আজ ভোর সকাল হতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এমনিতে আমাদের অন্ধগ্রামে বেশ ভালো বৃষ্টি হয়ে থাকে। এক সময় গ্রামে অধিকাংশ পরিবার ছিলো কৃষি নির্ভর। তাই বৃষ্টিকে বলা হতো আমাদের গ্রামের জন্য আশীর্বাদ। ফসলি জমিতে যথেষ্ট ভালো ফসল হতো। তিতাস নদীর তীরবর্তী গ্রাম হওয়ার কারণে একটা সময় ছিলো যখন পানি ও মাছের অভাব হতো না, প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। যা এখন কল্পনা মনে হয় অথবা মনে হতে পারে নিছক গল্প। এখন বর্ষাকালেও তেমন পানি হয় না। তেমন মাছও নেই। পানির জন্য নদীতে বার বার ড্রেজিং করা হয়েছে। নদীতে মাছ ছাড়া হয়েছে। মরতে মরতে আমাদের নদী যেনো আবারও বেঁচে উঠার জন্য লড়াই করছে। নদীর এই বেঁচে থাকার লড়াই দেখে নিজের কাছেও ভালো লাগে।
আমাদের গ্রাম সহ আশেপাশের গ্রামে প্রচুর প্রবাসী আছেন যেই কারণে অনেক ফসলি জমিতে নিয়মিত ফসল না করার কারণে ফসলি জমিগুলো প্রায় পতিত অবস্থায় থাকে বারো মাস। দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষ করে যারা দেশে ফিরে আসছেন তারা আর জমিজমাতে কাজ করার মতো শারীরিক অবস্থায় থাকেন না। কৃষি নির্ভর গ্রামটি কিভাবে কখন যেনো প্রবাস নির্ভর হয়ে গিয়েছে তা সময়ের দৌড়ে কেউ বুঝতেও পারেনি। যখন মোটামোটি কেউ কেউ বুঝতে পেরেছেন তখন দেখা গেলো - গ্রামশূন্য! মানুষ নেই। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশী হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ পরিবারের পুরুষ প্রবাসে! এমনকি এমনও পরিবার আছে যেই পরিবারের চার - পাঁচ জন পুরুষের মধ্যে সকলেই প্রবাসে। মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে ইয়োরোপ আমেরিকা কানাডা সহ জাপান অষ্ট্রেলিয়া - এমন কোনো দেশ নেই যেই দেশে এই অন্ধগ্রামের মানুষ না গিয়েছেন।
এখন সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত নেমেছে এখনও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রামে প্রচুর কাজ জমে আছে। একটি কাজ শেষ করলে আরো দশটি কাজ তৈরি হয়। এই অন্ধগ্রামের কাছে আমি নানান ভাবে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার মতো ক্ষমতা আল্লাহপাক আমাকে দেননি। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি কৃষি নির্ভর গ্রাম তৈরি করতে। চেষ্টা করছি আমাদের অন্ধগ্রামের মানুষ আবারও কৃষিতে ফিরে যাবেন। ফসলি জমিতে কাজ করে ক্লান্ত শরীরে রাত নামার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়বেন! - হয়তো সেই দিন আর ফিরে আসবে না, তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই মাটিতে আমার জন্ম এই মাটির কাছে আমার অনেক অনেক ঋণ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:১৯