somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট শহর থেকে আসা একটা ছেলের গল্প

২৪ শে জুন, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ধারনা ছিল স্কুল জীবনটা অনেক দিন থাকবে। কিন্তু হটাত করেই শেষ হয়ে গেল। তার পরে ভর্তি হলাম আমার শহরের একটা কলেজে। আমার বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কলেজ। কত আশা করে ভর্তি হলাম। কিন্তু শিক্ষক গুলো কেমন জানি। কলেজ আমার কখনো ভালো লাগেনি। আর তার সাথে কলেজের পরাশুনা গুলোও কেমন জানি লাগতে শুরু করলো। আগে দুই বছর ধরে একটা বই পড়ে তারপর এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছিলাম আর এবার ১৮ মাসে শেষ করতে হবে চারটা করে বই। তাও নাকি কম। মাথাটা প্রেশারের মধ্যে পড়ে প্রেশার কুকার হয়ে গেল। পড়াশোনা আর ভালো লাগতো না। মনে হত সব কিছু ছেড়ে বনবাসে চলে যাই। মাঝে মাঝে আমার এক বন্ধুর সাথে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতাম। হাটতে হাটতে ভবঘুরে হয়ে গেলাম। না হাটলে আর ভালো লাগেনা। হাটতাম আর দর্শন চর্চা করতাম :P । কখন যে এইচ এস সি পরিক্ষা চলে আসলো বুঝতেই পারলাম না। পরীক্ষাও দিলাম। এস এস সি পরিক্ষার মত মনে এতটা কনফিডেন্স ছিলনা। রেজাল্টও হল সেইরকম ই। ম্যথে তো একটুর জন্য ফেল করা থেকে রক্ষা পেলাম। আমার মত ছেলের এরকম রেজাল্ট হবে কেও ভাবেনি। এস এস সি তে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলাম । ক্লাস ফাইভে স্কলারশিপ। স্কুলে এককালে ফাষ্ট বয় ছিলাম। সেই ছেলে কোনোমতে পেলাম এ মাইনাস। তাও ফোর্থ সাবজেক্ট সহ। এ লজ্জা রাখি কোথায়। আব্বা আম্মা কতটা কষ্ট পেয়েছিলো সেটা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে :'( যখন বুঝলাম আমার কাছে সবার আশা পানি হয়ে গেছে । তখন মনে হল দুনিয়ে থাকার আর দরকার নাই। বাসা থেকে অনেক কষ্টে মিথ্যা বলে বের হলাম। দোকানে গিয়ে দুই ধরনের ইদুর মারার বিষ কিনলাম :S . দুনিয়ার মায়া কত ভয়ানক সেদিন টের পেলাম। তাও সাহস করে খেয়ে ফেললাম। আমার ধারনা ছিল আব্বা আম্মা আমার উপর রাগ করেছে। বিষ খেয়ে বাবার পাশে এসে বসেছি, বাবা আমার হাত ধরলেন , বললেন, বাবা যা হওয়ার হয়ে গেছে, তুমি সব ভুলে যাও আর কষ্ট পেয়ে লাভ নাই। বাবা তখনো জানেনা আমি বিষ খেয়েছি। আমার ইচ্ছা হল চিৎকার করে কাঁদি। কিন্তু শুধু ঠান্ডা মাথায় বাবা কে বললাম , আব্বা আমাকে ক্ষমা কর, আমি বিষ খেয়েছি। সাথে সাথে মনে হল আমার বাসায় কেয়ামত শুরু হয়েছে। আব্বা আম্মা আমাকে নিয়ে প্রায় উড়ে গেলেন হাসপাতালে। দুই হাত দুই পা বাধা হল, তারপর মুখের ভেতর দিয়ে একটা পাইপ ঢুকিয়ে দিয়ে ওয়াশ করা হল। কি যে বেদনাদায়ক, মনে হচ্ছিল এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ছিল। ওয়াশ করে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। হাসপাতালের বেডে বসে উপলব্ধি করলাম আমার বাবা মায়ের কাছে আমি কতটা মুল্যবান আর আমার কাছে তারা কত মুল্যবান । দিতিয় দিনে হাসপাতাল থেকে পালালাম। বাসায় এসে নতুন এক জীবন শুরু করলাম। কথা ছিল আবার পরীক্ষা দিবো। কিন্তু বাবা বললো এক বছর নষ্ট করোনা। ভর্তি হলাম দেশের একটা নাম করা প্রাইভেট ভার্সিটিতে। কখনো ভাবিনি প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়বো। আর তাও এরকম একটাতে, আমার বাবার আয় এত বেশী না। তারপরও ভর্তি হলাম।
আমাদের শহরে ঢাকার নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটি গুলোর ব্যপারে কিছু কথা প্রচলিত আছে, ওইখানে সব ডিজুস পুলাপাইন পড়ে। আর মাইয়ারা তো মাশাল্লাহ :P . আর আমি হইলাম আন্সমার্ট এর চেয়েও আনস্মার্ট , সারাদিন কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকতাম, কারো সাথে ভালোমত কথা বলতাম না, মানে আন ইম্প্রেসিভ একটা পার্সোনালিটি ।কখনো ভাবিনি এরকম একটা যায়গায় আমার মত বেমানান একটা ছেলের কোন বন্ধু হতে পারে। কিন্তু হল । আমার বাসা বগুড়ায়, প্রথমে কথা হল মমিন নামে একটা ছেলের সাথে, অর বাড়ি দিনাজপুরে, আমরা দুইজনই উত্তরবঙ্গের ছেলে। তাই ওর সাথেই আগে পরিচয় হল।
সি এস ই এর ক্লাসে আমার পার্ফরমেন্স ভালো ছিল, অনেক ছোটবেলা থেকে প্রোগ্রামিং করি, তাই বুঝে উঠতে সমস্যা হতনা। আস্তে আস্তে ক্লাসের সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল। কখনো ভাবিনি এইসব ডিজুস পোলাপাইন আমার বন্ধু হবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, আসলে ডিজুস পোলাপাইন না, সবাই আমার থেকে স্মার্ট সবাই কিন্তু বন্ধু হিসেবে আসলেই খারাপ না।
এখন আমার তৃতীয় সেমিষ্টার চলছে ভার্সিটিতে, এর মধ্যে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি। ঢাকার মত যায়গায় এমন বন্ধু পাবো ভাবিনি, আশাকরি আমাদের সবার বন্ধুত্ত চিরস্থায়ী হবে।নাদিম, সাদী, রুপা, নিপুন ... তোরা আসলেই অনেক ভালো। আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবান, তোদের মত বন্ধু পেয়ে। এই শহরটাতে আমি একা একা থাকি মা বাবা পরিবারের সবাইকে ছেড়ে , তোরা না থাকলে এতবড় একটা ভার্সিটি ক্যম্পাসে অনেক একা হয়ে যেতাম। এখন আর এত একা লাগেনা। তোদের অনেক ধন্যবাদ।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঢাকায় শান্তিতে বসবাসের জায়গাগুলো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৪৪






