সঙ্কট -
কয়েক বছর আগের ঘটনা- আমার পাড়ার এক ছোটভাই আমাকে এসে একটা ওয়েব সাইটের কথা বলল(ইউনিপেটুইউ), যেখানে নাকি টাকা বিনিয়োগ করলে ১০মাসে দ্বিগুন টাকা ফেরত দেয়। সাইটটা প্রথম দেখাতেই বুঝতে পারলাম এটা একটা প্রতারণামূলক সাইট। এজাতীয় সাইট কবে বন্ধ হবে তা কখনই আগে থেকে আচ করা যায় না। তাই আমি জোর দিয়ে ছোট ভাইটাকে ঐ সাইটে টাকা দিতে নিষেধ করলাম। কয়েক মাস পরে দেখি, ঐ ছেলেটাই আমাকে এসে বলে ভাই এই সাইট ভুয়া না, একটা ভাল সাইট, আমি টাকা ফেরত পাচ্ছি আপনিও টাকা রাখেন। তখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমাদের বোকামির সুযোগ নিয়ে কত হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাবে।
যায় হোক এখন আর এইসব দেখে এতটা রাগ লাগে না। সেই ছোট বেলায় শেখা – “লোভে পাপ, পাপে মুত্যু” এই কথাটা আমরা বারবার ভুলে যায়, আর সে কারনেই টিভিআই এক্সপ্রেস, ডুল্রান্সার, ফেকল্যান্সার হিজিবিজির লোভের ফাদে পরে বারবার আমাদের ধরা খেতে হয়।
তাহলে কি ইন্টারনেট থেকে টাকা আয়ের সব পথই ভুয়া? এ বিষয়েই আমার আজকের লেখা।
আমাদের দেশের একটা ছেলের শিক্ষা জীবন শেষ করতে লাগে মোটামুটি ১০ থেকে১৮/২০ বছর। এই দীর্ঘ শিক্ষা জীবন শেষ করেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে যা শেখে তা দিয়ে বাস্তব ক্ষেত্রে তেমন কোন কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। তাই কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তাকে আবার নতুন করে কাজ শিখতে হয়? অথচ ইন্টারনেট থেকে আয় করার কথা বললেই আমরা চিন্তা করি, মাত্র একদুই ঘন্টা দেখে কয়েকটা ক্লিক করা শিখে নিয়ে বা কিছু টাকা বিনিয়োগ করেই আমরা টাকা আয় করব। সমস্যাটা এখানেই।
আমি এই লেখাটা মূলত একেবারে সাধারণ মানুষের বোঝার উপযোগী করে লিখছি, অনেক বিষয়ে বেশি গভীর আলোচনা করতে গেলে অনেকের কাছে বিষয়টা অবোধ্য মনে হতে পারে, তাই সবোর্চ্চ সহজ করে যতটুকু বোঝানো যায়, ততটুকুই বোঝানোর চেষ্টা করছি।
সামান্য ৫/১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পেতে আমরা ১০/২০ বছর পড়তে পারি কিন্তু ইন্টারনেট থেকে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে যেন আমাদের আর তর সয় না।
তবে ঝুকি নেই অথচ অল্প কিছু সময় ব্যায় করে শিখে ফেলেই আয় করা যায় ইন্টারনেটে এমন কাজও প্রচুর আছে, তবে সেক্ষেত্রে আয় যেমন কম হয় আর কাজের নিশ্চয়তাও কম থাকে। আর সহজ অধিকাংশ কাজই মূলত আপাত অবৈধ। তবে তেমন দোষনীয়ও না।
যাই হোক এই জাতীয় সহজ কাজ (মূলত অকাজ) করে টাকা ইনকাম করা যায় এমন কাজও আমাদের দেশের অনেক মানুষ করে। এই জাতীয় কাজের মধ্যে আছে ক্যাপচা পূরণ, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সাইটে যেমন ক্রেগলিষ্ট আর ব্যাকপেইজই বিজ্ঞাপন দেওয়া ইত্যাদি, তবে এসব কাজের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অন্ধকার।
