(অনেক আগের লেখা। কিন্তু খুব দরকারী। তাই রিপোস্ট)
কখনও কি আপনার এরকম মনে হয়েছে যে কোন পার্টিতে যেতে অস্বস্তি হচ্ছে? আমাদের সবারই কম বেশি এরকম অভিঞ্জতা আছে। আমরা বেশিরভাগই কোন প্রেজেন্টশন দিতে ভয় পাই। ভয় পাই, হয়তো আমার কথাবার্তা শুনে অন্যরা হাসবে। অথবা ডেটিংএ গিয়ে কার কার পা বা গলা কাঁপেনি, বলেন? এগুলো খুবই সাধারন এংজাইটি যা আমাদের সবারই আছে। কিন্তু চিন্তা করুন এমন একজনের অবস্থা যে কিনা ফোনের রিং শুনে চমকে ওঠে। আর কোনভাবেই ফোন রিসিভ করতে পারে না। অথবা কোন মানুষের সাথেই সহজভাবে কথা বলতে পারে না। পারে না কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে বা যে কোন কিছুর জন্যই নিজেকে দোষারোপ করে? এরকম মানুষও কিন্তু আমরা অনেকে দেখেছি।
এরা সেই দুর্ভাগারা যারা শিরোনামের অসুখটায় ভুগছে।
নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এসএডি হলো এমন একটা মানসিক ব্যাধি যখন সাধারণ সামাজিক ইন্টার্যাকশনগুলো কারও মনে অহেতুক কিন্তু প্রচন্ড রকমের ভীতির সঞ্চার করে যার ফলশ্রুতিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাবতে থাকে সবাই তাকে লক্ষ্য করছে এবং সমালোচনাও করছে। এতে সে অস্বাভাবিক রকমের ’আত্মসচেতন’ হয়ে ওঠে যা তাকে ক্রমাগতভাবে উৎকন্ঠিত করে তুলতে থাকে। একসময় এই উৎকন্ঠা তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় এবং সে হয়ে যায় Social Anxiety Disorder’র একজন পেশেন্ট। এটা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা Panic Attack এ মোড় নেয় এবং আত্রান্ত ব্যক্তি ওই সব অবস্থায় প্রচন্ড রকমের শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হার্টবিট, শরীর ঘামা, হাত-পা কাঁপা, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এতক্ষন যা যা বললাম আপনি যদি ওইসব বিশেষ অবস্থায় এগুলো অনুভব করেন তাহলে আপনার সময় হয়েছে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার।
সাধারাণত সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন একটা বিশেষ সামাজিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করেন; যেমন ভাষণ দেয়া বা সবার সামনে কথা বলা। তবে বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তিরাই একাধিক পরিস্থিতিতে ভীত হন। সাধারণত এরা নিচের পরিস্থিতিতে উৎকন্ঠা অনুভব করেনঃ
১. সবার সামনে খাওয়া বা পান করা
২. সবার সামনে কাজ করা বা লেখা
৩. সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা
৪. সামাজিক মেলামেশা, যেমন পার্টিতে যাওয়া বা দাওয়াতে যাওয়া বা ডেটিংএ যাওয়া
৫. প্রশ্ন করা বা রিপোর্ট করা
৬. পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করা
৭. টেলিফোনে কথা বলা, ইত্যাদি।
একটা তথ্য দেইঃ আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ১৮% এই রোগে ভুগছে। যদিও এটা নিরাময়যোগ্য, তারপরও আমেরিকার মতো দেশেও মাত্র এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসা সেবার আওতায় আসে।
অনেক সময়ই Social Anxiety Disorder অন্যান্য মানসিক রোগের সাথে সম্পর্কিত অবস্থায় থাকে, যেমন প্যানিক ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, ডিপ্রেশন, ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো, আক্রান্ত ব্যক্তিরা ডাক্তারের কাছে যায় এই রোগগুলোর ব্যাপারে পরামর্শ নিতে, সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডারের ব্যাপারে নয়। আরেকটা ব্যাপার হলো শিশুরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কেন হয় সোশ্যাল এংজাইটি ডিসঅর্ডার?
