আল্লাহ তালা পুরুষ দেহ হতে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন যেন স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে গভীর ভালবাসা ও প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করতে পারে। নারীর সৃষ্টি পুরুষ দেহ হতে বলেই স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গীনি বলা হয়।
স্বামীকে স্মরন রাখতে হবে যে,একটা অবলা অপরিচিতা রমনীকে আল্লাহ বিবাহের মাধ্যমে তার অধীন করে দিয়েছেন, সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। স্ত্রী অনেকটা দুর্বলা, স্বামীর আশ্রিতা ও তার উপর নির্ভরশীলা বলে তাকে গভীর ভালবাসার দ্বারা তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট রাখতে হবে। তাকে অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য বা অত্যাচার করবে না।সর্বদা স্মরন রাখবে, স্বীয় পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নি এবং অন্যান্য সকলকে ছেড়ে স্ত্রী স্বামীর কাছেই নিজেকে সমর্পন করেছে। এ জগতে স্বামীই তার একমাত্র সহায়।
স্বামী স্ত্রীর সাথে এমন ব্যবহার করবে যেন স্ত্রীর মনে একথা জাগতে না পারে যে, সে আপন আত্মীয়-স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি ভিন্ন পুরুষের কাছে এসেছে। স্বামীকে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, কেবল শক্তির জোরে বা অধিকার বলে মানুষের মন জয় করা যায় না, উত্তম ব্যবহার ও ভালবাসার দ্বারাই মানুষকে বশে রাখা যায়।
স্ত্রীকে অবজ্ঞাসূচক বা তাচ্ছিল্যব্যঞ্জক কোন কথা বলবে না। তাকে খুশি রাখার জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা করবে। স্ত্রী কোন কিছু দাবী করার পূর্বেই তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে আনবে। স্ত্রীর কোন দোষ- ত্রুটি দেখা গেলে তাকে কঠোর ভাষায় শাষন না করে মিষ্টি কথায় তার দোষ দেখিয়ে দেবে এবং ভবিষ্যতে আর কোনদিন এরুপ না হয় তজ্জন্য সতর্ক করে দেবে।
কখনও কোন কারনে স্ত্রীর মুখ বিষন্ন দেখলে আদর-সোহাগ দ্বারা তাকে প্রসন্ন করে তুলবে। স্মরন রাখবে স্ত্রী শুধু ভোগের সামগ্রী এবং পুরুষের দাসী নয়। তারও একটা স্বতন্ত্র সত্তা, মর্যাদা ও স্বাধীনতা আছে। সে হিসেবে তাকে মর্যাদা দেবে, তার ব্যক্তি স্বাধিনতায় কখনও হস্তক্ষেপ করবে না।
পারিবারিক জীবনের নানাবিধ কাজ-কর্মে তার নিকট হতে পরামর্শ নেবে। তার সাথে অযথা ক্রুদ্ধ স্বভাব, রুক্ষতা কর্কশ ব্যবহার প্রদর্শন করবে না, তাকে গালিগালাজ বা মারপিট করবে না।
নিজের স্ত্রী ঘরে থাকতে অন্য কোন রমনীর প্রতি কোনরূপ আগ্রহ বা আকর্ষন প্রদর্শন করবে না। নিজে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোষাকাদি পরিধান করে পরিপাটিভাবে চলে স্ত্রীর মন সর্বদা নিজের দিকে আকৃষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে।
স্ত্রীর পিতা-মাতা, ভ্রাতা-ভগ্নি ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে যথারীতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রদর্শন করবে। তাদের প্রতি কোনরুপ কটুক্তি বা দূর্ব্যবহার করবে না। স্ত্রীর শরীর, স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগ-ব্যধির দিকে লক্ষ্য রাখবে।
স্ত্রীকে শরীয়তের বিধি-বিধান শিক্ষা দিবে ও পর্দা-পুশিদায় রাখবে। মাঝে মাঝে স্ত্রীর জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু শখের বস্তু, প্রসাধনী প্রভৃতি ক্রয় করে দেবে।বিদেশ হতে প্রত্যাবর্তন কালে কিছু কিছু উত্তম তোহফা ক্রয় করে আনবে। কখনও কখনও স্ত্রীর সাথে কিছুটা হাল্কা রসালাপ করবে। সর্বদা আত্মমর্যাদা রক্ষা করে চলবে, তবে স্ত্রীর নিকট ব্যক্তিত্ব ও গুরুত্ব প্রকাশ করতে বেশি ভারিক্কি চাল প্রদর্শন করবে না।
হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)এর জীবনী আলোচলা করলে দেখা যায়, তিনি বিবি আয়েশার (রাঃ) মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে তার সাথে একটি সরল বালকের ন্যায় খেলাধুলা করতেন।
স্মরন রাখবে, স্ত্রীর সাথে মাঝে মাঝে সামান্য মান-অভিমান করে আবার তা অল্পতেই ভঙ্গ করতঃ নিজেদের মধ্যে কিছুটা আনন্দ বৃদ্ধি ও বৈচিত্র সৃষ্টি করলে তা উভয়ের জন্যই সুখের কারণ হবে। কোন ব্যাপারেই স্ত্রীর প্রতি অবহেলা করবে না। স্ত্রী পিত্রালয়ে যেতে চাইলে নিজে নিয়ে যাবে অথবা খরচের সুব্যবস্থা করে তথায় পৌছে দেবে।
স্ত্রীর সাথে সদা-সর্বদা এক শয্যায় শয়ন করবে, একাধারে তাকে ভিন্ন শয্যায় শয়ন করাবে না। বিনা কারনে তার চরিত্রে কোনরুপ সন্দেহ পোষন করবে না। এমন আচরণ কস্মিনকালেও প্রদর্শন করবে না যাতে স্ত্রীর মনে সন্দেহ জাগে যে, স্বামী তার উপর যথেষ্ট উদাসীন। তাহলে উভয়ের দাম্পত্য জীবনে অশান্তির বীজ আত্মপ্রকাশ করবে।
স্ত্রীর সম্মুখে কখনও অন্য নারীর রুপ ও গুনের আলোচনা করবে না যেহেতু এর ফল কখনও শুভ হয় না।
রুহুল কোরআন হতে প্রাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