আপনি সম্ভবতঃ এখনো বাংলাদেশে বসবাস করার জন্য যথেষ্ট উপযোগী হননি। ভিডিওটি দেখার পর আপনার মানসিক প্রতিক্রিয়া কিন্তু তারই প্রমাণ দিচ্ছে। আপনি যাত্রীদেরকে ‘মানুষ’ ভেবে কষ্ট পাচ্ছেন। লঞ্চের যাত্রীদের জায়গায় নিজেকে বা কোন পরমাত্মীয়কে বসিয়ে শিহরিত হয়ে উঠছেন, লঞ্চের দুর্ভাগা যাত্রীদের সাথে একাত্ম হয়ে যাচ্ছেন। ফলস্বরুপ আপনার নিদ্রা বিঘ্নিত হচ্ছে, চোখ ভিজে উঠছে, শান্তি পাচ্ছেন না।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আপনাকে এদেশীয় রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী কিংবা নৌযান মালিকদের মতো মানসিকতার অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
একবার রাজনীতিবিদদের মতো করে ভেবে দেখুন না- এই ঈদে কতো লক্ষ যাত্রী রেল, বাস-ট্রাক, লঞ্চে ভ্রমন করেছে? তার মধ্যে কতো শতাংশ দুর্ঘটনায় মারা গেছে? অতি সামান্য! আরো বেশী ক্ষতিও তো হতে পারতো। পিনাক-৬ এর মতো দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত ঈদ যাতায়াত গত আমলের তুলনায় নির্বিঘ্নই হয়েছে। কাজেই এইসব ছোটখাট পিনাক-ডুবিতে ঘুম হারাম হওযার প্রশ্নই ওঠেনা বরং মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম রাখার সফলতার জন্য জনতার পক্ষ থেকে ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ অনুষ্ঠানে কেন দেরী হচ্ছে সে জন্য উদ্বেলিত হবেন আপনি।
কিংবা সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীর মতো করে ভাবতে পারেন- বেশী সজাগ/সতর্ক থাকলে বা বেশী বেশী দায়িত্ব পালন করলে কি বেতন বেশী পাওয়া যাবে? দেখেও না দেখার ভান করলে বরং দুপয়সা উপরি পাওয়া যেতে পারে। হায়াত-মওতের মালিক তো আর আমি নই। যারা যাত্রী তারা নিজেদের ভালো নিজেরা না বুঝলে আমার কী করার আছে? আমি কি জোর করে কাউকে ঐ লঞ্চে উঠিয়েছি?
অথবা, নৌযান মালিকদের মতো করে ভাবুন- যতো প্যাসেঞ্জার ততো টাকা, মরলে আমার কী?
শত চেষ্টাতেও যদি এভাবে ভাবতে না পারেন তাহলে আপনি আম-জনতার ক্যাটেগরীতে পড়েন। সেক্ষেত্রে নিজেকে ‘মানুষ’ মনে করাটা কিন্তু আপনার একটা ভুল ধারণা। দেখলেন তো ওপরে যাদের কথা বলা হলো তারা কেউ কিন্তু আপনাকে ‘মানুষ’ গণ্য করে না। সুতরাং যতো তাড়াতাড়ি পারেন অলীক-কল্পনার জগত ত্যাগ করে নিজের অবস্থানটি কোথায় সেটি অনুধাবন করুন। নিজেদের ভবিতব্য ভাগ্যের হাতে অর্পণ করে সুখনিদ্রা দেওয়ার অভ্যেস করুন।