প্রথম পর্ব
এর আগের বার যখন এসেছিলাম, তখন বুবুর পক্ষ্যে বিপক্ষ্যে প্রায় সমান সমান লোক ছিল। এবার দেখি বুবুর বিপক্ষ্যেই লোক এত বেশি যে, বুবুর পক্ষ্যের লোকজনের গলার আওয়াজ চি চি শোনাচ্ছে। এমনই হয়। বিদেশে বসে লোকজনও বুঝতে পেরেছে যে, বুবুর "স্বর্ণকাল" শেষের পথে। মাজা ভাঙ্গা ঘোড়ার উপর বাজি কে রাখে বলুন? হায় রে দুনিয়া ! যে বুবুর কারণে এক এক জন কোটিপতি, আজ বুবুর শেষ সময়ে ঠিকই হাওয়া হলে গেলি?
আরেকটা ভয় ছিল। আসলে শুরুটা হয়েছিল লন্ডনে। প্রথমবার তো মার খেলো বিচারপতি খায়রুল। পাছায় কষিয়ে কে জানি লাত্থি দিয়েছিল। এর পর আবারও ঐ লন্ডনেই আবার আমাদের ইনু ভাইকে চড় থাপড় লাত্থি তো দিয়েছিলোই, সাথে পচা ডিমটিম ছুড়ে একাকার। অবশ্য তিনি মানি লোক। এত সহজে কি মানহানি হতে পারে?
লন্ডন নিউয়র্ক তো বেশি দূর না। সাগরের এপার আর ওপার। কে জানে? কেউ যদি একই ধরণের বদ মতলব করে? আমি তো আছি, সাথে এন এস এফ। বাড়তি দুই পালোয়ান বদি আর সোহাগ ভাই। দেখি আমার বুবুকে কে কি করে?
এয়ারপোর্টের বাইরে থেকে বিক্ষুব্ধ মানূষের মুখ থেকে যে বাণি বের হচ্ছে, সেটি বুবুর কানে তো ভালো, নিউ ইয়র্ক পুলিশের কানে গেলেও লজ্জায় বেচারারা চাকরি ছেড়ে বনবাসি হবে। তাই নিরাপত্তার অজুহাতে বুবুকে বিশেষ ধরণের হেলমেট পড়ানো হলো। যাতে এই সব শুনে বুবু হার্টফেল না করে।
সেপ্টেম্বরের নিউ ইয়র্ক। গরমকাল। মেয়ে গুলি কি অসভ্য অসভ্য কাপড় পড়ে ঘুরছে। ছি ছি ! এই সময়ে কেউ অজু করে জোহরের নামাজের জন্য রওয়ানা দিলে অজু ভাংতে আর আবার অজু করতে করতে পরের দিনের ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যাবে।
আশে পাশে খুব তাকানোও যাচ্ছে না। হাজার হোক, বুবুর সিকিউরিটি দেখছি। এই সব অজু ভঙ্গকারি এই সব দৃশ্য দেখা ঠিক না। তার উপর বুবুর হাতে ধরা পড়লে, আমার তো মান ইজ্জত শেষ। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।
- বাচ্চু, তো নাকে কি হইছে? ফুইলা রইছে কেন?
মানে বদি আর সোহাগ ভাইয়ের ঘুষি খেয়ে যা হাল, বুবু সেদিকেই নির্দেশ করছেন।
- ইয়ে কিছু না বুবু। কুত্তায় কামড় দিছে।
আমার জবাব শুনে বেশ কটমট করেই বদি আর সোহাগ ভাইয়ের দিকে তাকালেন বুবু।
- তো যে ডাক্তার চিকিৎসা দিছে, হে তো খালি তো নাকের চিকিৎসা করলো দেখি। গলা আর গালের চিকিৎসা করলো না যে?
সোভানাল্লাহ ! এইটা আবার কোন বিলা আওয়াজ?
