কয়েকদিন আগে প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। কাহিনিটা ছিল- আমার এক ছোট ভায়ের হঠাৎ করেই মৃগি রোগ হয়(রোগটার ভাল নাম মনে নেই) । এই জাতীয় পরিস্থিতিতে কি করতে হয়, তা আমার জানা ছিল না, তো আমার এক হবু ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করলাম। ও বলল, এতে ভয়ের তেমন কোন কারণই নেই। মাত্র কয়েক মিনিট পরেই খিচুনি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তবে ওই সময়টুকুতে ওর যেন কোন ভাবেই আঘাত না লাগে, আর গলাই আটোসাটো কোন পোষাক থাকলে তা খুলে দেওয়া লাগবে এবং কিছুক্ষন পর স্বাভাবিক হলে একটা ঘুমের ঔষধ খাইয়ে কিমবা ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইনজেকশন দেব কোথা থেকে? জানতে চাইলে ও বলল- আশেপাশের কোন ফার্মেসিতে ইনজেকশন দিতে পারে, এমন কাওকে দিয়ে ইনজেকশন দিলেই হবে। তবে আমরা তখন ছিলাম কুষ্টিয়ার কাটাই খানার মোড়ে, যেহেতু আমরা সদর হাসপাতাল থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই ছিলাম, কাজেই আমি ওকে বললাম- আমরা কি তাহলে হাসপাতালে যাবো। ও বলল সেটাত ভালোই হয়, তবে তেমন একটা ভয় পাবার কিছু নেই।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার রোগি দেখে বললেন, আমি কি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই ছেড়ে দেব, নাকি ভর্তি করাব। আমি বললাম, আপনি যেইটাকে ভাল হবে মনে করেন, আমরা সেটাই চাই। তিনি বললেন- তাহলে তোমরা আপাতত ভর্তি করাও, আর সুস্থ হলে বিকালের দিকেই নিয়ে যেতে পার।
আমরা ভর্তি করালাম, যথারীতি টলি ঠেলা আপা টলি ঠেলে ওয়ার্ডে এসে জরুরী বিভাগ থেকেই তার সাথে সাথে আসা দালাল ভাইটির মাধ্যমে ঘুষ চাইলেই। আমি আমার স্বভার সুলভ মনটাকে পাল্টে ফেলে ১০টাকা বখশিষও দিলাম। কারন- আমরা যেহেতু সাথে করে মেঝেতে পাতার মতন কোন কিছুই নিয়ে এসেছিলাম না, এবং নার্সদের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করেও মেঝেতে পাতার মতন কোন কিছুই পাচ্ছিলাম না, তখন ঐ দালাল ভাইটি নার্সদেরকে বলা মাত্রই, তারা আমাদেরকে একটা কম্বল দিয়েছিলেন।
তার পর সিস্টার আমাকে একটা কাগজে বেশ কয়েকটা ঔষধ এর নাম লিখে ধরিয়ে দিলেন। আমি ঔষধ কিনতে যাবার সময় ঐ দালাল ভাইটিও আমার সাথে আসলেন এবং বললেন - ভাই আমাদের একটা ফার্মেসি আছে, আপনি কি ওখান থেকে ঔষধ কিনবেন। আমি তাকে বললাম, গেটের সামনেই আমার বন্ধু বাপ্পিদের ফার্মেসি, আমি ওখান থেকেই ঔষধ কিনব (তখন, দালাল ভাইটির বেজার মুখ দেখে আমারই খারাপ লাগছিল)। তার পর যখন আমি গেটের কাছ থেকে বাপ্পিদের দোকানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাপ্পি নেই, তখন আমি দালাল ভাইটিকে বললাম- চলেন, আপনাদের দোকান থেকেই ঔষধ কিনব। কারন আমি ভাবছিলাম, ঔষধের দামত ঔষধের গায়েই লেখা থাকে। আর ফার্মেসী যদি তার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা ঔষধের লাভ থেকে অন্য কাওকে কোন অংশ দেয়, তাতেত আমার কোন কিছু যায় আসে না। আর প্রজাতন্ত্রের নিয়োগকৃত জমিদারদের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করার পরও যখন আমরা ব্যার্থ হই, তখনত একমাত্র এই দালাল ভাই আমাদেরকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
