somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যামুয়েল জোয়েমার এর মুসলমান বনাম কুরআনের অনুসারী মুসলমান

২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্যামুয়েল জোয়েমার (১৮৬৭-১৯৩৫) ১৮৬৭ সালে আমেরিকার মিশিগানে জন্ম নিয়ে ঐ মিশিগানেরই‌‌‌ ' Hollan' ও 'Hope College' 'New Jersey' থেকে বি এ, এম এ ডিগ্রিসহ খৃষ্টধর্মের উপরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে আমেরিকার 'Iowa' অঙ্গরাজ্যের ‘Reformed Church Ministry’ থেকে একজন পুরোদস্তর পাদ্রী হিসেবে সনদপ্রাপ্ত হয়ে মাকির্ন মুল্লুক ছেড়ে ছুটে আসেন আরবে। উদ্দেশ্য, মুসলমানদের মধ্যে খৃষ্টের বাণী ছড়িয়ে তাদেরকে স্বৎপথে আনা!

১৮৯১ সাল থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত তিনি বসরা বাহরাইন ও তার আশ পাশ এলাকায় একজন মিশনারী হিসেবে খৃষ্টধর্ম প্রচারক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৮৯০ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত তিনি ‘এ্যরাবিয়ান মিশন’এর একজন সদস্য হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। আর ওদিকে ১৯১৩ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত তিনি মিশরে খৃষ্টধর্ম প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। ১৯২৯ সাল থেতে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ‘ Princeton Theological seminary তে তিনি Professor of Missions and Professor of the history of Religion’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি Moslem World’ নামক প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা এবং উক্ত পত্রিকাটি দীর্ঘ ৩৫টি বৎসর ধরে তিনি সম্পাদনা করেন। দীর্ঘ চল্লিশটি বৎসরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও বসরা কিংবা বাহরাইন বা মিশর, এ সব অঞ্চলে এক ডজনের বেশী লোককে তিনি খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করতে পারেন নি।

আরবী ভাষা শেখার কারণে আল কুরআন ও ইসলামি সংস্কৃতিক চেতনাকে ভাল করেই বুঝতেন। কায়রো থাকতে তার পড়ার ঘরের দেয়ালে আল কুরআনের বাণী বিসমিল্লাহ’কে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয় মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিতে। ১৯৩৫ সালে খৃষ্টান মিশনারীদের এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন;

'The objective is not to convert Muslims into Christianity; this would be an honor for them. Rather it is to stray them from Islam, so they became individual with no relationship with Allah. By this you will be preparing the Muslim mentality to go in the path you are preparing for them'

ভাবানূবাদ: ‘আমাদের উদ্দেশ্য এটা নয়, যে আমরা মুসলমনদেরকে খৃষ্টান বানাবো। খৃষ্টান হতে পারাটা তো তাদের জন্য অনেক সম্মানের হবে! বরং আমাদের লক্ষ্য হবে তাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া, যেখানে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। এভাবে (মুসলমানদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন করে) আপনি তাদেরকে যা হতে বলবেন, তারা তাই হবে! যে পথে যেতে বলবেন, তারা সে পথেই যাবে।’

তার উদ্দেশ্যটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছে। আজ মুসলমান তা'ই হয়, হবার চেষ্টা করে, যা তারা হতে বলে। প্রথমে তারা বলল, তোমরা জাতীয়তাবাদী হয়ে যাও। সেই স্কটল্যন্ডের এক কোণা হতে তারা লরেন্সকে পাঠাল হেজাজে, একজন প্রত্নত্বত্তবীদের ছদ্মবেশে। সেই ‘প্রত্নত্বত্তবীদ’ লরেন্স কালক্রমে 'লরেন্স অব আ্যরাবিয়া' হয়ে উঠল, আরব জাতীয়তাবাদের মন্ত্র দিয়ে, সে শরীফ হুসাইন কিংবা ইবনে সউদেও চেয়েও বড় আরব জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠল। আর এভাবেই ইসলামি খেলাফতকে ভেঙ্গে দিল। সেই হলো ইসলামি খেলাফতের ‘গোরখোদক’ অভিধায় ভূষিত, বরিত!