পেছন থেকে কে যেন ফিস ফিস করে বললো
- বস আপনার গালে আর গলায় লিপিস্টিকের দাগ।
একে তো বিদেশ বিভুই ! তার মধ্যে আবার বুবুর নিরাপত্তার ব্যাপার ! নইলে বাংলা ছবির ইজ্জত হারানো নায়িকার মত চিৎকার করে বলে উঠতাম
- ও আল্লাহ গো ! আমার এত্ত বড় সর্বনাশ হইয়া গেলো গো? আমি এখন মানুষের কাছে কেমনে মুখ দেখামু গো ।
তার বদলে ঘন ঘন ঢোক গিলতে হলো। শালির ঘরে শালি ! প্লেনের মানুষদের কাছ থেকে রিয়েল এস্টেটের পয়সা খেয়েছে। আর এদিকে আমার সবেধন নীলমনি ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে গেছে। শালিকে পেয়ে নেই। পেইন কিলারের মধ্যে যে ঘুমের উপকরণ আছে কে জানতো? না বাবা ! এই কথা চাউর করা যাবে না। এমনিতেই তো সারা দেশে নেশার উপকরণের অভাব নেই। এই খবর জানাজানি হলে ব্যাথার সময়ও আসল রুগিরা পেইন কিলার পাবে না। সব নেশারুদের পেটেই যাবে।
বুবু বুঝদার মানুষ। হাজার হোক আমি ছোট ভাই। কিন্ত ছোটরাও একদিন বড় হয়ে যায়, সেটি তিনি বিলক্ষণ বুঝেন বলেই আর কথা বাড়ালেন না। সময় কই? মাত্র কয়দিনে কত্ত কাজ পড়ে আছে।
কে জানি বলেছি, ভালো লাগার এক যায়গায় দুবার যেতে নেই। আগের আনন্দ পাওয়া যায় না। কথাটা ঠিক। এর আগেও এই হোটেলেই উঠেছিলাম, তাই আগের মত চমৎকৃত হইনি। তবে বুবুর ঘরের নিরাপত্তাটা চেক করতে গিয়ে আবারও চমৎকৃত হতেই হলো। আসলেও এই আরাম আয়াসের মজা যে পেয়েছে, তার পক্ষ্যে ক্ষমতা ছাড়ার কথা অসম্ভব ! এই জন্যই দেখি হাজার গাল মন্দ আর নিন্দা সমালোচনার ঝড় সহ্য করেও অনেক সরকার প্রধান ক্ষমতা ছাড়তে চায় না।
যাই হোক, অল ক্লিয়ার। বুবু বিশ্রামে যাবেন। আমাদেরও কিছুক্ষনের বিরতি। আমাদের ঘরগুলি বুবুর আশে পাশেই। আমি ফ্রেস হয়ে কিছুক্ষণ বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বুবুর যখন খাবে, তখনই আমাদের খাওয়ার সময়। চোখ বুজে পড়ে আছি, এই সময় পাশের ঘর থেকে শুনি হেড়ে গলায় বাংলা গান গাইছে কে জানি !
- হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি, তোমার লাইগ্যা আন্মু কি? পুতির মালা পড়বে কি?
উত্তরে মহিলা গলায় কে যেন মুখে চিমটি কেটে বলছে
- মরণ ! ওরে আমার রসের বুইড়া রে। কোন পত্রিকায় সম্পাদক না হইয়াই সাংবাদিক নেতা বইনা গেছো? সাগর রুনির বিচারের আন্দোলনের পাছায় লাত্থি দিয়া হাসিনার চামচামি কইরা এইখানে আইছো? এখন আইছো লুলামি করতে? কপালে দাগ দেইখা কোন হালায় বুঝবো যে এই হালা এত্ত লুইচ্চা?
- কি এত্ত বড় কথা? টিভির জুনিয়ার সাংবাদিক হইয়া আমারে অপমান? আমি যদি এর শোধ না তুলছি !
- আবে যা। তোর মত কত সোবহানরে পানি ছাড়াই গিল্লা ফেলছি ! তুই কোন ছাড়?
- আমিও দেখমু কত বড় চুন্নি তুই !
ইয়া মাবুদ ! এই সব গোপন গোপন কথাবার্তা দেখি আমার কানেই আসে। কি কপাল !
যাই হোক ! এন এফ এফ দরজা নাড়লো। মানে বুবু বের হবেন। মানে আমাদের তারও আগে রেডি হতে হবে।
আমি ঘর থেকে বের হতেই দেখি বদি আর সোহাগ দাঁড়ানো। আমাকে দেখে পারে না আবার মারে। দাত কিড়মিড় করে খালি বললো
- তুই আমাগো নামে নেত্রির কাছে বিচার দিলি কির্লাইগা?
- আমি? কই বিচার দিলাম? আমি তো খালি কইছি কুত্তা কামড় দিছে।
- আমাগো ভুদাই পাইছোস? হগলতে যে আমাগো কুত্তা কয়, এই কথা আমরা জানি না মনে করছোস? খাড়া একবার ঢাকায় যাইয়া লই, রাব অফিসে গিয়াই তোরে পিটামু।
আইডিয়া খুবই ভালো। তাহলে বাদরামির পরিমানটা বাড়িয়ে দেয়া দরকার। মার খেলে ওই আওয়ামি চামচ আশফাকই খাবে। ওই অফিসে আমাকে পাবে কই?
