:: নিরুদ্দেশ - ইয়াসমিন খান
প্রথম যেদিন ওকে দেখলাম তখনই ও হাসির উদ্রেক করল। তোমার নাম কি? জিজ্ঞেস করায় বলল, ‘ভিউটি বেগম’। ওর বড় বোন যে কিনা আমার বাসায় ছুটা কাজ করে, সেই ওকে আমার কাছে নিয়ে আসে বাঁধা কাজের জন্য। বড় বোনের ওকে নিয়ে ত চিন্তা, অশান্তি। কেথায়ও কাজে দিলে বেশীদিন ঐখানে থাকতে পারে না। হয় বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় অথবা ও নিজে চলে আসে। এসে বোনের বাসায় উঠে, দু’এক দিন থাকার পরই দুলাভাই দুর্ব্যবহার শুরু করে দেয় অর্থাৎ এতো দিন থাকা চলবে না। বাপের ঘরেও জায়গা হয় না। সৎ মা একদিনের বেশী থাকতে দেয় না। সবার একই অভিযোগ ওর স্বভাব ভাল না। অর্থাৎ কিনা ওর আচার-আচরণ, চাল-চলন স্বাভাবিক না। সবাই বলে ‘বোগদা’ অর্থাৎ বোকা, হাবলা, গাঁধা- যার যা মনে আসে তাই বলে। বয়স বড়জোর আঠার উনিশ হবে। এরই মধ্যে দুইবার বিয়ে হয়েছে কিন্তু ঘর করতে পারেনি। বিউটি বেগমের বাবা দু’বার বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করেছিল। কিন্তু দু’বারই আপদ আবার ফেরত আসে। স্বামীদের অভিযোগÑ ও হাবলা, সংসার করার উপযোগী না।
ওর আসল নাম আকলিমা বেগম। বড় বোন ডাকে ‘আক্কি’ বলে। কিন্তু ও নিজেই নিজের মডার্ন নামকরণ করেছে বিউটি। কিন্তু নিজে উচ্চারণ করে ‘ভিউটি’ বলে। অতিশুদ্ধ করে বলতে যেয়ে এই অবস্থা। ছোট বাচ্চাদের বাবুর জায়গায় বলে ‘ভাবু’। আবার আমাকে ভাবী ডাকার বদলে বলবে ‘বাবী’। ভাতকে বলতে ‘বাত’। বাথ রূমকে বলে ‘ভাতরুম’। কত কথা যে বিকৃত করে বলে তার ঠিক নেই। সবাই হাসি-তামাশা করে ওর বাক্য উচ্চরণ নিয়ে। কিন্তু আমার মনে হতো ও নিজেকে সবার কাছে সুন্দর উপস্থাপন করতে চায় কিন্তু করতে যেয়েই যত গণ্ডগোল করে ফেলে। কাজের ব্যাপারে কি আর বলব হ, য, ব, র, ল। কোন একটা কাজ সে ঠিক মতন করতে পারেনি। রুটি বেলতে দিলে কোন দিন গোল হয়নি। আবার ওটা ভাজতে গেলে পুড়িয়ে ফেলা ছিল নিত্যকার কাজ। সবজি কাঁটতে দিলে পারেনি ব্যাকা ট্যারা কিযে করে রাখত। কাপড় ভাজ করতে দিলে ওটার ভীষণ করুন একটা হাল করে রাখত। ভাত ঠিক মতন রান্না করতে পারত না। মাছের কাঁটা থেকে শুরু করে সংসারে কোন কাজই সে কখনো ঠিক মতন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু বিউটি বেগমের চেষ্টার কোন ক্রুটি ছিল না। প্রত্যেকটা কাজই সে আন্তরিক ভাবে করার চেষ্টা করত। কিভাবে করতে হবে এটাই স্থিরভাবে চিন্তা করার মতাটা তার ছিল না অথবা সারাণ ভৎর্সনা শুনতে শুনতে সেই মতাটা লোপ পেয়েছিল। কিযে টিপটপ থাকার চেষ্টা করত। সংসারের কাজ হোক বা না হোক একটা দুইটার মধ্যে সে বাথরুমে ঢুকে যেত। অনেকণ সময় ব্যয় করে বের হত। যাইহোক, বকা-বকি করে করেই ওকে নিয়ে কাজ চালাতাম। ওর বোন কোন উপায় না পেয়ে নিজের বদলে ওকে আমার কাছে দেয়। থাকার কোন জায়গা ছিল না। আমি বকা-ঝকা করতাম আবার মায়াও লাগত। কিন্তু কোন সময় গায়ে হাত তুলিনি। যদিও ওর বড় বোন মারতে বলতো কিন্তু কাজের মানুষের গায়ে হাত