যদিও নির্দিষ্ট করে একটা কারন নির্দেশ করা যায় না, তারপরও বলা যায়, কিছু শারীরিক, মানসিক এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এই অবস্থাকে ট্রিগার করতে পারে।
অ. শারীরিকঃ মনে করা হয়, মস্তিষ্কের একটা বিশেষ অঞ্চল যেটা ’fight or flight’ কে নিয়ন্ত্রন করে সেটার ডিসফাংশানের কারনে হয়ে থাকে। জেনেটিক ফ্যাক্টরও এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখতে পারে। সাধারনত দেখা যায়, যদি first degree relative যেমন বাবা-মা, ভাই-বোন, বা সন্তান এদের কারও থাকলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ই. মানসিকঃ ছোটবেলায় যারা অপমান বা অসম্মনের মুখোমুখি হয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ঈ. পারিপার্শ্বিকঃ যখন কেউ অন্য কাউকে সবার হাসির পাত্র হতে দেখে বা অপমানিত হতে দেখে, তখন তার মধ্যে এ ধারনা গড়ে উঠতে পারে যে আমার সাথেও একই রকম পরিস্থিতিতে এরকম ঘটবে। তখন আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে এই ডিসঅর্ডার বেড়ে উঠতে পারে। তাছাড়া যেসমস্ত শিশুরা শৈশবে বাবা-মা’র দ্বারা over protected হয়ে বেড়ে ওঠে, তাদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতাগুলো যথাযথ ভাবে বিকশিত হয় না। ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে এই সমস্যা গড়ে উঠতে পারে।
দুঃখজনকভাবে Social Anxiety Disorder নিরাময়যোগ্য নয়। তবে একে অনেকটাই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব যদি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহন করা হয়। এখন পর্যন্ত এ রোগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা হচ্ছে Cognitive Behavior Therapy (CBT) । এছাড়া মেডিটেশনও করা যায়। অনেকসময় কিছু ড্রাগের ব্যবহার দেখা যায়। আমরা এখানে Cognitive Behavior Therapy (CBT) এর ব্যাপারে কিছুটা আলোকপাত করতে চেষ্টা করব।
Cognitive Behavior Therapy (CBT)
সিবিটি একধরনের সাইকোথেরাপি পদ্ধতি যেখানে অনুমান করা হয় আমাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা আমাদের অস্বস্তিকর মুড আর অস্বাভাবিক আচরণের জন্য দায়ী। তাই এ পদ্ধতিতে এমন কৌশল শেখানো হয় যেন রোগী তার নেগেটিভ চিন্তাভাবনাকে পজেটিভ চিন্তায় পরিনত করতে পারে এবং তার ফলে তার জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আরও কৌশলগতভাবে মোকাবিলা করতে পারে।
লক্ষ্য করুন নিচের অবস্থাটা।
রাসেল পড়ে একটা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে তার প্রথম সেমিস্টারে অনেক খাটাখাটনি করেও গনিতে ৬০% নম্বর পেল। ফলে সে খুবই হতাশ হয়ে পড়ল একই সাথে বিষন্নও। তার মনে হলো তার আসলে গনিতে মোটেও মেধা নেই। ফলে সে ক্লাস করার ইচ্ছা কমে যেতে থাকল এবং সে ক্লাস বাদ দিতে লাগলো এবং এর ফলশ্রুতিতে তার পরের পরীক্ষাটাতে সে আরও অনেক কম স্কোর করল। রাসেল এখন সায়েন্স ছেড়ে কমার্সে যাওয়ার কথা ভাবছে, অর্থাৎ তার ক্যারিয়ার গোলই বদলে ফেলতে চাইছে।
