যদি প্রশ্ন করা হয় কোন বেসরকারি ব্যাংকটি সাধারন মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত? তাহলে নিঃসন্দেহে জবাব মিলবে, ডাচ বাংলা ব্যাংক! এর কারন কি? এর কারন তাদের সুবিস্তৃত ATM network! এটাই তাদের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আপনাকে-আমাকে ওরা এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে তারা টাকা লেনদেন কে পৌঁছে দিয়েছে আমাদের দোরগোড়ায়! আর আমরাও সেটা বিশ্বাস করে হুমড়ি খেয়ে পড়েছি তাদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে! ওরা পেয়েছে হাজার হাজার গ্রাহক!
শুধু এখানেই তাদের লোভ থেমে থাকেনি! তারা দেশের প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিকেল কলেজে একপ্রকার ভিক্ষুকের মতই তাদের কর্মী বাহিনীকে পাঠিয়েছে আরও শিকার খুজে আনার জন্য! সেই শিকারিরা ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়েছে, মাত্র ৫০০ টাকা অ্যাকাউন্ট এ থাকলেই লেনদেন করা সম্ভব, কেন থাকবে না তাহলে আপনার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট? কেন হবে না একটা ATM কার্ড?
শিক্ষার্থীরা সে ফাঁদে পা দিয়েছে খুব ভালভাবেই! তাইতো দেশের শতকরা ৮৫ জন ছাত্রের অ্যাকাউন্টই ডাচ বাংলা ব্যাংকে!
ডাচ বাংলার সবচেয়ে বড় প্রলোভন হল তাদের ATM network এবং ATM card!
যদিও তাদের ATM বুথগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই টাকা থাকে না, ৫০০ থাকলে ১০০ থাকেনা, কার্ড আটকে যায়, ছেড়া টাকা আর জাল টাকাও পাওয়া যায়!
বিগত বছরগুলোতে তারা খুব একটা ভাল ডেভিডেণ্টও দেয়নি তাদের শেয়ার হোল্ডারদের! বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর কান্নার কারন এই ডাচ বাংলা ব্যাংক!
এসব অভিযোগ মেনে নিয়েই গ্রাহকরা চলছিল। কিন্তু ব্যাংকের আকস্মাত নেয়া এক সিদ্ধান্তে হঠাৎই যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল এর গ্রাহকদের মাথায়!
এতদিন তাদের চলতি হিসাবে ৫০০ টাকা জমা থাকলেই হতো। এর বেশি টাকাটা লেনদেন করা যেত! এটা বলেই DBBL তার হাজার হাজার স্টুডেন্ট গ্রাহক এর অ্যাকাউন্ট খুলেছে! কিন্তু এখন তারা বলছে, চলতি হিসাবে থাকতে হবে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা!!! এর বেশি হলে লেনদেন করা যাবে! আর সঞ্চয়ী হিসাবের জন্য সেটা বাড়িয়ে ২০০০ থেকে এক লাফে দাঁড়িয়েছে ৫০০০ এ!!!
একজন স্টুডেন্ট এর পক্ষে কি ২০০০ টাকা অলস ফেলে রাখা সম্ভব???
হঠাৎ কেন এই নিয়ম? অ্যাকাউন্ট করার আগে কেন এটা জানানো হয় নি? কেন গ্রাহকদের জিম্মি করে এই নিয়ম চালু করা?
এসব প্রশ্নে গত কয়েকদিন ফেইসবুক এবং ব্লগ উত্তাল! কেউ কেউ বলছেন, এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিবেন?
বস্তুত, এটা কি কোন সমাধান? সবার পক্ষে কি অন্য ব্যাংকে শিফট করা সম্ভব হবে? মনে হয় না!
তাহলে আমরা কি করবো?
এখনও সময় আছে! ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে! এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না! সেই আন্দোলন শুধু ভার্চুয়াল জগতে না! সেই আন্দোলন হতে হবে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়! এবং ব্যাংকের প্রতিটি শাখায়!
আমি জানি এখানে অনেক বড় ছোট সাংবাদিক ভাইরা ব্লগ লেখেন, তারা দয়া করে এই ব্যাপারটি সংবাদপত্রে এবং টিভি/রেডিও নিউজে তুলে ধরুন। এভাবে একটি ব্যাংক শুরু করলে আস্তে আস্তে সকল ব্যাংক শুরু করবে! আমরা জিম্মি হয়ে পড়ব। তখন আর করার কিছুই থাকবে না, তখন এটাই হয়তো নিয়ম হয়ে যাবে! তাই এটাকে গোড়াতেই প্রতিহত করতে সহায়তা করুন!
আর যে যেই শাখায় অ্যাকাউন্ট করেছেন আর লেনদেন করেন, সেই শাখাতেই ম্যানেজারের কাছে মৌখিক এবং লিখিত প্রতিবাদ জানান! আমি আজই লিখিত প্রতিবাদ করেছি। জানি, আমার একার প্রতিবাদে কিছু হবে না! কিন্তু আমাদের এক লাখ, দুই লাখ, তিন লাখ প্রতিবাদ লিপিতেও কি কিছু হবে না? সাথে যদি সাংবাদিক ভাইরা এটি নিয়ে তোলপাড় করেন? হতে বাধ্য!
দয়া করে সবাই এগিয়ে আসুন। নতুন করে নিজের হাতে আরেকটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে তুলবেন না!