নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের বয়ান দিচ্ছে। হোজ্জা মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।
এইবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার একখান কথা ছিল’। হোজ্জা বললেন, ‘ঠিক আছে তুমি তোমার বক্তব্য বল’। আসামির বক্তব্যও মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’।
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের বছরপূর্তি উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বাণীতে বলেছিলেন, ‘বিচারপতিদের অবসরে গিয়ে রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।’
তাঁর এ বক্তব্যে বিএনপি মওকা পেয়ে বলতে থাকে, ‘কথা ঠিক’। কাজেই খায়রুল ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে যে রায় লিখেছেন তা অবৈধ। সুতরাং ঐ রায়ের সুবিধাভোগী বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী অবৈধ।
এতে ভড়কে গিয়ে অবসরে গিয়ে রায় লেখা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী হলেও সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় বাতিল হবে না বলে মৌলভীবাজারে এক অনুষ্ঠানে জানান প্রধান বিচারপতি।
এবার প্রধান বিচারপতির ‘কথা ঠিক’ বলে জানায় আওয়ামীরা। দু’পা বেশী এগিয়ে ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেন ওসব রায় বাতিল চেয়ে বিএনপি রিট করলেও তা খারিজ হয়ে যাবে।
দুঃখের কথা হলো আমাদের মধ্যে হোজ্জার বিবির মতো এমন একজনও পাওয়া গেলো না যে প্রশ্ন করেছে ‘অবসরের পর রায় লেখা অবৈধ, আবার, ওভাবে লেখা রায়গুলো বৈধ’ এ দু’টি কথা একইসময়ে কিভাবে সঠিক হতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:৩২