এক্ষেত্রে গনিতে ৬৩% নম্বর পাওয়ার পর রাসেলের অটোম্যাটিক চিন্তা ছিলো ”আমি তো পুরাই ডাব্বা মেরেছি। আমাকে দিয়ে এসব হবে না কারন আমার মেধাই নেই। খামাকা সময় নষ্ট। আগামীতে তো আমি ফেল করব। তার থেকে সায়েন্সই ছেড়ে দেই।” ফলাফলঃ ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতা আর বিষন্ন হয়ে নিজেকে নিজের মধ্যে আরও গুটিয়ে ফেলা।
Cognitive Behavior Therapy বলে তুমি তোমার চিন্তাভাবনা কে পরিবর্তন কর। তাহলে দুনিয়াটাও বদলে যাবে। রাসেল যদি Cognitive Behavior Therapy নিতো, তাহলে হয়তো তার চিন্তাভাবনা হতো ভিন্ন রকমের। অনেকটা এরকমঃ ”আরে! আমি তো দারুন স্কোর করেছি। তাছাড়া টিচারটাও বেশি মার্ক দেয়নি। অন্যদের স্কোরও তো দেখি কাছাকাছি। আমি তো ম্যাথে ভালোই। পরের পরীক্ষাটা আরও খেটে পড়লে স্কোর আরও বাড়াবো।” রাসেলের এই পজেটিভ চিন্তা তার পুরো কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করল। মোটামুটি এই হলো Cognitive Behavior Therapy (CBT)।
যারা Social Anxiety Disorder এ ভোগেন, তাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে একটা প্যাটার্ন থাকে। এইসব চিন্তাকে অস্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর চিন্তা হিসেব চিহ্নিত করা হয়। আমরা যদি জামশেদের ঘটনাটা খেয়াল করি, তাহলে তার চিন্তাভাবনার প্যাটার্নটা ধরতে পারব।
জামশেদ চাকরি করে একটা রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে। সে দেশের টপ ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ করা। তাই তার কোয়ালিফিকেশন নিয়ে কোন সন্দেহই নেই। সেটা সে নিজেও জানে। কাজের ব্যাপারে জামশেদ নিবেদিত প্রান। এ মুহূর্তে সে একটা বিশাল প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে যেটা তার ম্যানেজমেন্ট তাকেই এসাইন করেছে তারা সততা, যোগ্যতা, অভিঞ্জতা আর কাজের ব্যাপারে নিষ্ঠা দেখে। প্রজেক্টটা ভালো মতই চলছে। জামশেদের কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেমের কারনে কাজের মান ও প্রজেক্টের খরচ যথেষ্ট ভালো নিয়ন্ত্রনে আছে। একদিন যখন সে তার প্রজেক্টের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখছিল, সে লক্ষ্য করল, কিছু একটা সমস্যার কারনে একটা নির্দি ষ্ট কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। যদিও তার সাথে একটা কোয়ালিফাইড টিম আছে, কিন্তু জামশেদের অভ্যাস ছিলো সব কিছু নিজের হাতে করা। তো এ ব্যাপারটা খেয়াল করে সে বেশ মুষড়ে পড়ল। তার মনে হতে লাগল, এটা তারই ব্যর্থতা যে সে এটা খেয়াল করেনি। জামশেদ আরও ভাবতে লাগল যে এই যে একটা কাজ ঠিক টাইমলাইন ধরে আগায়নি, তার মানে তার দ্বারা কিছুই হচ্ছে না। নিশ্চয়ই সবাই তাকে আন্ডার-পারফর্মার মনে করছে। এক পর্যায়ে সে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সে একটা অযোগ্য প্রজেক্ট ম্যানেজার যার দ্বারা কিছুই হচ্ছেও না আর হবেও না। প্রজেক্ট অবশ্যই পিছিয়ে যাবে আর