[img|http://2.bp.blogspot.com/_BG8uvxYuhgs/S9ACjbsqUII/AAAAAAAAAEk/wgoamOHtRrY/S755/pa220909b[1].jpg]
বুবুর সাথে ওবামার দাওয়াত। যা তা কথা নয়। দুনিয়ার বাদশাহ বলে কথা। গায়ের রঙ যাই হোক ! আমাদের সবাইকে ঢুকতে দেয়া হলো না। আমার কপাল ভালো। গেলাম ঢুকে বুবুর সাথে।
সেখানে দেখি ভাইগ্নাও আছে। ওবামা নিপাট ভদ্রলোক। তার বউও তেমন দেমাগ টেমাগ কিছু নেই।
কি জানি কথা হচ্ছিল। এর মধ্যে ভাইগ্না ছড়া বলতে শুরু করলো।
- মামার বাড়ি গেছিলাম, দুধ ভাত দিছিলো, দুধ ভাত খাইছিলাম।
এর পর লজ্জায় দেখি শরীর মোচড়া মুচড়ি শুরু করলো।
এই সব দেখে বুবুর মনের অবস্থা কি দিব্যি বুঝতে পারছিলাম। পারেন না সেখানেই ঝাড়ু দিয়ে পেটান। বিরবির করে শুধু বললেন, হারামের এত্তটি টাকা পায়া দেখি বদহজম হইছে। এই বলদাটার এই সব বলদামির কারণে আল্লাই জানি কতটি ভোট নস্ট হইছে। এখন দেখি বাদশাহ হুজুরের দরবারে আমার ইজ্জতের ১২টা বাজাইবো।
হাজার হলেও দুনিয়া চড়িয়ে খান উনারা। সবই বুঝলেন ওবামা। মুচকি হেসে খালি বললেন, বাহ আপনার ছেলে দেখি খুবই ট্যালেন্টেড।
হায় খোদা ! একি করলেন ওবামা? এখন তো দেশের সব মিডিয়া আর পত্রপত্রিকায় ঢোল বাজাবে যে স্বয়ং ওবামার সার্টিফিকেট পেয়েছে জয়। মানে তিনিই আগামিবারের প্রধান মন্ত্রি হবার একক যোগ্যতা রাখেন। হে ইশ্বর রক্ষা করো।
উনাদের সময় মহা মুল্যবান। খালি বললেন, ইউনুসের সাথে বাজাবাজি করলেন আপনি, আর আমার সাথে হিলালির ক্যাচাল লেগে গেলো।
বুবু জিজ্ঞেস করলেন " হুজুর আমার জন্য ক্যাচাল?"
- ইন্ডিয়া যা বলে আমাদের শুনা লাগে। তারা আপনার পিছে আছে। কিন্তু ইউনুসের সাথে হিলারি আর সুশিল সমাজের মহা খাতির। আমার অবস্থা তো কেরাসীন। ইন্ডিয়ার কথা রাখি? না হিলারি আর সুশিল সমাজের? এক কাজ করেন এই ক্যাচাল মিটান। নাইলে আমার মাথা গরম হইলে খবর আছে।
সেখানেই আলোচনা শেষ। এর পরের প্রোগ্রাম জাতিসংঘের মহা সচিব বান কি মুনের সাথে।
- কিরে ইনু? তুই নাকি আমার কাছে থেইকা পলানোর লাইগা হজ্বে যাওয়ানের ধান্ধা করছিলি?
ওরে মা, এই জাপানি দেখি মহা বদরাগি !
- হুজুর এইটা কি কইলেন? ইনু তো আসে নাই। আমি আপনেগো বান্দি হাসিনা।
- এই ইনু ! বেশি কথা না। ফাইজলামি পাইছো? শ্রমিক মারছো, পাবলিক মারছো।চুরি কইরা চুরির রেকর্ড সব ব্রেক কইরা ফেলছো। আবার কও আপুষে ক্ষমতা ছাড়বা না? ক্যান? দ্যাশটা তুমার বাপের?
- হুজুর , কি কন এই সব? আমি তো ইনু না। আর আমি আবার কারে মারছি? কি চুরি করছি? এই সব হইলো যুদ্ধাপরাধী গো বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র।
- তুই ইনুই। ইনু না হইলে সব কথায় এই যুদ্ধাপরাধী গো বাচানের কথা কইতি না। চুরি কর নাই? মানুষ মারো নাই? তুমি জামাতি গো নেতা গো ফাসি দিবা, আর সৌদি আরব মুখ বুইজা দেখবো? তোর দেশ আর কত চান্দা দেয়? এই যে আমি বেতন পাই, সেইগুলি যারা দেয়, তুই হেগো আপন মানুষ গোই কাম তামাম করবি? আমার পেটে লাত্থি দেওনের ফন্দি? তোরে এই উচা থেইক্কা ধাক্কা দিয়া ফালায়া দিমু।
রাগে গজ গজ করতে করতে বান সাহেব রুম থেকেই বের হয়ে গেলেন। অনেকদিন আগে কোউতুহল বশত গুগলে ইনু টাইপ করে অর্থ মোটামুটি জানা ছিল।
- বাচ্চু, সাহেব কি মানে নেশার মইধ্যে আছে? নাকি আমি স্বপ্ন দেখতাছি? আমারে কয় ইনু। মাথা মুথা খারাপ হইয়া গেছে মনে হয়। নাকি ইনু নামের অন্য অর্থ আছে।
- ইয়ে বুবু, জাপানি ভাষায় ইনু মানে মহিলা নেত্রি। ( হু আসল অর্থ বলি আর আমাকেই উলটা সেই উচা বিল্ডিং থেকে ফেলে দেক আর কি !
- মরুক গা। আসল লোকের সাথেই তো দেখা হইলো না এখনো।
- কেন? ওবামা স্যারের সাথে তো দেখা করলাই।
- থো তো ওবামা না সারেগামা। আরে আমার কেবলা হুজুরের লাইগাই তো হজ্ব বাদ দিয়া আইলাম এতদুর।
হুজুর কেবলা? কে সেই সৌভাগ্যবান?
চলবে...