অনেকদিন পর আবার হাটতে শুরু করেছি। হাটতাম রেগুলার আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে। আব্বার সাথে রেগুলার। যেদিকেই তাকাতাম মানুষগুলিকে সুখী মনে হত। রিক্সাআলা, প্যাসেঞ্জার, ছাত্র ছাত্রী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বুয়া ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার মানুষ সবারই মুখে একটা আত্মতৃপ্তি থাকত। নিজের মন খারাপ থাকলেও এদের দিকে তাকিয়ে মন ভাল হয়ে যেত। আজ কদিন ধরে যাচ্ছি,সবার কি জানি একটা দুশ্চিন্তা।
কিসের যেন একটা আত্মগ্লানি। কেন এদের সবার মন এত খারাপ।
একসময় বাংলাদেশকে সুখী দেশ হিসেবে স্বীকৃ্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ তা আর নেই। মনে হয় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দেশ হিসেবে চলে আসবে।
আজ দেশে কর্মজীবি মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষার হার, বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু কেন জানি আর আগের মত আন্তরিকতা আর নেই। আজ তুচ্ছ তুচ্ছ জিনিস নিয়ে মানুষ মানুষকে বাতিল করছে। বাদ দেওয়ার কারন হচ্ছে চেহেরা, মোটা গঠন, টাকা নেই, যদি তার কোন কিছু অবস্থান না থাকে। লোকের জিজ্জাসা হচ্ছে তুমি কি কর ?? বলতে ইচ্ছে করে আমি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাই। কোন কিছু করাটা যদি আন্তরিকতার একমাত্র কারন হয় , আমাদের বাড়ি আছে কিনা, আমার কটা ইয়ালো ও আড়ঙ্গের ড্রেস আছে কিনা , আমি বিএফসি, কেএফসিতে খাই কিনা
ইত্যাদি। তাহলে সত্যি রাখ তোর আন্তরিকতা আমি বাসায় আম্মার হাতে বানানো ডাল ভাত খাই, আমার আব্বা আমার ড্রেস ডিজাইন করে বানিয়ে দিতেন।
আর আমার ভাই আমার জন্য যা লাগে তাই এনে দেয়। কি হতাশ হলে ??
হ্যা আমি তোমাদের মত এতকিছু করে বেড়াই না আর হ্যা আমার নিজের মায়ের সেবা করব বলে সব কাজ গুটিয়ে ছিলাম , আবার শুরু করব ভাবছি তোদের মত বাপের কোম্পানিতে বসি না , তোদের মত জামাইয়ের অফিসে চাকুরী নেই না, বা তোদের মত কাউকে ঘুষ দিয়েও চাকুরী নেই না ।
আমি আমার স্বাধীনতা নিয়ে থাকি, আমার চাকুরী হলে হবে না হলে নেই ।
আমি সেই আমিই আছি, যে মূল্যবোধ নিয়ে থাকে, যে মানুষের পাশে দাড়াই, যে নিজের স্বার্থের জন্য কারও পায়ে পায়ে ঘুরে না।
যার একটা ভিন্ন ব্যক্তিত্ব আছে, যে মেরুদন্ডহীন না , যার মেরুদন্ড অনেক শক্ত।
তোদের মত ঠুনকো জিনিস নিয়ে ভাবে না। তোদের মত উত্তরা শুনলে এক সুরে আর মোহাম্মদপুর বা মিরপুর হলে আরেক সুরে কথা বলে না ।
তোদের মত গিরগিটির মত একটু পর খোলস বদলায় না। তোরা আব্বা আম্মার টাকা দিয়ে মদ , সিগারেট কিনে বেড়াস, তোদের মোবাইলে একশ দুইশ টাকা রোজ লাগে, শুধু তাই না তোদের পাঁচশ এক হাজার টাকার বাইরে না খেলে পেটের ভাত হজম হয় না ।
তোরা মা বোনদের পিছনে টাকা খরচ করতে দ্বিধা লাগে আর তোরা দুই দিন পর পর গার্লফ্রেন্ড বানাস আর টাকা ঢালিস আর ছ্যাক খাস।
তোদের ঘুম ভাঙ্গে দুপুর বারোটায় আর বাসার কোন কাজ করতে দিলেই তোদের মাথা গরম হয়ে যায়। তোরা উচ্ছন্নে যাওয়া যুবসমাজ। না তোরা আব্বা আম্মাকে দেখিস না তোরা ভাই বোনদের দেখিস না তোরা নিজের বউকে দেখিস ।
তোরা অবাস্তব একটা জগতে বাস করিস। তোদের যে কি ইচ্ছে ।
আর তোরা ডিজিটাল মানুষ , তোদের হাতে সব সময় স্মার্টফোন, তোদের হাতে ল্যাপটপ , আর নোটপ্যাড । যদি জিজ্জেস করা হয় কি করিস, মুভি দেখিস না হয় আউল ফাউল কাজ করে বেড়াস। কাজের কথা জিজ্জেস করলে গুগলে সার্চ দিয়ে উত্তর জানাস ।
তোদের পড়ালেখাও মস্ত ফাকির , তোদের মাথায় কোন ঢিলু নাই। এতকিছুর পরেও তোরা তথাকথিত ভদ্র ছেলে, তোদের ঘূষের চাকুরী আর পায়ে ধরা স্ট্যাটাসে নাম ফুটাস, তোদের পত্রিকায় কাহিনী ছাপাস।
আমাদের এই উচ্ছন্নে যাওয়া যুবসমাজ না নিজের পরিবারের কাজে লাগে না নিজের কাজে লাগে না দেশের কাজে লাগে।
এরা আসে , খায় , ঘুমায় আর মরে গেলে সব্বাই কবর দিয়ে আসে।
এদের কোন গ্লানি নাই যে এরা মেরুদন্ডহীন । এরা উচ্ছন্নে যাওয়া অসুখী ও বাকীদেরও অসুখী করা অমানুষ ।