এরজন্য একমাত্র দায়ী হবে সেই যেহেতু সে টিম লিডার। সে আত্মসমালোচনা শুরু করল এবং অন্যদের সাথেও বলতে লাগল যে সে হয়তো সমস্যাগুলো ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারেনি, যার কারনে প্রজেক্ট দেরী হবে। ক্রমে সে আরও হতাশ হয়ে যেতে লাগল আর তার আত্মবিশ্বাসও তলানি এসে ঠেকল যার ফলে তার পারফর্মেন্সও ক্রমাগত খারাপ হলে লাগল। এখন সে কারও সাথে কথা বলে না, কলিগদের সামনে যেতে সংকোচ বোধ করে। নিজেকে সে ইডিয়ট, গাধা, অসামাজিক বলে গালি দিতে শুরু করল।
সে পুরো ব্যাপারটা তার বন্ধুর সাথে আলাপ করল এবং তার হতাশার কথাও জানাল। বন্ধু তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য তার কর্মদক্ষতার প্রশংসা করল, তাকে মনে করিয়ে দিলো যে সে প্রকল্পের মান এবং খরচ দুটোই চমৎকার ভাবে নিয়ন্ত্রন করেছে। জামশেদ এককথায় এগুলো উড়িয়ে দেয়। তার মতে, ধুর, টাইমলি যদি প্রজেক্টই শেষ না করতে পারি, তাহলে কাজের মান দিয়ে কি হবে। আর আমি এতদিন কি করেছি সেটা মুখ্য নয়, এখন যে ওই কাজটা টাইমলাইন ধরে হচ্ছে না, সেটাই আসল।
জামশেদ এখন অফিসে যেতে ভয় পায় কারন তার মনে হয় যে তার বস তাকে ভয়ানক তিরষ্কার করবে তার ব্যর্থতার জন্য। ইদানিং সকাল হলেই তার বুক ধড়ফড় করতে থাকে। সে খেতে পারে না, ঘুমাতে পারে না। আর যদি তার অফিস থেকে ফোন আসে, তার হার্টএটাকের মতো অবস্থা হয়।
এটা পরিষ্কার যে জামশেদ Social Anxiety Disorder এ ভুগছে। তার চিন্তাভাবনা বিশ্লেষন করলে নিচের বৈশিষ্টগুলো আমরা লক্ষ্য করবো যেগুলোকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি ‘কমন ক্ষতিকর চিন্তা’ বলে।
’All or Nothing’ thinking মাত্র একটা কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্থ হয়েছে বলে জামশেদ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে। সে পারফেকশনিস্ট। তার কাছে ৯৯% অগ্রগতিও কিছু নয়। হয় ১০০% না হয় ০% - এরকম সাদা-কালো প্যাটার্নের চিন্তাধারা।
Mental filter জামশেদ শুধুমাত্র একটা বিষয়ের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছে আর সেটার পিছিয়ে পড়াটাই তার কাছে মুখ্য। অন্য কাজগুলো যে যথাযথভাবে আগাচ্ছে, সেটা তার নজরেই পড়ছে না। অর্থাৎ, তার মন শুধু ব্যর্থতাটাকেই ফিল্টার করে ব্রেনে পাঠাচ্ছে।
Jumping to Conclusion জামশেদ নিজে নিজেই ভেবে নিচ্ছে যে তার কলিগরা তাকে আন্ডার-পারফর্মার মনে করছে যদিও সে এরকম কোন ইঙ্গিত পেয়েছে বলে আমরা দেখছি না। এই ব্যাপারটার আরেকটা ফর্ম হচ্ছে Fortune telling মানে ’ভবিষ্যত অনুমান করা’, অর্থাৎ যা হয়নি তাই-ই ভেবে নেওয়া।
Emotional Reasoning যেহেতু জামশেদ কলিগদের সামনে যেতে সংকোচ বোধ করা শুরু করেছে, সে ভাবতে লাগল - ” আমি তো মানুষের সাথে মিশতে পারি না। তার মানে আমি একটা অসামাজিক প্রাণী।” এব্যাপারটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, যেহেতু সে সামাজিক মেলামেশায় একরকম অস্বস্তি বোধ করা শুরু করেছে তাই সে ভাবাও শুরু করেছে যে সে অসামাজিক।
