মাথা ঝিম ধরে আছে। দুদিন যাবত জ্বর নিয়ে আজকের পুরোটা দিন অপেক্ষায় অপেক্ষায় চকচকে সোনালী সূর্য্য কখন যে লাল হয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে ভাবতেও অবাক লাগছে। এটুকু বুঝতে পারছি আজকের মতো বেলা শেষ, আজ হয়তো মাছ পাবো না। একা একা এতো দুরে আসাও মনে হয় ঠিক হয়নি। যাক, আরেকবার বিলে চক্কর দেই কিন্তু সারাদিনের রোদের তাপে আর ক্ষুধার্ত অভুক্ত শরীরে শুধু ক্লান্তি এসে ভর করছে। ক্লান্ত অবসন্ন আর বিষন্ন মনে জলের পানে চেয়ে থাকি ছোট্ট এক দুটি মাছের আশায়।
হালকা বাতাসের ঢেউয়ে স্বচ্ছ জলে দেখতে পাচ্ছি ঝকঝকে ছোট ছোট দুটি মলা মাছ এগিয়ে আসছে, ভাবতেও ভালো লাগছে আজ আমার সন্তানরা খুব ভালো আহার করবে। ক্লান্ত শরীর ঝাকুনি দিয়ে অবসন্নতা দুর করতে চেষ্টা করি, আশে পাশে দেখে নেই “আর কেউ নেই তো? - না, কোথাও কেউ নেই”। সাবধানে এগিয়ে আসি - খুব সন্তর্পনে। ঠান্ডা হালকা বাতাসে এখন বেশ ভালোই লাগছে, দুর থেকে ভেসে আসছে শস্যের মিষ্টি ঘ্রাণ। ক্রোচড - ছোট্ট একটি শব্দ কানে লাগার সাথে সাথে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে আমি ছিটকে পরি, বুকে বিঁষাক্ত কিছু আটকে গিয়ে তির তির করে লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমার সাদা পালক। আহারে - আহারে, মা হারা দুটি সন্তান ঘরে রেখে এসেছি। ছোট অবুঝ তারা - এখনো উড়তে জানে না। তাদের মা এভাবেই আমার সামনে নন্দির বিলে ছিটকে পরেছিলো! রক্তে মাখামাখি হয়ে জীবনের শেষ সময়ে বার বার আমাকে বলেছিলো আমি যেনো তাদের নিয়ে এখান থেকে চলে যাই। - আরে বোকা, এদের নিয়ে আমি কোথায় যাবো, এরা তো উড়তেই জানে না!
আহারে - আহারে, আমি কি একবারের জন্য আমার ঘরে যেতে পারবো, অন্তত একবার? আমার অবুঝ দুটো সন্তান অনাহারে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা তো উড়তে জানে না। আমি একবারের জন্য তাদের দেখবো। খুব কষ্টে চোখ খুলে রাখি, দুর দিগন্ত দেখা চোখ আজ দ্রুত ঘোলা হয়ে আসছে, আর কোনো দিন হয়তো সন্তানদের সাথে দেখা হবে না। খেলা হবে না একসাথে। খুব শখ ছিলো একসাথে উড়বো খোলা আকাশের দুর দুর প্রান্তে - খুব শখ ছিলো নতুন ঘর করবো। আচ্ছা এমন কি সম্ভব বাঁশ বাগানে কেউ আমার মতো আমার সন্তানদের একবেলা খাওয়াবে, শুধু মাত্র একবেলা চকচকে দুটো মলা মাছ। তারপর তাদের বাসা থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলেই হবে - এরা উড়তে পারবে। খুউব পারবে। পারতেই হবে। এমন কি সম্ভব কেউ আমার মতো - - -
উপসংহার: আমার প্রতিটি লেখায় একটি উপসংহার দেয়ার চেষ্টা করি, এই লেখায় কোনো উপসংহার নেই। শুধু ব্লগারদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই “বাংলাদেশের মানুষ কবে মানুষ হবে আর পাখি হত্যার মতো নিকৃষ্ট অপরাধ কবে বন্ধ করবে”?
=========================================================================
ছবি: গুগল সার্চ ইঞ্জিন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।।
পূর্ব প্রকাশ: আমার “ক্রোচড” ছোট গল্পটি সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকায় (সম্ভবত ১৯৯৫ সন) ঈদ সংখ্যায় ছাপা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১৪