ঢাকা টু কক্সবাজার এর বিলাসবহুল কোচটি ছাড়তে আর মাত্র মিনিট পাঁচেক বাকি। প্রায় সবকটি সিট ভরে গেলেও, বাসের মাঝামাঝি বসে থাকা কৌশিকের পাশের সিটের যাত্রীটি এখনও আসেনি। আদৌ আসবে কিনা কে জানে!
বাসের ঠিক পাশেই একটি মেয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। এই শীতের রাতে তার এই উদ্ভট কাজ যে সবার দৃষ্টি কাড়ছে, সেদিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপও নেই! অবশ্য সবার দৃষ্টি কাড়ার পিছনে আরও কিছু কারন আছে। ল্যাম্প-পোস্টের সোডিয়াম আলোয়, মেয়েটিকে কোন এক স্বর্গফেরত অপ্সরার মতই সুন্দর লাগছিল, একবার তাকালে হুট করে চোখ ফেরানো মুশকিল! এই মেয়েটিকেই কিছুক্ষণ আগে ইয়া বড় বড় দুই সুটকেস হেল্পার কে দিয়ে বাসের বক্সে ঢুকাতে দেখেছে কৌশিক। তার পাশের সিটের যাত্রী, এই মেয়েটি হবার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না!
ড্রাইভার বাসে উঠে হর্ন দিতেই মেয়েটির যেন হুশ হল! আধখাওয়া আইসক্রিম ছুড়ে ফেলে দৌড়ে বাসে উঠল সে। সিটের নাম্বার দেখতে দেখতে কৌশিকের পাশে এসে থামতেই, বিনা বাক্য বেয়ে উঠে দাড়িয়ে জানালার পাশের সিটটা মেয়েটিকে ছেড়ে দিল কৌশিক।
বাস ছাড়ার পর আড়চোখে কয়েকবার মেয়েটির দিকে তাকাল সে। মেয়েটি ততক্ষনে সিটের উপর পা তুলে বেশ আরাম করেই বসেছে, গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে কাশ্মীরি শাল! যা শীত পড়েছে, চাদর না জড়িয়ে উপায় আছে? গায়ে ভারী জ্যাকেট জড়িয়েও রীতিমত কাঁপাকাঁপি অবস্থা কৌশিকের। মেয়েটি মোটেও কৌশিকের দিকে তাকাচ্ছে না, একমনে বাইরের ঘুমন্ত প্রকৃতি দেখে চলেছে। যা ও একবার চোখাচোখি হল, মেয়েটি এমন রাগত চাহনি দিল যে, বেচারা কৌশিক মুহূর্তেই চোখ সরাতে বাধ্য হল!
সময় গড়াতেই আস্তে আস্তে পুরো বাসের সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। কৌশিকের চলন্ত বাসে কখনোই ঘুম হয় না, তাই সে মোবাইলে ইবুক পড়ায় মন দিল। রাত আরও গভীর হতে থাকল, বাসের চাকাও সমান তালে গড়িয়ে চলল।
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ লাগতেই সচেতন হল কৌশিক, পাশে ফিরে তাকাল! মেয়েটিকে বহুক্ষন আগেই চোখ মুদতে দেখেছে সে, এখন বাসের দুলুনিতে ঘুমের ঘোরে কৌশিকের কাঁধেই মাথা রেখে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে ! মেয়েটির ঘুমন্ত মুখটা এতটাই মায়া লাগছিল যে, একটানা তাকিয়ে রইল কৌশিক, কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছিল না। বাতাসে গায়ের চাদরটা একটু সরে গিয়েছিল, সেটা ঠিক করে দিল। লম্বা চুলগুলো বারবার মুখের উপর উড়ে এসে চেহারাটা আড়াল করার চেষ্টা করছিল, ওগুলোকে মেয়েটির কানের পিছনে গুজে দিল কৌশিক। তারপর প্রাণভরে দেখতে লাগলো মেয়েটিকে!
ভোরের একটু আগে ঘুম ভাঙল মেয়েটির। চোখ মেলে দেখল, কৌশিক অপলক তাকিয়ে আছে তার দিকে! খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত গলায় বলল, “আর কতক্ষন লাগবে পৌছতে?”
কৌশিক হেসে বলল, “আরও ঘণ্টাখানিক পর কক্সবাজার পৌছবে বাস। বাস-স্টপে শুভ আর রাশিদা থাকবে। নাস্তা করে আগে বিয়েটা সেরে ফেলবো, এরপর সবাই মিলে সেন্ট-মারটিন রওয়ানা হবো, ঠিক আছে?”
--“ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমার সাথে আজ সারাদিন কোন কথা বলতে পারবা না। এটা তোমার শাস্তি। ঝগড়া করার পর আমার মান ভাঙ্গাও নাই, এই জন্য।”
-- “আচ্ছা ঠিক আছে, কথা বলবো না, শুধু তাকিয়ে থাকবো।”
-- “হয়েছে, এত ঢং করা লাগবে না, এখন আমাকে ঘুমোতে দাও তো...।”
আবারও কৌশিক কে কাছে টেনে তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোতে লাগলো মেয়েটি, কৌশিকের সুমি!
পূব আকাশে তখন একরাশ নতুন স্বপ্নের আবীর নিয়ে হাজির হচ্ছে ভোরের সূর্য!
courtesy : https://www.facebook.com/tawfirhasan