দু দন্ড না যেতেই তারা বলল, না, জাতীয়তাবাদী হলেই চলছে না, তোমরা ওহাবী হয়ে যাও। আবারও সেই 'লরেন্স অব আরাবিয়া’র নাটক! প্রয়োজনের খাতিরে ছুড়ে ফেলল শরীফ হুসেইনকে, বরণ করে নিল ইবনে সওদকে, বলল কক্টরপন্থী, অর্থোডক্স হয়ে যাও। ইবনে সওদ ইবনে ওহাব’কে নিয়ে অর্থোডক্স হলেন, ওহাবী হলেন। আজ তারাই আবার ‘ওহাবী’ বলে গালাগাল করে!!

এর পরে তারা আর এক গ্রুপকে বলল, ওহাবী হওয়া ভাল নয়, তোমরা সেকুল্যারিষ্ট হয়ে যাও। অমনি সিরিয়ার মাইকেল আফাক ছুটে এলেন বাগদাদে, জুটিয়ে নিলেন সালাহউদ্দীন আল বিত্তার’কে। একে একে যোগ হলো আকরাম হুরানি, জামাল আব্দুন নাসের, হাফিজ আল আসাদ, সাদ্দাম হোসেন গং।

শুরু হলো ইব্রাহীম আ: এর পূণ্যভূমী মেসোপটোমিয়া, হযরত আলী, ইমাম হাসান, হোসেনের স্মৃতীবিজড়িত বাগদাদ, কুফা, করবালা, আব্দুর কাদের জীলানি, রাবেয়া বসরীর স্মৃতীবিজড়িত মুসলিম জনপদকে সেক্যুলার করার কোশেশ! এদের কাছে ইহুদী সন্তান ‘ইউহান্না আশূর’ তারেক আজিজ নাম ধারন করেও আপন, কিন্তু চক্ষুশুল হতে হয় ইসলামের মুসা, তারেক, খালেদ এইসব যুবকদের, ঝুলতে হয় ফাঁসীর দড়ী গলায় নিয়ে!

কিছুদিন না যেতেই এইসব সেক্যুলাষ্টিগুলোকে এক এক করে ছুড়ে ফেলা হলো। বলা হলো, তোমরা ত্বালেবান হয়ে যাও, ওতেই কাংক্ষিত মুক্তি! আমাদের একটা অংশ স্কুল-মাদ্রাসা ছেড়ে ত্বালেবান হতে লাইন ধরল। আর অস্ত্র, রসদ, এগুলো? এগুলোও তারাই দিল, কারণ, তারা আমাদের ‘সন্ত্রাসী ত্বালেবান’ বানাতে চায় যে! আজ তাদের সেই ‘ত্বালেবান’ই আমাদের গলায় গালি হিসেবে ঝুলিয়ে দেয়!

এর পরে তারা বলল, তোমরা ‘জেহাডিস্ট’ হয়ে যাও, আমাদেরই একজন, ওসামা বিন লাদেন, যিনি বুশ পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন, গা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, ছুটে এসে ‘জেহাডিষ্ট’ হলেন। আমরা মুসলমানরা মসজিদে জায়নামাজে, খানক্বায় বসেই রইলাম, কিন্তু বিশ্বজুড়ে তিনি আমাদের ‘জিহাডিষ্ট’ ‘হিজবুতি’ ত্বকমা দিয়েই ছাড়লেন। আমরা খারেজী হলাম, রাফেয়ী হলাম, কতকিছুই তো হলাম, কিন্তু আমাদের কপাল থেকে ঐ ‘জেহাডিষ্ট’ ‘ত্বালেবান’ ‘ওহাবী’ ‘হিজবুতি’ ত্বকমা দূর হলো না।

