যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার দক্ষিন পূর্ব উপকুলে আটলান্টিকে অবস্থিত বারমুডা, মিয়ামী, সানজিকো, পোর্টেরিকোর এলাকা জুড়ে মেক্সিকো উপসাগর এবং বারমুডা দ্বীপ পর্যন্ত রেখা টানলে যে কল্পিত ত্রিভুজ রচিত হবে তার নাম বারমুডা ত্রিভুজ। এই ত্রিভুজের ভেতর শতিনেক প্রবাল দ্বীপ আছে। এগুলোর বেশিরভাগই জনবসতিহীন, শূন্য। পুরনো পুঁথি ঘাঁটলে জানা যায়, সেকালের অভিজ্ঞ নাবিকরা এই দ্বীপগুলোর নাম দিয়েছিল আইল্যান্ড্স অব দ্য ডেভিল অথবা শয়তানের দ্বীপপুন্ঞ্জ। এইদ্বীপগুলোকে ওরা এড়িয়ে চলত। আজকের সভ্য জগতের সামনে বারমুডা ত্রিভুজ একটি চ্যালেন্জ। ওই অভিশপ্ত ত্রিভুজের ভেতর আসলে কি ঘটছে, বলতে পারে না কেউ। মাঝে মাঝেই মাধ্যা কর্ষণ সুত্র বাতিল করে দেয় বারমুডা ত্রিভুজ, বিকল করে দেয় রেডিও, কম্পাস বা অন্যসব প্রয়োজনীয় নেভিগেশনাল যন্ত্রপাতি। কখনো কখনো এর চেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাও ঘটে। যেমন-সবুজ রঙের উত্তাল কুয়াশায় ঢাকা পড়ে ওই এলাকার সাগর। বিদঘুটে জলরাশি উঠে যায় আকাশে। কোথাও কিছু নেই, হঠাৎই সাগরের বুকে সৃষ্টি হয় প্যাঁচালো ঘূর্ণিপাক। হিংস্র ভাবে জাহাজ, বিমান গিলতে ছুটে আসে পাহাড় প্রমাণ ঢেউ। তারপর ঘটে যায় সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা। পুরো জাহাজ, বিমান একেবারেই উধাও হয়ে যা. কোনোরকম চিহ্ন মাত্র আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এক টুকরা কাঠ কিংবা লাইফবোটের টুকরা (যা পুরোপুরি রাবার দিয়ে তৈরি) কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ আমরা জানি, কাঠ কিংবা রাবার কখনোই ডুবে ন. রেডিও, টেলিভিশন আর সংবাদপত্র নিয়ে যতই আলোচনা হচ্ছে, রহস্য জমাট বাঁধছে ততই। কেউ কেউ কিছু না বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে জটিল করে তুলেছে রহস্য। আসলে কিসের প্রভাবে ঘটছে এসব, বলতে পারছে না কেউ। লয়েডফ অব লানের এক হিসাবে দেখা গেছে, ১৪৯২ থেকে ২০০১ পর্যন্ত প্রায় ১৭০ টি জাহাজ, বিমান, নৌকা ও অন্যান্য জলযান হারিয়ে গেছে। নিঁখোজ হয়েছে অগনিত মানুষ। এই রহস্যের সূচনা হয়েছিল একেবারে গোড়া থেকেই। ১৪৯২ সালের ১১ অক্টোবর আমেরিকা আবিস্কারক কলাম্বাস তার সান্টা মারিয়া জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে রহস্যময় আলো দেখেছিলেন সাগরের বুকে। অথচ আশপাশের এক মাইলের মধ্যে কোনো জাহাজ বা নৌকার নিদর্শন পাওয়া যায়নি। কয়েক মুহূর্তে নেচে নেচে হঠাৎ করেই নিভে গেল আলোটা। তারপরই এমন একটা ঘটনা ঘটল, আলোটা যেখানে জ্বলছিল, আরো কয়েকশ গজ সামনের আকাশ থেকে ধূমকেতুর মতো লেজ বিশিষ্ট সাগরের পানিতে পড়ল একটা আগুনের গোলা। কয়েক মুহূর্ত সেটা পানি তোলপাড় করে ডুবে গেল। এরপর অবশ্য আর তেমন কোনো রহস্যের মুখোমুখি হতে হয়নি কলাম্বাসকে।
১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর মোট ৬টি বিমান একই দিনে বারমুডা ত্রিভুজে হারিয়ে যায়। প্রথমে পাঁচটি বোমারু বিমান উধাও হয়ে যায়, পরে তাদের খুঁজতে যাওয়া একটি মার্কিন মেরিনার বিমানও তার বারোজন বৈমানিক নিয়ে হারিয়ে যায়। এই দুঘর্টনাকে মিরাকল্ অব অল টাইম বলা হয়েছে। এছাড়াও ১৯৬৮ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর সাবমেরিন উধাও হয়ে যাওয়া সমান বিস্ময়কর ঘটনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত সুরাহা হয়নি বারমুডা ত্রিভুজ রহস্যের কুলকিনারা। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নানান মতে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ইলেকট্রোমেগনেটিক ফিল্ড বা বৈদ্যুতিক চৌম্বকের তত্বই বেশি গ্রহণযোর্যতা পেয়েছে। প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল বিশ্ব এবং টাইম ভিরটরসন যুক্তির বিচারে তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেউ কেউ আবার অযৌক্তিকভাবে পৃথিবীর বাইরে চলে গিয়ে টেনে এনেছেন ভিন্ গ্রহের প্রানী আর তাদের কথিত মহাকাশ যানকে। তবে বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও বারমুডা ট্রাইএংগেলের রহস্যের ব্যাপারে কোন নিশ্চিত তত্ব বা তথ্য আজো পাওয়া যায়নি। আরো জানার জন্য ব্রাউজ করতে পারেন:
http://www.byerly.org/bt.htm
http://www.history.navy.mil/faqs/faq8-1.htm
http://www.byerly.org/bt.htm
http://en.wikipedia.org/wiki/Bermuda_Triangle
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৩