Lebelling আগের প্যারাটায় খেয়াল করলে দেখা যাবে যে জামশেদ নিজেকে ’লেবেল’ মারা শুরু করেছে-আমি অসামাজিক, আমি ইডিয়ট, ইত্যাদি।
Over generalizing এটা হলো মাত্র একটা ঘটনার আলোকে পুরো বিষয়টাকে একটা প্যাটার্নের মধ্যে ফেলে দেয়া। একটা কাজের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে জামশেদ ধরে নিচ্ছে যে পুরো প্রজেক্টেরই একই হাল যদিও তার অন্য কাজগুলোর অগ্রগতি তা বলে না।
Disqualifying the positive একটা কাজের ব্যর্থতা জামশেদকে তার বাকি অর্জনগুলো ভুলিয়ে দিয়েছে। সে যে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজের মান এবং খরচ -দুটোই নিয়ন্ত্রন করে চলেছে, সেটা তার কাছে গুরুত্বই পাচ্ছে না।
Magnification & Minimisation এটা হলো ব্যর্থতাকে বড় করে দেখা আর সাফল্যকে ছোট করে দেখার প্রবনতা যেটা বন্ধুর সাথে জামশেদের আলাপচারিতায় দেখা যাচ্ছে।
Should/Must statement জামশেদ চিন্তাভাবনায় ’করা উচিত ছিল’র প্রবনতা খুব বেশি। এইধরনের শব্দ মানুষকে দোষী ভাবায়। অনেকসময় এরকমও ভাবায় যে তুমি ইতিমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছো, যেটা জামশেদের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
Personalization জামশেদ যেকোন ব্যর্থতার জন্য একমাত্র নিজেকেই দোষী ভাবছে যদিও এটা একটা টিম-ওয়ার্ক। তাছাড়া যে কারনে কাজটা কিছুটা দেরি হচ্ছে সেটা তার কারনে না-ও হতে পারে। কিন্তু জামশেদ সবকিছু নিজের দিকেই টেনে নিচ্ছে।
মোটামুটি এই ধরনের নেগেটিভ চিন্তাভাবনার প্রকাশ দেখা যায় Social Anxiety Disorder এ আত্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে। Cogintive Behavior Therapy এই চিন্তাভাবনাগুলোকেই সাইকোথেরাপির মাধ্যমে পজেটিভ চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন করতে শেখায়।
Cogintive Behavior Therapy এই পরিবর্তনটা করে তিন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধি করেঃ
১. চিন্তাটা চিহ্নিত করা - ক্ষতিকর চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই সেটাকে চিহ্নিত করা
২. চিন্তাটা যাচাই করা - নিজেকে প্রশ্ন করঃ তোমার এই চিন্তাটার পিছনে কি যৌক্তিক কোন কারণ আছে? থাকলে তা কতটুকু সঠিক?
৩. চিন্তাটাকে চ্যালেঞ্জ করা - এবার এই ক্ষতিকর চিন্তাটাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রমান কর যে সেটা ভুল।
কিভাবে এ কাজটা সিস্টেমেটিক্যালি করা যায়? একটা খাতা নিন। তারপর যখনই একরম কোন ঘটনা ঘটবে যেটা আপনার মধ্যে ক্ষতিকর/অস্বাস্থ্যকর চিন্তার জন্ম দিলো, সেটাকে এভাবে সিস্টেমেটিক্যালি লিপিবদ্ধ করুন।
তারিখঃ ঘটনাটা কবে ঘটেছে।
ঘটনাঃ ধাপে ধাপে ঘটনাটা লিখে ফেলুন।
অনুভুতিঃ ঘটনা ঘটার সময় আপনি কেমন অনুভব করেছেন - রাগ/ভয়/অস্বস্থি/দুঃখ/দুশ্চিন্তা/আনন্দ, ইত্যাদি
মাত্রাঃ ০-১০ স্কেলে আপনার অনুভুতিকে র্যাংকিং করুন।
