ছোটবেলা হইতেই আমি একটু জ্ঞানী এবং ভাবুক প্রকৃতির।যেহেতু এ জাতি জ্ঞানী এবং গুণীর মর্যাদা দিতে শিখে নাই তাই বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে আমার যে কত নীরব অবদান আছে উহা লোকচক্ষুর অন্তরালেই রহিয়া গিয়াছে।কিন্তু তাই বলিয়া আমার জ্ঞানস্পৃহা এবং উহার প্রয়োগ থামাইয়া রাখিতে পারে এমন কোন শক্তি আবিষ্কার হয় নাই...উত্তম কর্মে বাধা বিপত্তি আসিবেই কিন্তু তাই বলিয়া থামিয়া গেলে চলিবে না...নিম্নে বঙ্গ ভাষায় আমার কিছু অবদান(নিন্দুকের ভাষায় অপকর্ম) উল্লেখ করা হইল...
বাংলা সাহিত্যে আমার অবদানের সূচনা সেই বাল্যকালেই...অন্যদের চেয়ে একটু দেরীতেই আড়াই বছর বয়সে কথা বলা শুরু করি...কারণ আগেই বলিয়াছি আমি অত্যন্ত ভাবুক প্রকৃতির ছিলাম।আসলে জন্মের পর থেকে মানব জাতিকে অযথা বাক্য ব্যয় করিতে দেখিয়া অত্যন্ত মর্মাহত হইয়া আমি আড়াই বছর বাকরুদ্ধ হইয়াছিলাম...বড় হইয়াও এই কথাটা কাহাকেউ বিশ্বাস করাইতে পারিলাম না।এইদিকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কথা না বলিয়া পরবর্তীতে আলবার্ট আইন্সটাইন নোবেল পুরষ্কার পাওয়ায় দাবি করিলাম আমি অর্ধেকটা নোবেল পুরষ্কার পাইব।তাহারা আমার কথা বিশ্বাস করিলেন না...তাহারা বিশ্বাস করিলেন “মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ,আর বাঙ্গালীর উপর বিশ্বাস রাখা বিপদজনক”।যাহা হউক আমার বয়স যখন ৫ হইয়া গেল বাপ চিন্তা করল পোলারে এইবার ইশকুলে পাঠাইতে(বলির পাঠা করিয়া) হইবে।শিক্ষকবৃন্দের বেত্রাঘাতের জন্য পুত্র এখন প্রস্তুত।মতিঝিল এজিবি কলোনীতে থাকার সুবাদে পিতা আইডিয়াল সরকারী প্রাথমিক এবং মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে পরীক্ষা দেওয়াবার সিদ্ধান্ত নিয়াছিলেন...তো মতিঝিল আইডিয়ালে পরীক্ষা দিতে গিয়া অনুবাদ আসিল Butterfly শব্দের।আমি Butter এবং Fly এই দুইটি শব্দের সাথে পরিচিত।কাজেই অনুবাদ করিলাম Butterfly = মাখন উড়া।তখন এখনকার মত জ্ঞান থাকিলে হয়ত লিখিয়া বসিতাম মাখনের মাছি।এই দেশ যে জ্ঞানীর মর্যাদা দিতে শিখে নাই তখনই প্রমাণ মিলিয়াছিল।এক নম্বরের জন্য মতিঝিল আইডিয়ালে চান্স পাই নাই...

