ভারতের রাজস্থানের বিজেপি দলীয় এমএলএ জ্ঞানদেব আহুজা প্রকৃতই একজন জ্ঞানী(!) ব্যক্তি। তার কাছে এমন সব তথ্য রয়েছে সেটা অনেকের চিন্তারও অতীত। আর এ তথ্য জোগাড় করার জন্য তাকে যে পরিশ্রম করতে হয়েছে কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সেটা করাও অভাবনীয়। আমাদের তথাকথিত তথ্যবাবাও তার কাছে শিশুতুল্য!
জ্ঞানদেব বলেছেন জওয়াহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন ৩ হাজার কনডম ব্যবহার করে। প্রাথমিক ধারণায় মনে হতে পারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেন্ডিং মেশিনে কনডম বিক্রয়ের পরিসংখ্যান হতে এ তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু ভাল করে খেয়াল করুন পাঠক! তিনি বলেছেন ৩ হাজার কনডম ব্যবহার করে। অর্থাৎ তিনি ব্যবহৃত কনডম গুনে গুনে সংখ্যাটি বের করেছেন। বলুনতো আপনি আমি ব্যবহৃত কনডম গুনে দেখার একাজ করতে পারতাম? ওয়াক্ ছিঃ!
তার দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ ক্যাম্পাসে প্রতিদিন ৩ হাজার বিয়ারের ক্যান ও বোতল ব্যবহার করা হয়। ওয়াও! দিজ স্টুডেন্টস রিয়েলী নো হাউ টু এনজয় দি হ্যাপী আওয়ার! এনি ওয়ে। এ তথ্য নেয়া অবশ্য তেমন কঠিন নয়। আশেপাশের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা নিজের স্বার্থেই হয়তো এ দিকে খেয়াল রাখে। তিনি তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে থাকতে পারেন। আর তিনি নিজে যদি ভাঙ্গারি ব্যবসায় জড়িত থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। একেবারে প্রত্যক্ষ সূত্রের তথ্য!
তিনি জানিয়েছেন প্রতিদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ১০ হাজারের বেশি সিগারেট ও ৪ হাজারের বেশি বিড়ির উচ্ছিষ্টাংশ পাওয়া যায়। একবার ভেবে দেখুনতো কতটা আন্তরিক, একনিষ্ঠ আর পরিশ্রমী হলেই কেবল এই লেভেলের তথ্য জোগাড় করা যায়। এমনিতেই বিড়ি সিগারেটের উচ্ছিষ্টাংশ সাইজে ছোট। এখানকার গর্তে সেখানকার চিপায় ছুড়ে ফেলার একটা প্রবণতা সবার মাঝে আছে। এগুলো তুলে তুলে গননা করা, তাও আবার বিড়ি সিগারেট আলাদাভাবে! সেল্যুট না জানিয়ে উপায় নেই। সেল্যুট জ্ঞানদেব! অবশ্য দুর্মুখরা বলতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রদের প্রতি ১৪ জনে ৪জন বিড়িপায়ী এতথ্য ছাত্রদের বিরাট অংশের আর্থিক দুরবস্থাই প্রকট করে। যাক, দুদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের কথা ভেবে বাদ দিন ও প্রসঙ্গ।
তার শেষ তথ্যটি হচ্ছে প্রতিদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাওয়া যায় ৫০ হাজারের বেশি বড় ছোট হাড়। এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেছেন- এর অর্থ স্টুডেন্টরা মাংস খায়, যা জাতীয়তাবিরোধী! পাঠক, খাওয়ার পর বোনপ্লেটে রাখা হাড়ের নেক্সট গন্তব্য হচ্ছে ডাস্টবিন। কাজেই হাড়সংখ্যার তথ্য জোগাড় কেবলমাত্র ডাস্টবিন ঘেটেই সম্ভব। আমাদের এখানেও অবশ্য টোকাইরা ডাস্টবিন ঘাটাঘাটি করে। সামান্য মূল্যবান কিছু পেলে বিক্রি করে দুপয়সা দিয়ে এটা-ওটা কিনে খায়। কিন্তু পরিসংখ্যানের স্বার্থে ডাস্টবিন ঘাটাঘাটি? আমার এক কলিগ জাহাঙ্গীরনগর হতে পরিসংখ্যানে মাস্টার্স। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ডিগ্রি পেতে ডাস্টবিন ঘাটাঘাটির দরকার পড়েছিলো কি-না? সে স্রেফ অস্বীকার করলো! অথচ দেখুন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদের ডেডিকেশন! কোন ডিগ্রি পাবেন না, কোন পারিশ্রমিক পাবেন না জেনেও শুধু জনগনকে তথ্য দেবার মানসে পঁচাগলা ডাস্টবিন ঘাটতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি।
জ্ঞানদেবই আসল তথ্যবাবা! সব তথ্যবাবার বাবা! কী বলেন?
স্টুডেন্টরা মাংস খায়, যা জাতীয়তাবিরোধী- এই প্রসঙ্গে আমি অবশ্য কিছু বলতে চাইনা। দেশী হোক আর বিদেশী হোক, রাজনৈতিক বিষয় এড়িয়ে চলাই ভালো। কখন যে কার মানহানি হয় বোঝা মুশকিল! আমি আবার থানাপুলিশ হাকিমহুকুম এসব বহুত ডরাই।
তথ্যসূত্রঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