তোলার মতন জঘন্য কাজ অমার দৃষ্টিতে অন্যকিছুতে নেই। অন্যের পায়ে হাত তোলয় অধিকার কারো থাকা উচিত নয়। অসহ্য হয়ে বকাবকি করতাম ঠিকই কিন্তু পর মুহূর্তে অনুশোচনা হত। আর বিউটি বেগম যখন বলত, ‘বাবী’ আমারে বইকেন না। তখন খুব মায়া লাগত। চুপ মেরে যেতাম। ভাল ব্যবহার করতাম। মাথায় আসত সত্যিতো মেয়েটা কত অসহায়! ছোট বেলায় বাবা-সৎসার অবহেলা, লাঞ্ছনা, গঞ্জনায় মেয়েটা নির্বোধ হয়ে গিয়েছে।
ওর সব কিছুতেই দোষ ধরা যায়। অদ্ভূত একটা ভঙ্গিতে কথা বলে। চোখে-মুখ কুচকে, নাকটা পর্যন্ত কুচকে কথা বলতো। তাও আবার মিন মিন করে। দেখতেও ভাল ছিল না। শুকনা-পটকা, কালো। এতটুকু আকর্ষণীয় ছিল না তারপরও সে নিষ্ঠার সাথে সাজগোজ করত, কপালে কালো একটা ছোট কাজলের টিপ নিত। কেন জানি ওর সব অসুন্দরের মধ্যেও ঐ কালো ছোট্ট কাজলের টিপটা আমার ভীষণ ভাল লাগত। কেন যেন একটা মায়া মায়া ভাব আসত চেহারায়। মাঝে মাঝে সকালে ঘুম থেকে উঠেও ও টিপ পড়ত। আর একটা কাজ ও নিষ্ঠার সাথে করত সেটা হল সপ্তাহে দুইদিন বিকালে সে বেড়াতে যেত। একদিন বাপের ঘরে, একদিন বোনের ঘরে। ও নিজে নিজেই যেত। ওকে যেতে বলা লাগত না। দুপুরের পর সেজেগুজে যেত। ফিরত সময় মতন। ঠিক সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে। আসলে আমি আবার কৌতূহলি হলে জিজ্ঞাসা করতাম- ‘বিউটি বেগম’ তোমাকে কি খাওয়াল। নাক-মুখ কুচকে বিউটির জবাব ছিল, কি আবার খাওয়াইব। গেলে বসতেই দিতে চায় না। তাও যাই, বুঝেন না। না গেলে কইব বিউটি আসল না। আমাদের ভুলে গেছে। এই হল বিউটি বেগম। কত সরল, কত অবুঝ। আর একটা কারণে বিউটির প্রতি আমার মায়া ছিল সেটা হল ওর সততা। এতো নিন্দা যে মেয়ের। তার মধ্যে সততা কাজ করে। এই জিনিসটা বোধ হয় কেউ খেয়াল করার চেষ্টাই করেনি। কখনও সে মিথ্যা কথা বলেনি । কখনও কোন কিছু চুরি করেনি।
আমার ছোট সংসারে বিউটি যা পারত কাজ করত বা করার চেষ্টা করত, ওর মতন করে যা করার করত তারপর বাদবাকী কাজ আমাকেই ফিনিসিং দিতে হত। সারাদিন অফুরন্ত সময়, কখনও শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়া, কখনও উপরের ফাটের ভাবীর সাথে সিঁড়িতে বসে আড্ডা দেওয়া; এভাবেই সময় চলে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে বিউটির জীবনে ঘটে যায় আরেক উপহাসের ঘটনা। আমার ঘরে এমন একটা জঘন্য ঘটনা ঘটে এখনও ভাবলে অনুশোচনায়, কষ্টে, ঘৃণায় মনটা বিষিয়ে যায়। অবশ্য আমার ঘরেই না এমন ঘটনা হাজারো ঘটে চলেছে। কিন্তু এটা সব থেকে জঘন্য ঘটনা। পুরুষ মানুষের বিকৃত রুচির পরিচয়। একদিন বিউটি দুপুরের পর ওর বোনের বাসায় যায়। বিকালের পর ওর বোন ওর সাথে আমার বাসায় আসে। এসেই আমার উপর চড়াও হয়। বলে ভাবী আপনার বাসায় আমার বোনটাকে দিলাম কত আশা ভরসায় অথচ দেখেন ওর কি সর্বনাশ হইছে, বলে কাঁদতে থাকে। অমিতো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না কি হয়েছে। ভিতরে ভিতরে ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম না জানি কি হয়েছে। বোনকে বললাম, কান্না থামিয়ে বল কি হয়েছে? কি আর হবে ‘মাগী পেট বানাইছে,’ বলে বোনকে মারতে শুরু করল। আমার পায়ের নিচের মাটি টলতে লাগল, সাড়া শরীর অসাড় হয়ে গেল, কোন মতে নিজেকে সামলে কাঁপা গলায় শুধু বললাম, কে করেছে? ওর বোন উত্তরে বলল, আপনার সাদা মূলা দেবর। মাগী আমারে কয়না। আমার বাসায় যাইয়া দেখি বমি করে। আমার সন্দেহ হয়। চাইপা ধরলে কয় কন এখন কি হইব। জীবনের ষোল কলা পূর্ণ কইরা ফালাইলো। আপনার ঘরে বইসা এমন কান্ড হইল বুঝতে পারলেন না। আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না। মনের মধ্যে একই প্রশ্ন কিভাবে, কখন ঘটাল ঘটনা। একা মানুষ ঘরে থাকে, সাহেব অফিস থেকে আসতে আসতে সন্ধ্যা, এসেই বিছানায়। সারাদিন আমি আর বিউটি। আমার এই রাজ পুত্র দেবর ডিগ্রী পাশ করে ঢাকায় আসে চাকুরীর খোঁজে। আমার আপন দেবর না, তবে বেশ কাছের দেবর। রাজপুত্র বললাম এই কারণে যে, সে দেখতে রাজপুত্রের মতন। তো এই রাজপুত্র একদিন আমার বাসায় বেড়াতে এলো। আদর যতœ করে খাওয়ালাম। কিন্তু সে যেহেতু বেকার মাঝে মাঝে আসতে লাগল অবশ্য আসার কারণ, ঠঈজ এসে বসে বসে হিন্দী মুভি দেখে। আমিও কিছু বলি না। আদর যতœ করে খাওয়াই। বিউটিকে জেরা করে জানা যায়, ঘটনা একদিন ১১টার দিকে। সাহেব অফিসে চলে যাওয়ার পর আমি ওকে যেই যেই কাজ করতে হবে বলে উপরের ফ্যাটের ভাবীর সাথে সিঁড়িতে বসে গল্প করছিলাম। আর ঘরে রাজপুত্র দেবর বসে সিনেমা দেখছিল। ঐ সময় রাজপুত্র বিউটি বেগমকে রান্না ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আমার ড্রইং রুমে বসে আকাম করে। আমি ওকে যখন বললাম আমাকে ডাকনি কেন? ও বলল, রাজপুত্র ডাকতে দেয়নি। এবং জেরা করে আরো যা বুঝলাম তা হল রাজপুত্র হালকা পাতলা প্রেমের অভিনয় করেছে। প্রথম দিন জোর করে করার পর আরো কয়েকদিন আকাম করে এবং বিউটি বেগম রাজপুত্রের সন্তানের মা হতে চলে। রাগে, ােভে ইচ্ছে করছিল রাজপুত্রের সাথে বিউটি বেগমের বিয়ে দিয়ে ওকে রাজরাণী করে দেই। কিন্তু আমার সাধ্য হয়নি মান ইজ্জতের কথা চিন্তা করে। ওমন এক রাজপুত্র, আর কি সুরৎ বিউটি বেগমের। মাথায় কিছুতেই ঢুকেনি কোন পুরুষের বিউটি বেগমে রুচী আসে। যা হোক, টাকা পয়সা খরচ করে ওর বোনের সাথে হসপিটালে পাঠিয়ে পেট ছাড়িয়ে আনাই । এবং রাজপুত্রকে জানিয়ে দেই যে ওকি করেছে। তারপর আর একমুহূর্তের জন্যও রাজপুত্র দেবরের দিকে তাকাইনি, কথা বলা তো বহুদূরের ব্যাপার। এর পর ওকে আর বেশীদিন আমার কাছে রাখিনি।
এরপর বিউটিকে আবার বিয়ে দেয়। বেশ বয়স্ক স্বামী, এক পুত্র সন্তান। দিন মজুর স্বামী। কয়েক দিন বিউটি বেশ সুখেই ছিল। ছেলেটাকে নিজের মতন আপন করে নিয়েছিল। নিজের কোলে ফুটফুটে কন্যা সন্তান এলো। আবারও ঘর ছাড়ার পালা অর্থাৎ বিউটি ঘর করার যোগ্য না। এক সন্ধ্যায় বিউটি আমার কাছে এসে হাজির। ভাবী আমাকে আপনার কাছে রাখেন, আমি আর স্বামীর কাছে ফিরে যাবনা। আমি তো অবাক, দুই মাসের কন্যাকে ফেলে এসে