স্বতঃপ্রনোদিত চিন্তাঃ ঘটনাটা ঘটার সময় আপনার মনে অটোমেটিকভাবে কোন চিন্তাটা এসেছে। এটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। ধরা যাক, আপনি এমন একজনকে ফোন করলেন যার কল আপনি সবসমই রিসিভ করেন। সে-ও বেশিরভাগ সময়ে করে। কিন্তু সেই দিনে সে ফোনটা না ধরে মেসেজ পাঠাল যে সে ব্যস্ত আছে। সাথে সাথেই আপনার মনে হলো যে সে আপনাকে পাত্তা দিচ্ছেনা বলেই ফোনটা ধরল না। এই যে ঘটনাটা ঘটার সাথে সাথে আপনার মনে হলো যে সে আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, এটাই হলো স্বতঃপ্রণোদিত চিন্তা। এই চিন্তাটা লিখে ফেলুন।
বিশ্লেষনঃ এবার আপনার চিন্তাটাকে আপনি যুক্তির ছকে ফেলে সাজান। চিন্তাটা কতটুকু সঠিক বা যৌক্তিক, তা যাচাই করুন। এক্ষেত্রে ওপরে যে ১০টি ক্ষতিকর চিন্তার কথা বলা হয়েছে, তার সাহায্য নিন।
এতটুকু করলে আপনার প্রথম দুটো কাজ-ক্ষতিকর চিন্তা চিহ্নিত করা আর যাচাই করা হয়ে গেল। এবার আসছে শেষ ধাপ-কিভাবে আপনি আপনার ক্ষতিকর চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করে সাহায্যকারী চিন্তায় পরিবর্তন করবেন। আপনার ঘটে যাওয়া ঘটনার আলোকে নিজেকে নিচের প্রশ্নগুলো করুন এবং উত্তর লিখে ফেলুন।
১. আমার চিন্তাটার পক্ষে আর বিপক্ষে কি কি প্রমান আছে?
২. একই পরিস্থিতিতে আমার বন্ধু পড়লে আমি তাকে কি বলতাম?
৩. এই ঘটনাটার ফলাফল বাস্তবিকভাবে কতটা খারাপ হতে পারে?
৪. এটা কি সত্যি যে এটা আমারই করা উচিৎ ছিলো? (relate করুন should/must statement এর সাথে)
৫. আমি কি ঘটে যাওয়া ঘটনার আলোকে বিষয়টা over generalize করছি?
৬. নিজেকে দোষারোপ করা ছাড়াও ঘটনাটার কি অন্য কোন ব্যাখ্যা হতে পারে?
৭. কোন ভাবে কি ঘটনাটাকে পজিটিভ ভাবে দেখা সম্ভব?
৮. ঘটনাটা কি আসলেই আমার নিয়ন্ত্রনে ছিলো?
৯. আগামীকাল/সপ্তাহে/মাসে/বছরে ঘটনাটার কি প্রভাব পড়তে পারে?
১০. আমি যেভাবে ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করছি, তাতে কি পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে? না কি আরও অবনতি হচ্ছে?
১১. অতীতে আমি এরকম ঘটনা কিভাবে সামলেছি?
১২. আমার ধর্মীয় বা আত্মিক বিশ্বাস কিভাবে এই ঘটনাটা সামলাতে আমাকে সাহায্য করতে পারে?
১৩. একজন থেরাপিস্ট বা মেন্টর আমাকে কি উপদেশ দিতেন এ সময়ে?
১৪. আমি এই পরিস্থিতি থেকে কি আশা করছি?
মোটামুটি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেলেই আপনার কাজ প্রায় শেষ। এরপর এই উত্তরগুলোর ভিত্তিতে আপনি আপনার Action Plan সাজান। তাহলেই আপনি দেখবেন যে আপনার নেগেটিভ চিন্তা পজেটিভ হয়ে গেছে।
থেরাপির প্রথমদিকে এই কাজটা আপনাকে বার বার করতে হবে। একসময় আপনার ব্রেন অটোমেটিকভাবে এভাবে চিন্তা করা শুরু করবে। তখনই আপনি বুঝতে পারবেন যে Cognitive Behavior Therapy এর মাধ্যমে আপনি আপনার Social Anxiety Disorder কে জয় করা শুরু করেছেন।
তাহলে শুরু হোক পথচলা।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট এবং সাইকোথেরাপিস্টের সাথে আলাপচারিতা
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:০৪