যাই হোক, ফার্মেসিতে গিয়েই বুঝলাম- বরাবরের মতই ডাক্তার সাহেব মুখে খাবার ঔষধের বদলে মানান মানান প্যাকেটে মোরা ৪/৫টা ইনজেকশনের নামই লিখে দিয়েছেন {রোগী যখন মুখে খাবার মতন অবস্থায় থাকে, তখনও কেন মুখে খাবার কম দামি ঔষধের বদলে একই মানের মানান প্যাকেটের ইনজেকশনকেই ডাক্তার সাহেবরা বেশি পছন্দ করে, তা আমি বুঝি না (আমি কি আর ডাক্তার?)},
সেই সাথে স্যালাইনত আছেই। আমি ফার্মেসির ভাইটিকে দাম যতদুর সম্ভব কম করে রাখতে বললাম । দালাল ভাইটি দামের ব্যাপারে আগেই যেমন আসস্থ করেছিল, তেমনি ভাবে ফার্মেসির ভাইটিও আমাকে আসস্থ করলেন। সব মিলিয়ে তিনি দাম বললেন ২২৬ টাকা। আমার কাছে তখন ছিলই দুইশ দশবার টাকার মতন টাকা, তাই আমি বললাম- ভাইগো আমি ২০০ টাকা দেব, আর আপনাকে একটা মেমো দেওয়া লাগবে। তিনি আমাকে একটা মেমোতে এক টানে ২২৬ টাকা লিখে দিলেন। আমি তাকে বললাম- ভাইগো মেমোকি আজকেই জীবনে প্রথম করলেই, যাই হোক- আমাকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আলাদা করে লিখে দেন। ততক্ষনে আমি ঔষধ গুলো হাতে নিয়ে নারাচারা করতে ছিলাম। তবে, শুধুমাত্র একটা ঔষধের গায়ে লেখা ৫৫ টাকা দামটাই জ্বল জ্বল করছিল। আমি সামান্য খোজাখুজির পরও অন্য কোনটার এমন কি স্যালাইনটার গায়ে লেখা দামটাও খুজে পেলাম না। এরই ফাকে ফার্মেসির ভাই ডাক্তারদের চাইতেও খারাপ হাতের লেখা লিখে, একটা মেমো লিখে ফেললেন। যার মধ্যে অনুমান করে স্যালাইন এর দাম ৬০ টাকা আর ৫৫ টাকার ঔষধটা আমি এক পলকেই মেলাতে পারলাম। তবে নিচে ৩২ টাকা লেখাটার দিকে আমার চোখটা বেশি ছিল কারন, নিচের দুই তিনটা লাইন লেখার সময় ভাইজান কি যেন, কি যেন হিসাব করতেছিলেন এবং আমি তা বুঝতে পারছিলাম । তাই আমি ভাইজানকে জিজ্ঞাসা করলাম এই ৩২ টাকাটা কোনটার দাম। তিনি কিছুক্ষন থতমত খেয়ে স্যালাইনের সুচটাকে দেখিয়ে দিলেন। এবার আমার জীবনে কয়েকবার অসুস্থ হবার সময়ের জ্ঞান কাজে লাগল, কারণ ঐ সুচটার নাম সি দিয়ে শুরু এমন কি যেন বলে, তা আমি জানতাম এবং তার হিজিবিজি লেখার শেষের থেকে দুইনাম্বার লাইনে, কোন কিছু বোঝা না গেলেও লাইনের শুরুতেই যে বড় করে সি লেখা ছিল তা আমি বুঝতে পারছিলাম। তখন আমি ঐ লাইনটাতে হাত দিয়ে বললাম- ভাই আপনি মনে হয় এইটার কথা বলছিলেন, কিন্তু আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম একেবারে নিচের লাইনটার কথা, তখন তিনি যখন এ উ শুরু করলেন, তখন আমি একে একে সব কয়টা মিলিয়ে দিতে বললাম। এবার তিনি বললেন ৩২ টাকা দাম সুচের উপর কাগজের টেপের মতন যেইটা মারে ঐ টেপের দাম। আমিত পুরা থ, এই ফুট খানিক টেপের দাম ৩২ টাকা। আমি মনে মনে ভাবলাম- হলিউড কিমবা বলিউডের কোন নায়িকার ছোট্ট পোষাকের দাম কয়েক বিলিয়ন ডলার বললেও আমি অবাক হবনা। তবে এই ছোট্ট টেপটুকুর দাম ৩২ টাকা তা আমি কখনই মেনে নিতে পারব না।
আমি তাকে আমার বিষ্ময়ের কথা জানাতেই তিনি আমাকে বললেন- আরে আমিত মোটের উপর আপনার কাছ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছি। আমি বললাম এই একটা জিনিসের দাম দেখেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে, আর অন্য গুলোর দাম মেলানোরও কোন ইচ্ছা নেয়। আবার, আপনার সাথে এ বিষয়ে কোন আলোচনা করার মতন সময়ও আমার হাতে নেই। শেষ কথা- আপনার কাছ থেকে আমি কিছু নেব না।
তার পর আমি বাপ্পির বাবার কাছ থেকে ঔষধগুলো নিলাম। আঙ্কেল আমার কাছ থেকে দাম রাখলেন ১৬৫ টাকা।(এর মধ্যে আরো ১০ টাকার একটা ঔষধ যোগ হবার পরও)
আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল, আমাদের সাথেই যদি এরা এমন অকাজ করার সাহস দেখায়, তাহলে অনান্য অসহায় মানুষদের সাথে কি করে?
