(১)
কয়েক দিন যাবত রাজীব নুরের মারাত্মক ধরনের মন খারাপ, তাঁর সেলফোন বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখন আর চার্জ নিচ্ছে না, অনও হচ্ছে না! মনে হয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। একদিকে ভালোই হয়েছে ফোন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া গিয়েছে। আজ শনিবার রাজীব নুরের মন আরও খারাপ, খারাপ হওয়ার কারণ আছে! তাঁর মানিব্যাগ হারানো গিয়েছে। মানিব্যাগে বাজারের টাকা ছিলো, এখন পকেটে সামান্য ভাংতি টাকাও নেই - যে, এক কাপ চা খাওয়া যাবে। সামনে চায়ের দোকানে তিন-চারজন মিলে খুব আড্ডা দিচ্ছে চা খাচ্ছে। মনে হয়, চায়ের সাথে দেশ উদ্ধার করছে! রাজীব নুর মনে মনে বলে - “করুক দেশ উদ্ধার! দেশ উদ্ধার হওয়ার দরকার আছে”। কোনো দিন যদি সত্যি সত্যি দেশ উদ্ধার হয়! রাজীব নুরের বাড়ির সামনে দিয়ে যারা যাবে সবাইকে বিনা পয়সায় ফ্রিতে চা খাওয়াবে। ছোট ছোট কাপে করে না, বড় মগ ভর্তি ধূমায়িত চা।
মালিবাগ রেললাইন ধরে রাজীব নুর কমলাপুরের দিকে হাটতে থাকে। সময় হয়তো বেলা বারোটা-সাড়ে বারোটা হবে। কমলাপুরে আজ তেমন যাত্রী নেই, মনের অজান্তে রাজীব নুর কখন কোন ট্রেনে উঠে একটি খালি সিট পেয়ে বসে গিয়েছে সে নিজেও জানে না। শত মাইল হেটে আসা ক্লান্ত পথিকের মতো রাজীব নুর ঘুমিয়ে পড়ে ট্রেনের সিটে। যখন রাজীব নুরের ঘুম ভাঙ্গে তখন অনেক দেড়ি হয়ে গিয়েছে - আন্তঃনগর ট্রেন শো শো করে উড়ে চলেছে। ট্রেনের জানালার বাইরে রাতের অন্ধকার! রাজীব নুর পাশের সিটে বসা এক সহযাত্রীর কাছে জানতে চান “আমাদের ট্রেন এখন কোথায় আছে? ভদ্রলোক চাটগাঁয়ের ভাষায় বলেন “প্রায় চট্টগাম হবে”! ইয়া আল্লাহ একি বিপদ! সব বিপদ বেছে বেছে রাজীব নুরের উপরেই কেনো আসে, সে বুঝতে পারে না। তাঁর কাছে এক টাকাও নেই, সে আবার বসে আছে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস এসি কোচে। আরও ভয়ংকর বিষয় রাজীব নুরের সিট নাম্বার ১৩! এখন যদি টিসি এসে ধরে তাহলে মান ইজ্জত নিয়ে টানাটানি অবস্থা হবে। রাজীব নুরের ইচ্ছে করছে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে! ইউনুস নবী মাছের পেটে আল্লাহকে ডেকে উদ্ধার হয়েছিলেন, রাজীব নুর ট্রেনের পেটে বসে আল্লাহকে ডাকতে থাকে! রাজীব নুরের ডাক আল্লাহ শুনতে পেয়েছেন কিনা জানা নেই, তবে ট্রেন সীতাকুণ্ড আউটারে কি কারণে যেনো পাঁচ সেকেন্ডের জন্য থামে বা গতি ধীর করে! - রাজীব নুর প্রায় লাফিয়ে ট্রেন থেকে নেমে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ইয়া আল্লাহ টিসি ধরলে মান ইজ্জত নিয়ে ভয়াবহ অবস্থা হতো। রাজীব নুর জীবনে টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠেনি।
(২)
ট্রেন থেকে নেমে রাজীব নুরের মনে হলো, বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে। গহীন অন্ধকার রাত, আকাশের সাথে লেগে আছে অন্ধকার পাহাড়! আশে পাশে কোনো বাড়ি ঘর নেই। ক্ষুধার জ্বালায় পেটে আগুন জ্বলছে, সকালে দুইগ্লাস পানি আর তিনটি গ্লোকোজ বিস্কুট খেয়েছিলো মাত্র। এই খাবার খেয়ে একটি চড়ুই পাখিও দিন পাড়ি দিতে পারবে না। আর রাজীব নুর'তো আস্ত জলজ্যান্ত একজন মানুষ। হঠাৎ রাজীব নুরের চোখে পড়ে আগুনের আলো! রেল লাইনের পাশে একটি ছোট্ট ঘর - খুব সম্ভব টিমটিম করে রান্নার আগুন জ্বলছে! রাজীব নুরের খুশিতে মাটিতে গড়াগড়ি করতে ইচ্ছে করে। সে দৌড়ে প্রায় উড়ে ঘরটির পাশে গিয়ে দাড়ায়! একটি কুঁড়েঘর আর সত্যি সত্যি রান্না হচ্ছে - মাটির চুলোতে চাল ডাল আলু টমেটো দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না হচ্ছে। অসম্ভব মজাদার ঘ্রাণের রান্না! এতো মজাদার ঘ্রাণের খিচুড়ি মনে হয় শুধু স্বর্গে পাওয়া সম্ভব। আরও আশ্চর্যের বিষয়, রাতের অন্ধকারে কুপির আগুনের সামনে বসে মাটির চুলোতে আলো আঁধারে যিনি রান্না করছেন তিনি বিশ্ব বিখ্যাত “চে গুয়েভারা”!
(৩)
চে গুয়েভারা ধূমায়িত মগ ভর্তি চা রাজীব নুরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হতবাক করে পরিচ্ছন্ন শুদ্ধ বাংলায় বলেন “রাজীব নুর আপনি কেমন আছেন? আপনার কন্যা ফারাজা কেমন আছে? - আমি চাঁদগাজী।
ছবি: Che Guevara
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৩:১৩