইল ডাল... ইহার দ্বারা খাদ্য সামগ্রী মসুর কিংবা মুগ ডাল যেমন বোঝায় তেমনি গাছের শাখা বা ডাল ও বোঝায়।ঢাল-তলোয়ার এবং পাহাড়ের ঢালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
মানবজীবনে সোনার তাৎপর্য যে কেবল এর উপোর্যপুরি মূল্য বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধ নহে তাহাও প্রবাদ প্রবচনে প্রতিফলিত হইয়াছে।যেমন “চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই বাক্যের তাৎপর্য যে আমরা কোথায় লইয়া গিয়াছি তা তো বুঝিতেই পারিতেছেন।আর তাইতো নাম সোনা মিয়া হইতে লাল মিয়া করিয়া লইতে গিয়া “সোনা কাইট্টা লাল বানায়া দেন” এর মত কৌতুকের উদ্ভব হইয়াছে।বাংলা ভাষার প্রবাদ প্রবচন লইয়াও আমার আগ্রহের কখনোই কমতি ছিল না।“গরু মেরে জুতো দান” প্রবাদখানা লিখিতে গিয়া একবার “জুতো মেরে গরু দান” লিখিয়া ফেলার পর কিছুতেই শিক্ষককে বোঝাইতে পারি নাই যে উভয়ের অর্থই এক।তেমনি বাগধারা “অরণ্যে রোদন” এর রোদন অংশে র এর স্থলে চ বসাইলে ও যে তাবৎ অর্থের কোন পরিবর্তন হইবে না মূর্খ শিক্ষকমন্ডলীকে উহা কে বোঝাইতে যাইবে।বাংলা ভাষার প্রবাদ প্রবচন যে কিছু ক্ষেত্রে স্ববিরোধী তাহারও প্রমাণ পাওয়া যায়...যেমন “নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো” আর “দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো” এরা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দুইটিই শিক্ষা দেয়া হইয়া থাকে।বাংলা প্রবাদের বোধহয় সবচাইতে স্বতন্ত্র(ইউনিক) অংশ “নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ” প্রবাদটি কারণ উক্ত কাজ একমাত্র খাঁটি বাঙ্গালী ব্যতীত কারো দ্বারা সম্পাদন সম্ভব নহে।বাংলা বাগধারার যে অংশটি আমাকে সবচাইতে বিমোহিত করিয়াছিল তাহা হইল “পটল তোলা” যার অর্থ মারা যাওয়া।আসলে পূর্ণাঙ্গ পটল গাছ হতে সব পটল তুলিয়া ফেলিলে উহা মারা যায়।এই ঘটনা থেকেই উক্ত বাগধারার সৃষ্টি।আবার “অকাল কুষ্মান্ড” দ্বারা অপদার্থ বুঝাইলেও অকালের কুমড়া যে কতটা মূল্যবান উহা যাহারা বাজার হইতে সবজি ক্র্য করেন তাহারা হাড়ে হাড়ে টের পান।এছাড়াও “আশায় বুক বাধা” বাগধারার মাধ্যমে কি বক্ষবন্ধনীর ব্যবহারে উৎসাহিত করা হইতেছে কিনা তাহা আজও ঠিক ঠাহর করিতে পারি নাই।
সূর্যের তেজ যে দিন দিন কমিয়া আসিতেছে উহা ফিজিক্সের সূত্র পরিবার আগেই উপলব্ধি করিতে পারিয়াছিলাম এই বাংলা ভাষারই কল্যানে।বাচ্চাকালে সুর্য্য লিখিতে য-ফলা লাগাইতাম যাহা পরবর্তিতে বিলুপ্ত হইয়া যাইতে দেখিয়াছি।বানানের এইরূপ বিপর্যয় যে কতটা সাংঘাতিক হইতে পারে তাহা ২০০১ সালের নির্বাচনে দেখিয়াছিলাম।মতিঝিল এজিবি কলোনীর ৭৩ নাম্বার বিল্ডিং-এ বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় “ধানের শীষে ভোট দিন” বাক্যের ধান শব্দে আ-কার না দেওয়ার ফলে উক্ত বিপত্তি ঘটে।কলেজে পড়ার সময় কাঁটাবনের কাছে এমনি একটি চিকা মারায় বানানের এমন ভয়াবহ ত্রুটি দেখিয়াছিলাম যেখনে লিখা ছিল, “এখানে প্রসব করা নিষেদ”...পাশেই পিজি হাসপাতাল থাকায় ইহার তাৎপর্য আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাইয়াছিল।বানানে সামান্য ভুলের এই প্রযুক্তি সফলভাবে কাজে লাগাইয়াছিলাম বাংলা ব্যাকরণে।কাল লিখিতে ক এর লেজখানা কাটিয়া ব বানাইয়া দিয়া একটি প্রশ্ন ও তাহার সম্ভাব্য উত্তরসমূহে কি ঘটে চলুন দেখি... “বাল কাহাকে বলে?উহা কত প্রকার ও কি কি???উদাহরণসহ বুঝাও”। উত্তর লিখিতে গিয়া সংজ্ঞা প্রদানপূর্বক “বাল প্রধানত তিন প্রকার।যথাঃ১)অতীত বাল,২)বর্তমান বাল,৩)ভবিষ্যত বাল...এবং উহার পর উদাহরণ দিতে গেলে যে কি বিপর্যয় নামিয়া আসিত তাহা সহজেই অনুমেয়।
To be continued..........(চলিবে)