আসল কাহিনী
ব্লগে আমরা প্রায় সবাই ছাগু কিমবা হাম্বা মারি। কেও কেও হাতি, ঘোড়া, তিমি, ডাইনোসর মারারও সাহস দেখায়। কিন্তু, বাস্তবে যার অধিকাংশের ফলাফলই বিনোদনটুকু ছাড়া পুরোটাই লাড্ডু।
আমি জানি- আমাদের এই ব্লগেই অনেকে আছেন, যাদের কথা আমাদের দেশের নীতি নির্ধারকদের কানে পৌছানো মতন জোড়ালো। তো- আসেন, আমরা ছোট্ট কিন্তু অতি মহৎ একটা কাজ করি। সরকারি ভাবে যেন প্রত্যক ফামের্সি থেকে বিক্রেতার কাছে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা ক্যাশ মেমো দেওয়াটাকে বাধ্যতামুলক করা হয়, সে বিষয়ে কার্যকর আন্দোলন করি। এতে করে অবশ্যই বদ বিক্রেতারা ক্যাশ মেমোতে আগডুম বাগডুম দাম লেখার সাহস দেখাতে পারবে না। আর তার ফলে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত আমাদের হাজার হাজার ভাই বোনেরা কিছুটা হলেও প্রতারনার হাত থেকে রেহাই পাবে।
মধ্যপ্রাচ্চের কুড়ে মানুষেরা যদি ইন্টারনেটের একটা ছোট্ট আন্দোলনকে বেগবান করে সরকার পতনের সফল আন্দোলনে পরিনত করতে পারে, তবে আমরা অন্তত এই ছোট্ট চাওয়াটাকে সফল করার স্বপ্ন দেখতেই পারি।
এবার আসি কাহিনীটার নাম করনের সার্থকতাই -
এর আগে ইউনিপেটুক নিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলাম। যাতে একাধিক ব্লগার ষ্টিকি করার অনুরোধ করে মন্তব্যও করেছিলেন। এবং আমার বিশ্বাস ব্লগের পোষ্টগত মান যাই হোক না কেন, লেখাটা যদি আরো বেশি মানুষ পড়ত, তবে আরো অনেকেই অন্তত ইউনিপেটুক জাতীয় কোম্পানির প্রতারনার হাত থেকে রেহাই পেত। কিন্তু, আমি জানতাম লেখাটা কখনই ষ্টিকি হবে না, তার অনেকগুলো কারনের মধ্যে একটা প্রধান কারন, আমার নিকটার নাম হাম্বা (আগে দর্শনধারী তার পর গুণবিচারি......আমার নিকটার নাম বুদ্ধিজীবি ঘরানার কিছু একটা হলেও না হয় কথা ছিল)
এই ব্লগেরই একজন ব্লগার আমার বস আব্দুল্লাহ-আল-মাসুম যার অনেক লেখায় আমার আগের চিন্তাকে পুরোপুরি ওরোটপালোট করে দিয়েছে (যেমন ), তার ব্লগেও দেখি মন্তব্য একে বারেই কম(এবং আমার মনে হয় তার এক মাত্র কারন, তার লেখায় ক্যাচাল বাধানোর মতন উপাদান কম থাকে, ব্লগের একটা খুব খারাপ চরিত্র হচ্ছে পোষ্টে যত বেশি ক্যাচাল, ব্লগ তত বেশি হিট। তাইত আমার যেই নিক গুলো ক্যাচাল বাধানো পোস্ট দেয়, সেগুলোতে মন্তব্যের ছড়াছড়ি থাকে, অথচ গোবেচারা হাম্বা নিকে যখন আমি কোন পোষ্ট দিয়ে ধীর আগ্রহে বসে থাকতে থাকতে অধির হয়ে যায়, তখনও আশানুরূপ মন্তব্য পাই না।)
সেই আব্দুল্লাহ-আল-মাসুম ভাই একদিন আমাকে বলেছিলেন - অনিক তুমি হাম্বা নামে লেখ কেন? কোন ভদ্র লোককি ঐ ব্লগে ডুকবে?
আমার চিন্তা, আমার নিকের নাম দেখে কেও আমার লেখা পছন্দ করুক তা আমি চাই না। কিন্তু কেও যদি সত্যি কারে আমার লেখা পড়ে আমাকে উৎসাহ দিয়ে কোন মন্তব্য করে, তবে সেটাই আমার অনেক বেশি বড় পাওয়া।
সবাইকে ধন্যবাদ...