হাজির। বললাম কি হয়েছে তোমার? মেয়েকে একা ফেলে কিভাবে এলি? ওকে কে দেখবে? বলল, জানিনা যে ইচ্ছা দেখুক। গোলামের পোলা শুধা-শুধা ধইরা পিডায়। আমি তখন অনেক বুঝিয়ে বললাম যাও মেয়েকে নিয়ে এসো, ওটা তোমার নিজের মেয়ে ওকে কেন ফেলে আসবা। ওকে নিয়ে এসো এক ব্যবস্থা করা যাবে। সত্যি সত্যি বিউটি যেয়ে মেয়েকে নিয়ে এলো, মজার ব্যাপার হলো সৎ ছেলেটাকেও আনল। আমি তো অবাক ওকে কেন এনেছ? কি করবো ভাবী আমার পিছ ছাড়েনা, কান্না-কাটি করল তাই নিয়া আইলাম। আমি বললাম, এতো মানুষ আমি কই জায়গা দিব। বিউটি কান্না-কাটি শুরু করল। আপনি আমারে খেদায় দিয়েন না। আজীবন আপনার পায়ের তলায় থাকব। ঐ ব্যাডার কাছে যামুনা। পিডায়, খাওন দেয়না। কাম কইরা যেই টাকা পায় নেশা কইরা শেষ করে। আমি তখন বুঝিয়ে ছেলেকে দিয়ে আসতে বললাম। আমার বাসার আশে পাশে কোন বস্তিতে ও থাকত। ও মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ছেলেকে দিয়ে আসতে যায়। ওমা আধা ঘন্টা পর স্বামী সহ ফিরে আসে। এসে মেয়েকে নিয়ে যায়। ওর স্বামীকে বুঝাই। স্বামীর অভিযোগ ও হাবা, কাজ কাম ঠিক মতন করতে পারেনা। চোখ মুখ কুচকে কথা বলে দেখলে অশান্তি লাগে। তারপরও বুঝালাম, মানুষ কোন সময় সবকিছু মনমতন পায়না। কিন্তু সব কিছু মেনেই জীবন চালাতে হয়। তাছাড়া বিউটি ভাল। ওরা চলে যায়।
কয়েক মাস পর বিউটি আবার হাজির, এবার ঘটনা ও ফাইনালি স্বামীর ঘর থেকে চলে এসেছে। মেয়েটাকে কোথাও পালতে দিয়েছে। এবার আমার কাছে থাকবে। কিন্তু আর ওকে রাখিনি। পরে অন্য কোথায় যেন কাজ নেয়। মাঝে মাঝে আসত। একদিন এসে বলল, মেয়েটা মরে গেছে। ১ বছর পর ওর বোন আবার ওকে বিয়ে দেয়, এবার বিয়ে দেয় ওদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মূলাদি থানায়। স্বামীর জমি আছে, ঘর আছে দুই পুত্র সন্তান আছে, বউ মৃত। ওর বোনের ভাষায় এবার বেশ ভাল বিয়ে হয়েছে, ভাল থাকব। এভাবে বিউটি একের পর এক ভাগ্য তালাশ করে বেড়াতে লাগল। এটাই যেন ওর নিয়তি কি স্বাভাবিকভাবে নিতে দেখতাম ঘটনাগুলি। যেন এমনই হওয়ার কথা। কোন কিছুই বিউটির মনটাকে ছু’য়ে যেতনা। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, কোন কিছুতেই কোন কিছু এসে যেতনা। এতোটাই নির্বোধ ছিল বিউটি বেগম। কিছুটা রোবট টাইপ। গ্রামের চলে যাওয়ার পর ওর সাথে যোগাযোগ কমে যায়। কিন্তু হঠাৎ মাঝে মধ্যে ওর বড়বোন আমার বাসায় আসত। শেষ যোগাযোগ পর্যন্ত জানা যায় বিউটি ঐ ঘরও ছেড়েছে এবং ঢাকায় কোথায় কাজ করেছে কিছুদিন। তারপর ওর সৎ মা তার এক বুড়া মামার সাথে বিয়ে দিয়েছে, এবং মুন্সিগঞ্জের কোন এক গ্রামে থাকে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ও আপাতত সেখানেই ছিল। তারপর ওর আর কোন খবর নেই। কিন্তু ওর ব্যাপারে আমার সব সময়ই একটা কৌতুহল কাজ করে যে বিউটির দিন কাল কেমন চলছে। ইদানীং বিউটির বোনও এদিকে আসে না বললেই চলে। কাজেই বিউটি ওরফে আকলিমা বেগমের কোন খবর আমার আপাতত জানা নেই।