সম্ভাবনা-
আরেক প্রকারে কাজ আছে- আর তা হলো এসইওএর কাজ যা আমাদের দেশের মানুষ অনেক পরিমানে করে। তবে এটার জন্য দক্ষতারও প্রয়োজন আবার এই কাজের ভবিষ্যতও প্রায় অন্ধকার।
তবে মূলত আমাদের উচিত হবে দক্ষতা নির্ভর কোন একটা কাজে দক্ষ হয়ে সেই কাজ করা। এক্ষেত্রে যেমন আয় বেশি হবে আবার কাজেরও নিশ্চয়তা থাকবে।
আর মূলত এগুলোই সত্যিকারের কাজ। এ জাতীয় কাজের মধ্যে আমাদের দেশের মানুষ সবচাইতে বেশি করে ওয়েব সাইট অথবা ওয়েব এ্যাপ্লিকেশন তৈরী, সফওয়্যার তৈরী, আর্টিকেল লেখাসহ বিভিন্ন প্রকার লেখালেখির কাজ, বিদেশী প্রতিষ্ঠান গুলোর কাস্টোমার সার্ভিস, অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে সেলস ও মার্কেটিং এর কাজ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজ, বিভিন্ন প্রকারের ডিজাইনের কাজ যেমন লগো বা ব্যানার ইত্যাদি তৈরী করে দেওয়া, ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মুছে দেওয়া, ভিডিও এডিটিং, এনিমেশন তৈরী ইত্যাদি।
কাজ শেখার জন্য সব চাইতে কার্যকর মাধ্যম হলো ইন্টারনেট, আপনি ইন্টারনেটেই আপনার শেখার প্রয়োজনীয় সব কিছুই ফ্রি পাবেন। যদিও নতুনদের জন্য শুধুমাত্র ইন্টারনেট থেকে সাহায্য নিয়ে কাজ শিখে কাজ পাওয়াটা আসলেই বেশ কঠিন। তার পরও যত মানুষ ফ্রিন্যান্সার হিসাবে সফল হয়েছেন তারা সবাই মূলত ইন্টারনেট থেকেই বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে দেখে নিজে নিজেই কাজ শিখেছে। বর্তমান যুগে গুগলেই উপর আসলেই কোন শিক্ষক নাই।
আর একটা কথা সব সময় মনে রাখতেই হবে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ যেমন বিদেশে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে, তেমনি ইন্টানেটেও আমরা শ্রমিক ছাড়া কিছুই না। তাই আমাদের কোন টাকা বিনিয়োগের কোন প্রশ্নই আসতে পারে না। যেই সাইটই আপনাকে কাজের জন্য আগে টাকা দিতে বলবে। মোটামুটি নিশ্চিত থাকতে পারেন সেই সাইটই প্রতারক সাইট। শ্রমিক যেমন ঝুড়ি আর কোদাল আর তার শ্রম দিয়ে আয় করে। আগে কোন টাকা দেওয়া লাগে না। তেমনি ইন্টারনেট ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিয়ের জন্যেও আমাদের দরকার শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার আর শ্রম।
কাজ পাবার জন্য নির্ভর যোগ্য সাইটগুলোর মধ্যে আছে ওডেক্স, ফ্রিল্যান্সার, রেন্ট এ কোডার ইত্যাদি যেগুলোর কোনটাতেই কাজ পাবার জন্য কোন টাকা দেওয়া লাগে না।
কিছু কিছু নির্ভরযোগ্য শেয়ার মার্কেটের মতন সাইট যেমন ফোরেক্সে টাকা বিনিয়োগ করে আপনি বৈধ ভাবে লাভ অথবা লস করতে পারবেন।
তবে নতুনদের জন্য একটাই পরামর্শ কখনই কোথাও আগে থেকে কোন টাকা জমা দেওয়া যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২