ছোটবেলা আমাকে বলা হইতো যে পড়ালেখা না করলে ঘোড়ার ঘাস কাটতে হবে। আমি ভাবতাম বাহ... ঘোড়া প্রাণীটাই কত সুন্দর আর তার জন্য ঘাস কাটবো। তার মানে আমার ঘোড়াও থাকবে। এত সুন্দর কল্পনা বেশি দিন টিকে নাই অবশ্য।
আমাকে পরীক্ষা নামক এক অদ্ভুত জিনিসের মুখোমুখি হতে হলই। নার্সারীতে থাকাকালে এত চিন্তায় পড়তে হয় নাই। আমি আবার নার্সারী থেকে সরাসরি অন্য স্কুলে ক্লাস টুতে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন আমাকে নানান অদ্ভুত শব্দের মুখোমুখি হতে হলো। তার মধ্যে অন্যতম হলো “মুখস্থ করা”। এক পরীক্ষার আগে আম্মু দেখে আমি কান্নাকাটি করতেছি। কি ব্যাপার কি হইছে? জবাব দিলাম আম্মু আমি তো মুখস্থ করতে পারি না। আম্মু বলে, “তুমি তো এইগুলা সব পারো তাই না?” বললাম “হ্যা”। আম্মু বলে, “তাইলে আর সমস্যা কি?” আমি বলি, “পারলেই আর না দেখে বললেই হইলো নাকি...আমি তো মুখস্থ পারি না”।
এক পরীক্ষার আগের দিনে আমাকে নানান কুশ্চেন পড়ানো হইলো। আম্মু বললো যে এইগুলা ইম্পর্ট্যান্ট। তখন থ্রী নাকি ফোরের কথা। আমি পরীক্ষা হলে গেলাম। এরপর লেখছি তো লেখছি। পুরা ক্লাস খালি হয়ে গেছে আমি লেখতেই আছি। আম্মু তো বাইরে থেকে মহা চিন্তা সব মেয়ে বের হয়ে গেলো, তার মেয়ে বের হয় না কেন। একদম শেষের দিকে আমি বের হলাম। আম্মু জিজ্ঞাসা করলো, “মা পরীক্ষা কেমন হইলো?” “আর বইলো না...লেখতে লেখতে জান শেষ” আম্মু অবাক। “কি বলো? সবাই বললো যে অনেক সোজা প্রশ্ন হইছে। দেখি তো প্রশ্ন”। দিলাম প্রশ্ন। আম্মু বললো কমই তো লেখা দেখি। কি লেখছো বলো তো... বলতে লাগলাম কি কি লেখছি। আম্মু দেখে ঐগুলা একটাও আসে নাই।“ কি ব্যাপার এইগুলা লেখছো কেন? ঐগুলা তো চায় নাই”। “চায় নাই তো কি হইছে... তুমি না বলছো ইম্পর্ট্যান্ট। লিখবো না? নিজে নিজে প্রশ্ন বানায় লিখে আসছি”।
আর এখন যা দেয় তাই লিখতে পারি না।
আমার কাজ ছিলো সবসময় বলতে গেলে পরীক্ষা শুরু হয়ার পর দৌড়াদৌড়ি করে হলে আসে। বাসার কাছে স্কুল থাকলে যা হয়। স্যাররা বারান্দা থেকে দেখতো যে আমি আসতেছি। স্যার-ম্যাডাম রা ব্যাপক চিন্তিত ছিলো যে এই মেয়ে এস.এস.সি তেও এই কাজ করে নাকি।
নাইন-টেনে উঠে আমরা দেখাদেখিতে আরো কয় ধাপ এগিয়ে গেলাম। এমনো ছিলো যে হায়ার ম্যাথ পরীক্ষার শেষের দিকে আমরা খাতা নিয়ে দৌড়াদৌড়িও করেছি। স্যার জিজ্ঞাসা করতো, “এই তেরো কি হচ্ছে এইগুলা?” “জ্বী মানে স্যার আমার স্টেপলারের পিন শেষ হয়ে গেছে তো তাই পিন মারতে আসছি” আর অন্যরে ইশারা দিতেছি লিখতে থাক যা লিখছি। আহারে সুখের দিন গুলা...
এস.এস.সি পরীক্ষায় এক দিন আমরা ভালোই দেখাদেখি করছি কিন্তু যে ম্যাডাম গার্ডে ছিলো উনি আমাদের গুলায় ফেলেছিলো। আমাদের ভেবেছিলা আমরা অন্য স্কুলের তাই উনি সারা ক্লাস ঐ স্কুলের নাম ধরে বকাবকি করছিলো। “এই স্কুলের মেয়েরা এত দেখা দেখি করো না। আবার দেখে”। ঐ স্কুলের মেয়েরা ব্যাপক অবাক কি ব্যাপার আমাদের এত বকছে কেনো। আর আমরা হাসতেছি।
কলেজ জীবনে এসে আরেক অবস্থার মুখোমুখী। কোনো এক কারনে প্রতি টার্ম পরীক্ষাতেই কোনো এক পরীক্ষাতে আমার খাতা নিয়ে যাইতো। কেনো যে নিতো তাই ধরতে পারি নাই। এক বাংলা ম্যাম ছিলো উনি সবাইকে ওয়ার্নিং দিচ্ছিলো কিন্তু আমারটা প্রথমবারেই নিয়ে গেছিলো। অবশ্য আমার সাথে উনার কোনো কারনে শত্রুতা ছিলো। আর আমিও খাতা চাওয়ার সাথে সাথেই মহা আনন্দে খাতা দিয়ে বের হয়ে চলে যেতাম। তবে এক ম্যাথ পরীক্ষার দিন স্যার প্রথম ঘন্টাতেই খাতা নিয়ে গেছে। এখন দিচ্ছে ও না। কি করি... অনেক কষ্ট করে দুখী দুখী চেহাড়া বানালাম। অশ্রু আনলাম ১-২ ফোটা। উনার সাথে যে আরেকজন গার্ড দিচ্ছিলো উনি বাইরে ছিলো। এসে আমাকে দেখে যে আমি উদাস হয়ে বাইরের দিকে তাঁকায় আছি। স্যার বলে, “কি হইছে? খাতা কই তোমার”। “স্যার......খাতা তো নিয়ে গেছে”। কি?? কতক্ষন ?? আমার সাথে আরেকজনের টা নিছিলো যে বলে স্যার ১৫ মিনিটের বেশি ( ৫ মিনিট ও যায় নাই)। স্যার বলে, “দাঁড়াও খাতা নিয়ে আসি”।
অবশ্য এখনকারের কাহিনী ভিন্ন। মুড না আসলে লিখি না। লিখতে আলসেমী লাগে। কোনোরকমে একটু লিখে দেই। ৪-৫ লাইনের লেখা কোনোরকমে ১ লাইনে লেখার চেষ্টা চালাই। তাই অবশ্য মার্কিং ও কোনোরকমের আসে। একবার ৩ ঘন্টার পরীক্ষার সময় আমার ২ ঘন্টাতে শেষ। আগেও বের হইতে পারি না। মানুষজন ফুস ফুস করবে। এরপর কলম চিবাইলাম, ঝিমাইলাম, অন্যদের দেখলাম, স্যার দের দেখলাম। অবশেষে সময় পার হইলো আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
হায়রে পরীক্ষা। ভালা পাই না তোরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৩