এই সব নানান উপাদেয় গালাগাল শুনতে শুনতে আমরা মুসলমানরা যখন হীনমন্যতায় কুঁকড়ে যাচ্ছি, তখনই আবার ওদের আগমণ। এবারে বলল, তোমরা মডারেট হয়ে যাও। আজ আমরা মডারেট মুসলমান হতে পারলে গর্বিত হই, বাহবা নেই। কেউ ‘মডারেট মুসলমান’ বললে আমরা মনে করি বর্তে গেলাম বাবা! মডারেট মুসলমানের সেই সনদটা বুকে ঝুলিয়ে, কপালে লটকিয়ে বিশ্বে নিজেদের পরিচিত ফেরী করে বেড়াই, ‘আমি মডারেট মুসলমান’!

আমি, আপনি, আমাদের নেতা-নেত্রীরা, আমরা ‘জেহাডিষ্ট’ ‘ত্বালেবান’ ‘ওহাবী’ ‘হিজবুতি’ মুসলমানরা কে কতটা মডারেট হতে পারি, সে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। আজ আমরা সবাই ‘উদারপন্থী মডারেট’ হতে চাই!

আমেরিকায় তৈরী হয় ‘জেহাডিষ্ট’ তেলআবীবে ‘আল-ক্বায়েদা’ কাবুলে ‘ত্বালেবান’ পেশওয়ারে ‘জেইশ-ই মুহাম্মদ’ কোলকাতা-মূর্শীদাবাদে ‘বাংলা ভাই’ লন্ডনে ‘হিজবুত তাওহীদ’ সউদীতে ‘সালাফি’ কিন্তু কোথাও সেই মুসলমান তৈরী হয় না, যে মুসলমানকে দেখে বনের বাঘ পথ ছেড়ে দিত, নদীর স্রোত থেমে যেত।

যে মুসলমানকে দেখে কাইসারের কিসরা ধ্বসে যেত, হিরাক্লিয়াসের তখত কেঁপে উঠত, মহাবীর রুস্তমের হৃদস্পন্দন শুরু হয়ে যেত, যে মুসলমানের নামটা শুনলেই কিং রিচার্ড পরণের কাপড় পর্যন্ত নষ্ট করে ফেলতেন, রাজা বল্লাল সেনের তরবারী পড়ে যেত, রাজা লক্ষণ সেন পালিয়ে বাঁচতেন!

আজ মুসলমান কিছু একটা হবার আশায়, মডারেট মুসলমান হবার আশায় দিনরাত ব্যস্ত। গবেষণায় ব্যস্ত। কত কিছুই তারা পড়ে! কেবল কুরআনটুকু পড়ার সময়ই হয় না! অথচ আল কুরআন বার বার তাদের ডেকে বলছে ফা আইনা তাজহাবুন? (লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোথায় ছুটছ তোমরা?) ইন হুয়া ইল্লা জিকরুল্লিল আলামিন (সারা বিশ্ববাসীর পড়ার বিষয়তো এটাই, আল কুরআন) ফামান শ্বা’আ মিনকুম আঈঁয়াসত্বক্বিম (তোমাদের মধ্যে যারা লক্ষ্যভ্রষ্ঠতা থেকে রক্ষা পেয়ে অবিচল থাকতে চায়, তাদের জন্যই এটা)।

আজ কোথায় সে মুসলমান? যাদের একমাত্র গাইডবুক হবে আল কুরআন। সেই মিশনারী স্যামুয়েল জোয়েমার বা তার দলবল নয়, বরং আল কুরআনের প্রতিটি বর্ণ, প্রতিটি হরফই তাকে বলবে, কি হতে হবে, সে কি হবে, কিভাবে হবে! কেউ কি আছেন এই আল কুরআনকে আঁকড়ে ধরবেন, সারা জীবনের জন্য!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×