শুরুতেই আমার অবস্থান পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। ব্লগে আছি পৌনে এক বছর যাবত। আমার নিক আছে বেশ কয়েকটা। কিন্তু কোন নিক থেকে কখনোই ধর্ম নিয়ে কোন পোস্ট লিখি নাই। লিখতে ইচ্ছা করে নাই। আস্তিক নাস্তিক ক্যাচাল সাধারণত এড়ায়ে গেছি, অথবা চুপচাপ মাইনাস দিয়ে চলে আসছি (যে এক্সট্রিমিস্টের অবস্থান নিয়েছে তাকে)। আমার অতি পছন্দের অনেক ব্লগারকেও ধর্মীয় ইস্যুতে গোঁড়ামিপূর্ণ অবস্থান নিতে দেখেছি (আস্তিক নাস্তিক উভয়পক্ষকেই)। ভেতরে ভেতরে আহত বোধ করলেও এ ব্যাপারে কিছু বলি নাই। আমি সম্ভবত সুবিধাবাদী এবং কিছুটা ভীতু, ভয়টা ভালো বন্ধুদের হারানোর।
আমি নিজে কোন মতাদর্শেরই দৃঢ় অনুসারী নই। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্মের ব্যাপারটা কখনো চাপিয়ে দেয়া হয় নি, এটা পালন করা হয়েছে অনেকটা অন্যান্য লোকাচারের মতই। শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়ার কারণে পরকালে বেহেস্ত পাবো কিনা জানি না, তবে মসজিদে পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হত তাই যেতাম। পরের দিন পরীক্ষা থাকলে যেতাম না। কেউ মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়তে গিয়েছি, তখন মাথায় আসে নি ঈশ্বর আছেন নাকি নাই। এটা আমার চিন্তাশক্তির অক্ষমতা নাকি পলায়নপর মনোবৃত্তি তা জানি না। যেটাই হোক, এই দুর্বলতা আমার আছে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে আমার মত মানুষের সংখ্যাই বেশি, অন্তত আমার লেভেলে। আমি আল্লায় বিশ্বাস করলে আল্লা আমাকে এমনি এমনি খাওয়াবে না, জীবন সংগ্রামে আমি ছাড় পাব না এতটুকুও।
আমি যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি কিংবা অনস্তিত্বে বিশ্বাস করি সেটা আমার জীবনধারায় প্রভাব ফেলবে নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু সেটা খুব বিশাল কিছু নয়, আমার অন্তত তা মনে হয় না। একজন আস্তিক এবং একজন নাস্তিকের মাঝে বাহ্যিক কোন পার্থক্য আমার স্থূল দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না। দুজনেই নিঃশ্বাস নেয়, খায়, দায়, ঘুমায়; দুজনেরই শারীরিক এবং মানসিক নানা চাহিদা আছে। দুজনকেই নাগরিক জীবনের সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে হয়। ঈশ্বরে বিশ্বাসীকে যেভাবে ট্রাফিক জ্যামে আটকাতে হয়, অবিশ্বাসীকেও তাই। লোড শেডিংও দুই পক্ষকেই সহ্য করতে হয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষকে প্রতি পদে পদে অনেক কষ্ট করতে হয়, আমরা যারা নিজস্ব কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে ব্লগ লিখছি তারা অতিক্ষুদ্র সৌভাগ্যবান শ্রেণীর সদস্য, স্বীকার করি আর নাই করি।
মাঝখান দিয়ে যেটা হয় সেটা হল একতা নষ্ট (ব্লগের কথা বলছি)। উদাহরণ দেই। শুধুমাত্র আস্তিক হবার কারণে দেখেছি অনেক ব্লগারকে ছাগু ট্যাগ লাগানো হয়েছে। এতে করে ব্লগের সত্যিকারের ছাগুরা (জামাতী) উৎসাহিত এবং উপকৃতও হয়েছে।
অন্য দিকে আস্তিকদের দিক থেকেও এমন কিছু বাড়াবাড়ি দেখা গেছে যেটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অনেকে নাস্তিকদের বর্বর, জানোয়ার, হিংস্র - ইত্যাদি গালাগালি করেছেন, যে কোন মূল্যে তাদের ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ব্লগের মত উন্মুক্ত জায়গায় কোন মতাদর্শকে দমানো যায় না, যদি না তা রাষ্ট্রদ্রোহী হয়। এটা তাঁরা বুঝতে পারলেই মঙ্গল।
তাই ব্লগের সবার (আস্তিক/ নাস্তিক/ আমার মত সংশয়ী) প্রতি আমার আবেদন - আসুন আমরা একে অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। বিবেক নামক জিনিসটা প্রকৃতিগতভাবে আমরা সবাই পেয়েছি, আসুন সেটাকে কাজে লাগাই। ধর্ম ভালো না মন্দ সেটা বিবেক দিয়ে বিচার করি এবং যে সিদ্ধান্তে উপনীত হব সেটাকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা না করি। এতে সবার মঙ্গল হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
(ধর্ম নিয়ে এটাই আমার প্রথম এবং শেষ পোস্ট। কেউ যদি আহত বোধ করেন, তাহলে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কারণ আমার কাছে মানুষের মনই সবচেয়ে বড় উপাসনালয়।)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০০৯ রাত ৯:২২