ছোটবেলার বাংলা ভাষার সেই প্রতিভা বড় হইয়া যখন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিলাম তখন পূর্ণরূপে বিকশিত করিলাম।একবার স্কুলে বিপরীত শব্দ লিখায় আসিয়াছিল “ভূত”।আমি অত্যন্ত সরলমনে বিপরীত শব্দ লিখিয়া আসিলাম “পেত্নী”।কিন্তু শিক্ষকের উহা পছন্দনীয় হইল না।তিনি শুধু উহাতে আন্ডা প্রদান করিয়াই ক্ষান্ত হইলেন না বরং আমাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন এবং জানাইলেণ ভূতের বিপরীত ভবিষ্যত পেত্নী নহে।ইহা ব্যতীত তিনি ভূতের বিপরীত পেত্নী কোথায় পাইয়াছি এবংবিধ প্রশ্নবানে বিদ্ধ করিয়া আমায় বিব্রত করিলেন।বাংলার শিক্ষক হইয়াও যাহার দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের “ঠাকুরমার ঝুলি” সম্বন্ধে ধারণা নাই তাহার সহিত আমার মত জ্ঞানী লোকের তর্কে যাওয়া বৃথা বিধায় তর্কে যাই নাই...উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা প্রশ্নসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল পত্র লিখন।পত্র লিখনে ওই সময়টায় যুগের দাবি ছিল পাঠ্যসূচীতে প্রেমপত্রের অন্তর্ভূক্তি।যদিও মোবাইলের SMS আসিবার ফলে বর্তমানকালে প্রেমপত্র উহার উপযোগিতা হারাইয়াছে তথাপি উক্ত সময়ে যথাযোগ্য প্রশিক্ষণের অভাবে প্রেম নিবেদন করিবার নিমিত্তে প্রেমপত্র লিখিতে গিয়া কত প্রেমিক-প্রেমিকা যে প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হইয়াছিলেন তাহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখে না।এমনকি প্রেমপত্রে বানান ভুলের কারণে কত প্রেম যে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে তাহা ব্যক্ত করিয়া অজস্র দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় খুঁড়িয়া সে তীব্র বেদনা জাগাইতে চাহি না।তাছাড়া আবেদন পত্রের ক্ষেত্রেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই যুগোপযোগী হইতে পারে নাই।“বিবাহের অনুমতি চাহিয়া প্রেমিকার পিতা/মাতার নিকট আবেদন পত্র” কিংবা “প্রেম চলাকালে দেওয়া গিফটসমূহ+মোবাইলে রিচার্জ করা অর্থসমূহ ফেরত চাহিয়া প্রাক্তন প্রেমিকার নিকট আবেদন পত্র” কিংবা “প্রেম করিবার নিমিত্তে অর্থ চাহিয়া পিতার নিকট পত্র” এই সকল পত্রের চাহিদা বর্তমানেও স্থূলভাবে থাকিয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ কখনোই এইরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় নাই।এমতাবস্থায় বন্ধুর ছোত ভাই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় অভিনন্দন জানাইয়া পত্র লিখনই ছিল শিক্ষা ব্যবস্থার ভরসা। শিক্ষাকমিশনসমূহের কর্তাব্যক্তিদের বৃহৎ মস্তিস্কে ওই সকল ক্ষুদ্র চিন্তা প্রবেশ করিবে এই চিন্তা করা আসলেই আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নহে।তবে এইসব দুনিয়াবি প্রতিবন্ধকতা প্রতিভাকে দাবায়া রাখিতে পারে নাই।তাই বন্ধুর ভাইকে লিখিলাম, “পত্র মারফত খবর পাইয়াছি তুমি নাকি ট্যালেন্টপুলে বৃত্ত পাইয়াছো।এই খবরে আমি আনন্দে আত্মাহারা হইয়া গিয়াছি”।হাজার হউক প্রিন্টিং মিসটেক(কোন মিসকে মিসেস হিসাবে টেক নহে) বলিয়া কথা।
রচনা লিখিতে গিয়াও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখিতে কখনোই পিছপা হই নাই।রচনাতে কুড়ি নম্বরে নাম্বার দেয়া হইত পৃষ্ঠা গুনিয়া।ইহাই ছিল মুতিঝিল মডেল ইশকুলের অলিখিত রীতি।কাজেই পৃষ্ঠা বাড়াইতে অধ্যবসায় রচনায় আদু ভাইয়ের পাশের প্রচেষ্টা কিংবা রবার্ট ব্রুসের যুদ্ধক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের পাশাপাশি অবধারিতভাবে প্রেমের ক্ষেত্রে অধ্যবসায় স্থান পাইত।প্রেমের ক্ষেত্রে অধ্যবসায় পয়েন্টে নিজের অধ্যবসায়ের পাশাপাশি তৎকালীন ভিসিআর এর কল্যানে শাহরুখ খান,সোলায়মান খান কিংবা সঞ্জয় দত্তের পাশাপাশি সালমান শাহ্,নাঈম,ওমর সানিদের প্রেমের ক্ষেত্রে অধ্যবসায় কোন কিছুই বাদ পড়িত না।ফলে পৃষ্ঠা বাড়ার পাশাপাশি আমার সর্বোচ্চ ১৭ নম্বর তোলার বাস্তব অভিজ্ঞতা হইয়াছিল।“একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা” রচনা খানা লিখিতে গিয়া কতবার যে ব-কে ধ-তে পরিণত করিয়া লিখিতে চাহিয়াছি তাহা বর্তমান তাহা সুশীলসমাজমাত্রেই বুঝিতে পারে।সাহস করিয়া উঠিতে না পারিলেও সাহস সঞ্চয় করিয়া উক্ত কাজে যাহারা সাফল্য অর্জন করিয়াছিল তাহাদের যে কর্মসংস্থানের অভাব হয় নাই তাহা মানবজমিন,অপরাধকন্ঠ কিংবা সবচেয়ে কমদামি টয়লেট টিস্যু বাংলাদেশ পতিদিন(অনন্ত জলিলীয় উচ্চারণ) খুলিলেই সহজে অনুধাবন করা যায়।
চলিবে(To be continued)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৩৩