ঢাকায় শান্তিতে বসবাস করা যায় যেসব এলাকা: একটি বাস্তবভিত্তিক পর্যালোচনা

ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী শহর, জনসংখ্যা ও যানজটের দিক থেকে অন্যতম ব্যস্ততম নগরী হলেও এখানকার কিছু কিছু এলাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হেজেমনি, কাউন্টার-হেজেমনি ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যুদ্ধ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৪


একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে নিঃশব্দ অথচ গভীর যুদ্ধ চলে তার ইন্টেলেকচুয়াল সেক্টরে। গোলা-বারুদের বদলে এখানে অস্ত্র হয় কলম, টকশো, নাটক, পাঠ্যবই, এবং ইউটিউব। বাংলাদেশে এই হেজেমনি বহুদিন ছিল প্রথম আলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে দলীয় সরকার কখনই জনগণের সরকার হয় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:২৫



সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করলেও আওয়ামী লীগ সেটা স্বীকার করলো না। সেজন্য তারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসন শুরু করে ছিল। কিন্তু সেনা বিদ্রোহে তাদের বাকশালী শাসনের অবসান ঘটে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রস্থান-পথ কঠিন হয়ে গেছে মুহাম্মদ ইউনূসের

লিখেছেন কবির য়াহমদ্্, ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ২:২৪



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের (৮ই আগস্ট ২০২৪ থেকে চলমান...) প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা ছাড়ার পথ কঠিন হয়ে গেছে।

এমনিতেই তার পদ ছাড়ার প্রবল অনাগ্রহ, তার ওপর আছে ক্ষমতা গ্রহণের পরের মাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃষ্টি ঝরছে সারাদিন

লিখেছেন সামিয়া, ৩১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪



ইচ্ছা ছিল প্রথম আষাঢ়ে ছাদে যাবো
বৃষ্টি দেখতে,
যাওয়া হয় নাই।
বৃষ্টি তো আর ক্যালেন্ডার দেখে আসে না।
সে কখনো মাসের আগেভাগেই দরজায় কড়া নাড়ে,
আবার কখনো হুট করে হাওয়ায়
হালকা জলছবি আঁকে।

বৃষ্টি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×