মোবাইল দেখে এখন আর অবাক হই না । ১০/১৫ বছরের আগের সময় এখন আর নেই, মোবাইল এখন অনেক কমন একটা ব্যাপার । তেমনি ভাবে আমরা রোড এক্সিডেন্ট দেখেও আর অবাক হই না । ট্রাক চালক বেপরোয়া চালাবে, বাসের ড্রাইভার পাল্লা দেবে, মোটরসাইকেল নিয়ে পোলাপান ভাব নেবে, নছিমনের মালিক তার গাড়ীর সৌন্দর্য(!!!) বাড়ানোর জন্য উল্টাপাল্টা যায়গায় বড় বড় নাট বল্টু দিয়ে গাড়ী সাজাবে, করিমনয়ালা এমন পরিমান মালপত্র নেবে যার ফলে সে আশেপাশের কিছুই দেখতে পারবে না, এগুলো এখন আর অবাক হওয়ার মতন কোন বিষয়ই না । দেখতে দেখতে সব আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে । এমনকি পথের ধারের অন্য কোন দূর্ঘটনা দেখেও আমরা বিচলিত হয়না (ঠিক যেন নজরুলের কথার মতই- কশাই যখন একটা ছাগলকে জবাই করে, তখন আরেকটা ছাগল আরামে কাঠাল পাতা খায়) বরঞ্চ ইন্টারসিটি বাসে যাবার সময়, যদি পিছনের বাসটা আমি বসে থাকা বাসটাকে ওভারটেক করে তাইলেই আমরা বিরক্ত হই। ট্রাফিক আইন সম্পর্কেও আমাদের কোন আগ্রহ নেই, আইন অনুসারে আমাদের দেশে যানবাহন চলবে রাস্তার বাম দিক দিয়ে, আর পথচারি হাটবে রাস্তার ডান দিক ঘেষে, যেন বিপরিত দিক থেকে আসা যানবাহনটাকে সে সামনা সামনি দেখতে পাই, এই অতি সাধারণ অথচ অতি কার্যকর নিয়মটা সম্পর্কেও হাটার বিষয়ে আমাদের অনেকের ধারনা ঠিক উল্টো । আবার এই রকম সহজ কিন্তু অতি দরকারী ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে আমাদের সরকারী প্রচার প্রচারনাগুলো যে যথেষ্ট না, সে বিষয়েও আমাদের সরকারী মহলের কোন মাথা ব্যাথা নেই । যেমন ভাবে পত্রিকার পাতায় প্রত্যেকদিনের দূর্ঘটনার খবরেও আমাদের কোন কিছু যায় আসে না, আমরা সতর্ক হয় না, আমরা সতর্ক করি না ।
কিন্তু আগামী কাল যেই ঘটনার পরিপেক্ষিতে সংবাদ মাধ্যম গুলোকে এই সংবাদটা আসবে –
কুষ্টিয়ার সন্তান অনিক হাসিবের মৃত্যুতে শোকসভা অনুষ্ঠিত
কুষ্টিয়ার সন্তান এবং কুষ্টিয়া জিলা স্কুল(২০০৮) ও কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের(২০১০) প্রাক্তন ছাত্র অনিক হাসিব গত ২৫ জুন খুলনায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। সে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র ছিল। নিহতের স্মরণে তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী এবং “প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়া” ও যুবকদের সংগঠন “কালপুরুষের” সদস্যরা গতকাল কুষ্টিয়ার থানা ট্রাফিক মোড়ে এক শোকসভার আয়োজন করে। শোকসভায় কুষ্টিয়াসহ দৌলতপুর, মেহেরপুর ও আলমডাঙ্গার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে, নিহতের স্মরণে সবাই ১ মিনিট নিরবতা পালন করে । শোকসভায় উপস্থিত সকলে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার অবনতির বিষয়টি তুলে ধরে। অনিক হাসিব প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়ার একজন সদস্য ছিল। সে শেখ আব্দুদ রশিদ এবং সামশেয়ারা বেগমের ছোট সন্তান। শোকসভায় উপস্থিত সকলে নিহতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
এই ঘটনায় অনিক হাসিবে আত্বীয় স্বজন সহ আমাদের সবার যায় আসে, কারণ প্রযুক্তিতে কুষ্টিয়ার বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগের অভিযান সেনা দলের তূর্য বাদকের একজন তুখোড় সৈনিককে আমরা ওই সড়ক দূর্ঘটনায় হারিয়েছি ।
আমরা যদি এখনো সর্তক না হই বা না করি, তাহলে আমাদের নিজের অথবা অন্যের ভুলে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এমন আরো সংবাদ আসতেই পারে, যাতে আপনারও যাবে আসবে।