জমা রাখি রহস্য ও ঘুম আদিম পাথরে । জানি – একদিন নিঝুম বৃষ্টি এসে মুছে দিবে আমার পঙক্তিগুলো । আর আমি জারুলের বনে বসে গাইবো আদিশূন্যতার গান । হাওয়ায় বিলিয়ে দিয়ে ঘ্রাণ , যে ফুল ঝরে পরে আঁধার পাতায় – আমি তার কাছে আসি , বলি - যখন ছিলাম না আমি পৃথিবী ও পর্বতে , আমাকে সেই নাই অস্তিত্বের গল্প শোনাও । সে শোনায় এক হিরণ্ময় রূপকথা । রূপকথার একশ একটি বাঁক । প্রতি বাঁকে ঘুমিয়ে আছে এক ময়দানবের ভয় । নখের ভেতর বিষ আর চোখের মাঝে আগুন নিয়ে বসে থাকি শিকারহারা , কেননা আমাকে তো যেতেই হবে – এক বন্দী রাজকুমারীর দৃশ্যের ভাঁজে । কোথায় সে থাকে ? জানিনা পথ , পথের শৃঙ্খল , এই ভেবে প্রারম্ভ করি সমুদ্র ভ্রমণ ।
নিঝুম-নিদ্রায় সমুদ্র আমাদের ডাকে , ভুলে যাওয়া স্বপ্নের মত অবোধ্য এ আহবান , তবু সারিসারি জলকণা ওড়ে আসে দিব্য-বাতাসে । মাঝেমাঝে নিজেকে প্রাচীন কোন গল্পের হারিয়ে যাওয়া এক নাবিক বলে ভ্রম হয় কেননা আমি জানি , সব সন্ধ্যা আসলে একটি শীতল রাত্রির দিকেই ধাবমান । যে রাত্রি আটকে আছে আর্তেমিসের ধনুকের বক্রতায় । আর বক্রতায় ঝুলে আছে ওরাইয়নের ঘুম ।
আমাকে পথ দেখাও অরণ্যচারিনী , নকশাকাটা তীরের ফলায় গেঁথে নাও আমার সমস্ত সমুদ্রজীবন । পুঁথির শ্লোকের মত কেন অবসাদ আসে , কেন আসে শৈশব-নির্জনতা এই অসুখের রাতে - আমি তবে মৃতনদীর জলের কঙ্কাল ? তবু -
কেন আশৈশব পাঠ করি দূর দ্বীপের সংকেত ?
কেন আশৈশব পাঠ করি অদেখা এক ঢেঊপাখির গান ?
জীবন নিয়ে ইয়ার্কি করতে করতে আসলে আমরা পৌঁছে গেছি এক বিধ্বস্ত নগরীর সিংহ-দ্বারপ্রান্তে । দেখি চারপাশে গলে পরছে মোমের পাহাড় , আর দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অজস্র মায়াবী বেড়াল । বেড়ালের পায়ে লাল ঘুড়ির সুতো , সুতোয় বাধা ক্লাউনের ছেঁড়া হ্যাট ।
মুছে যায় নগরসন্ধ্যা । ধীরে ঢেউ নিয়ে যায় জলের ক্ষত । জমা রাখি স্মৃতির ক্ষয় প্রবালের ভাঁজে , দেখি - পরিসীমা ভুলে হেটে আসছে যুদ্ধফেরত ক্লাউনের দল , শরীরজুড়ে মাংসের ঘ্রাণ আর মুঠোভরতি হেরে যাওয়া মানুষের ক্রন্দন । জানি – মাংসের ভেতর লুকিয়ে থাকে জীবনের গভীর সত্যগুলো ।
তবু কেউ এসে ডেকে নেয় দৃশ্যের অগোচরে । আমার কাছে কি চাও নগরপ্রহরী ? আমি শূন্য - শুধু যেতে হবে রাজকুমারীর দৃষ্টির কার্নিশে । আমাকে যেতে দাও ... যেতে দাও ...
কেউ জানেনা আমার নখের ভেতর বিষ আর চোখের মাঝে আগুন ...
১. ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৪ ০