somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তির রাত পবিত্র শবে বরাত

২৫ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিন-রাত-মাস-বছর সবই আল্লাহর। তারপরও কিছু কিছু দিন ও রাতের মর্যাদার মধ্যে তারতম্য আছে। সে সকল দিন বা রাত অশেষ মহিমান্বিত, সওয়াব ও বরকতের অমিয় ধারায় প্লাবিত। শবে বরাত এমনি এক মহিমান্বিত ও বরকত, সওয়াবপূর্ণ রজনী। এ সময় ইবাদত-বন্দেগীর সওয়াব অনেক বেশি। শব ফারসি শব্দ-এর অর্থ রজনী বা রাত। আর বরাত শব্দের অর্থ ভাগ্য বা সৌভাগ্য, শব্দটির অন্য অর্থও আছে। শবে বরাতকে আরবীতে বলে লাইলাতুল বারায়াত। লাইলা অর্থ রাত বা রজনী, আর বারায়াত অর্থ মুক্তি, নিষ্কৃতি অর্থ লাইলাতুল বারায়াত মানে মুক্তি রজনী বা নিষ্কৃতি রজনী। শবে বরাত আল্লাহর ইবাদত বা উপাসনার রাত। পরম করুণাময়ের দরবারে নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপ কাজ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার রাত। এ রাতে পবিত্র মনে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করলে আল্লাহর কাছে নিজের পাপ-গোনাহ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন এবং অনুতপ্ত বান্দাহকে গোনাহ থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে মাফ করে দেন। এ কারণেই এ রাত মুক্তি রজনী বা নিষ্কৃতি রজনী তবে আমাদের দেশে বারায়াত শব্দটি বরাত অর্থাৎ ভাগ্য রজনী বা সৌভাগ্য অর্থেই বেশি প্রচলিত। এ কারণে এ দেশে শবে বরাত সাধারণ অর্থে ভাগ্য রজনী বা সৌভাগ্য রজনী হিসেবেই বেশি পরিচিত। আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৫ শাবান পবিত্র শবে বরাত বা সৌভাগ্য রজনী। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- যখন শাবান চাঁদের ১৫-এর রাত আসবে তখন তোমরা জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করবে। আর পরদিন রোজা রাখবে । কেননা আল্লাহ এ রাতে সূর্যাস্তের পরই সর্বনিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং তার বান্দাদের ডেকে বলেন, ওহে আছো কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি তোমাকে ক্ষমা করব। আছো কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তোমাকে রিজিক দেব। আছো কোন বিপদগ্রস্ত? আমি তোমাকে বিপদমুক্ত করব। আছো কোন তওবাকারী? আমি তোমার তওবা কবুল করব। এভাবে সুবহে সাদেক পর্যন্ত আল্লাহ আহবান করতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেন- শবে বরাতে আল্লাহ স্বীয় রহমতের তিনশত দ্বার খুলে দিয়ে প্রথম আসমানে আসেন এবং সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত তাঁর বান্দাহদেরকে এ বলে আহবান করতে থাকেন, হে আমার বান্দাহগণ আজ তোমরা কে কি চাও? কে রোগ মুক্তি চাও? কে মনোবাসনা পূর্ণ করতে চাও? কে সারা জীবনের গুনাহর ক্ষমা চাও? কে অফুরন্ত সুখের জান্নাত চাও? আজ যে-যা চাও তা পাবে। পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও মাহাত্ম বর্ণনায় আরো অনেক হাদীস আছে যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব হলো না। শবে-বরাতের রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত অনিঃশেষ ধারায় বর্ষিত হতে থাকে তার বান্দাহদের ওপর। এ রাতে মানুষের ভালোমন্দ কাজ-কর্ম হিসাব-নিকাশ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। সারা বছরের যাবতীয় ফয়সালা হায়াত, মওত, রিজিক, দৌলত, আমল ইত্যাদির সহিত সম্পর্কযুক্ত আদেশ-নিষেধসমূহ উক্ত রাত্রিতে লওহে মাহফুজ হতে উদ্ধৃত করে কার্যনির্বাহক ফেরেশতাদের নিকট সোপর্দ করা হয়। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নির্দেশনাযায়ী এ পবিত্র রাতে সাধারণত ইবাদত-বন্দেগীর মাঝে নিমগ্ন থাকাই প্রতিটি মুসলমানের প্রধানতম কাজ।

অন্তরকে কলুষমুক্ত করে ভক্তি ও আশা-ইয়াকিনসহকারে নফল নামাজ, তিলাওয়াত-ই-কুরআন, দরূদপাঠ, দান-খয়রাত, দু’আ-মুনাজাত প্রভৃতি ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে। শবে বরাতের নামাজের নির্ধারিত কোন নিয়ম নেই। দু’রাকাত হতে ২০ রাকাত পর্যন্ত নফল নিয়তে নামাজ পড়তে হয়। এ পবিত্র রাতের ইবাদত-বন্দেগীর মর্যাদা সম্পর্কে পরিবারের সদস্যগণকেও উৎসাহ ও গুরুত্ব অনুধাবন করাতে হবে। শেষ রাতের দিকে পরিবারের সবাইকে আল্লাহর রহমত ও বরকতের অংশীদার হওয়ার জন্য জাগায়ে ইবাদত ও দু’আ-মুনাজাতে মশগুল করায়ে দিতে হবে যেন ছোট-বড় সকলেই রহমতের অংশ নিয়ে সৌভাগ্যবান হতে পারে। করণীয় আমলের সাথে কতগুলো বর্জনীয় বিষয়ও জড়িত থাকে। সে বিষয় বর্জন না করলে শবে বরাতের বরকত হতে মাহরূম হতে হয়। সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতা, রহমতের পরিবর্তে গযব, সওয়াবের পরিবর্তে আযাবই নসীব হয়। তাই এ রাতে অপব্যয় ও অপচয় না করে অযথা আতশবাজীতে অনর্থক অর্থ অপচয় না করে সে অর্থ কল্যাণকর কাজে বা ফকির-মিসকিনের মাঝে দান করে দেয়া অনেক সওয়াব ও বরকতের কাজ। প্রকৃতপক্ষে শবে বরাতের বৈশিষ্ট্য অনুষ্ঠানের আড়ম্বরতার মধ্যে নয়, বরং চরিত্রবলের সাধনার মাধ্যমে করুণাময়ের করুণা লাভের প্রয়াসই এর তাৎপর্য। সর্বস্ব সম্পূর্ণ করে নিঃশেষে আত্মনিবেদনের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে ডাকাই এ পবিত্র রাতের প্রধান কাজ।

শবে বরাত মূলতঃ আল্লাহর ইবাদতের রাত, তাঁর রহমত ও পরম সৌভাগ্য তাঁর নিকট থেকে চেয়ে নেয়ার রাত। তাই এ রাতে এক মনে আল্লাহর ইবাদত করাই আমাদের একমাত্র কর্তব্য। কেননা এ রাতে নিজের গোনাহ বা পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হলে তিনি তা কবুল করেন। এ পবিত্র রাতে তাঁর রহমত অজস্রধারায় তাঁর বান্দাহদের ওপর বর্ষিত হতে থাকে। আসুন এ রাতে আমরা মুনাজাত করি, হে আল্লাহ আমাদের বরাত খুলে দাও এ পবিত্র রাতে, আমরা তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি, তুমি আমাদের সকল গুনাই মাফ করে দাও।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×