শহুরে কৃষি বা বৃক্ষ মেলায় মানুষ যাবে অবসর সময়ে ঘুরতে, কিছু গাছ-গাছালির সাথে পরিচিত হতে, আর তাদের অধিকাংশই ফিরবে খালি হাতে। হইত দুই এক জনের হাতে দেখা যাবে নানান প্রজাতির পাতাবাহার, বিভিন্ন ফুল, বনসাই বা ক্যাকটাস জাতীয় সৌখিন গাছের চারা, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই স্বাভাবিক নিয়মকেই অস্বাভাবিক করেছে এবারের কৃষি মেলায় শাহাবউদ্দিন মিলন। তার একক উদ্যেগে এবারের মেলা থেকে অধিকাংশ দর্শনার্থী শাক-সবজির বীজ নিয়েই বাড়ী ফিরেছেন। কেননা, “এসো বন্ধু হাতে হাত ধরি, বীজ বৃক্ষ রোপন করি” এই স্লোগান নিয়ে মিলন একেবারে বিনামূল্যে মানুষের মাঝে বিতরন করছেন শাকসবজির বীজ। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, শুধু মাত্র এই মেলাতেই নয়, এবারের বৈশাখ মাসের ১৫ তারিখ থেকেই সিম, ঢেড়শ, বড়বটি, ঝিঙে, পুইশাক, ঝিমা কলমি, চিচিংগাসহ ১১ প্রজাতির বীজ তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভা, মজমপুর, ত্রিমোহনী, হরিপুর, গট্টিয়াসহ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে বিতরন করেছেন।
তার মতে, বিশ্বের ৩৭টি দেশে চলছে দুর্ভিক্ষ, আমাদের দেশেও চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। এদেশের মানুষের আয়ের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে খাদ্য দ্রব্য ক্রয়ে। তাই আমরা প্রত্যেকেই যদি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা বা আসে-পাশের ফাকা জায়গা অনাবাদি ফেলে না রেখে শাকসবজির চাষ করি তবে এই খাদ্য চাহিদার অনেকখানি মেটানো সম্ভব।
সাহাবুদ্দিন মিলনের জনকল্যানমূলক কাজের মধ্যে আরেকটি দিক হল, তিনি বিভিন্ন মানুষের রক্তের গ্র“প ও তাদের মোবাইল নাম্বার সংরক্ষন করছেন। যে কোন ব্যক্তি ০১৭-১২২৬০৬২৭ নাম্বারে কল করে প্রয়োজনে যে কোন গ্র“পের রক্তের সন্ধান পেতে পারেন। এ পতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার খাতায় ৫৪৪ জনের নাম দেখা যায়।
হইতো সাহাবুদ্দিন মিলন বিনামুল্যে জনসাধারনকে যে পরিমান বীজ দিচ্ছেন তার অর্থ মুল্য খুবই নগন্য বা হইতবা শতকরা ৫০ ভাগ মানুষও এই বীজ ঠিক মতন রোপন করবে না। কিন্তু ৫০ না হোক, ৪০ না হোক ২৫ ভাগ মানুষও যদি এই চারা সাঠিকভাবে রোপন করে সামান্যতম পরিমানেও শাকসবজির উৎপাদন করতে পারে। তবে সেই প্রাপ্তিটাও কিন্তু নিছক কম নয়। তিনি আরো জানান, কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন ফলজ এবং বনজ গাছের চারাও বিতরন করা শুরু করবেন তিনি।
আমাদের সকলের আশা, তার এ কর্মকান্ডে অনুপ্রানিত হয়ে সমাজের সামথ্যবান ব্যক্তিরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিনা মূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ শুরু করবেন এবং বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল ভরে উঠবে সবুজে-শ্যামলে।
জানি না, শাহাবুদ্দিন মিলন সাদা মনের মানুষ কিনা, হইত আর সবার মতই তারও হৃদপিন্ডের রং লাল। কিন্তু, তার চোখের কাল মনির ভেতর তাকালেই দেখা যায়,এক অন্য রকম পৃথিবী, যেখানে শুধু সবুজ আর সবুজ।
এদেশের মাটিতে ফলে সোনার ফসল
এ মাটির নেই কোন ক্লান্তি
এ মাটিকে ভালবেসে ফসল ফলাও মিলে মিশে
থাকবে না অভাব মিটবে ক্ষুধা হবে শান্তি।
তার এই কবিতার মতই যেন তিনি ক্লান্তিহীন ভাবে আমৃত্য সকলের সেবা করে যেতে পারেন এবং তার মতন আরো কোটি মানুষের প্রচেষ্টায় আমরা একটি ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়বো যেখানে শুধু থাকবে শান্তি আর শান্তি। এই আশাবাদ আমাদের সকলের।