জুন ২০০৭, মধ্যরাত হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসি, না কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে না, শ্বাস কষ্ট হচ্ছে অত্যাধিক আর গরম, অথচ রুমে এসি চলছে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, আমার মনে হচ্ছিলো আমি অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি, প্রাণপন চেষ্টা করছি ভেসে থাকার কিন্তু শরীর সিসার মতো অসম্ভব ভারী তাই পানিতে তলিয়ে যাবো, বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াই - আমি একবার এদিকে যাই, একবার ওদিকে যাই। একবার শুয়ে পরি, একবার বসি। কখনো বা দরজা খুলে বাইরে গিয়ে হাটাহাটি করি !!! - আমার স্ত্রী ততক্ষনে উঠে বসেছেন তিনি চিন্তিত, কিন্তু বুঝতেও পারছেন না আমি কতোটা অসুস্থ, আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন, হয়তো ঘুমের রেশ তখনো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি, অথবা আমার সমস্যা বুঝতেই পারছেন না !!!
এখন আমার কোন চাহিদা নেই। শুধু স্বাভাবিক ভাবে একটু নিশ্বাস নিতে পারলেই আমি পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন হই। অথচ, গতকাল ও আমি সুস্থ ছিলাম, কত তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েই কতো অসুখী হয়ে পরতাম আমি।
মানুষেরা যখন সুস্থ থাকে, যখন তার মৌলিক চাহিদা গুলো মিটে, যখন সে স্বাধীন থাকে, পরিবারের যার যার মতো সে ভালো থাকে, তখন একজন মানুষের এরকম ভাবার কথা যে “আমি ভালো আছি”। ভালো থাকা অবস্থায়, মনের মাঝে একটা সন্তোষ নিয়ে আর একটু ভালো থাকার জন্য তিনি কাজ করবেন, নানান উদ্যোগ নেবেন, এটি তার জন্য, তার পরিবারের জন্য, সমাজ ও দেশের জন্য ভালো। এইসব প্রয়াস, উদ্যোগ এবং কর্মকান্ড গুলো হয় আইন মাফিক সত্য, সুন্দর, কল্যাণকর এবং সমাজ ও পরিবেশ বান্ধব। সে অবস্থায় একজন ব্যক্তি, বাজারে কেনা যায় এমন ভালো লাগার বাইরেও প্রকৃতিতে, পরিবেশে, সম্পর্কে, সংস্কৃতিতে যে অফুরন্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভালো লাগা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেটা দেখতে পান এবং সেসব সে নানান ভাবে অনুভব-উপভোগ করে, কখনো একাকি, কখন অন্যের সাথে মিলে মিশে।
***মনীষা কৈরালা - নেপালের মেয়ে, এক সময়ের বলিউডের উজ্জল তারকা বলেন, "যখন দেখি, সবুজ ঘাসের উপর যে পা সেটি আমার তখন ভীষন ভালো লাগে, যখন গায়ে একটু হাওয়া লাগে, একটু নীলাকাশ দেখতে পাই তখন জীবনকে বড় সুন্দর মনে হয়।" দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগে সুস্থ হয়ে এমন উপলব্দি হয়েছিল তার।
অসুস্থ হলে মানুষেরা ছোট ছোট নানান উপাদানে আনন্দ পায়, সুস্থ অবস্থায় যার তেমন আবেদন নেই। ভালো লাগা এবং ভালো থাকা যখন প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে উঠে তখন তার কোন মাধুর্য থাকেনা। তখন ব্যপারটা সম্পুর্ন বানিজ্যিক হয়ে উঠে। প্রকৃতি, রুচী, মনন, মানবতা সেখানে কাজ করেনা। এ ধরনের ভালো থাকার রুপ কদর্য। সমাজ ও দেশের জন্য হুমকি। এক চিলতে রোদ, এক পশলা বৃস্টি, একটি মিষ্টি হাসি আমাদের ভালো লাগার উপাদান হতে পারে। আমরা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন সুস্থতায় আরাধনা হয়ে উঠে। শুদ্ধতা চাইতে হবে সুস্থ সময়। চলুন সুস্থ থাকি। চলুন শুদ্ব হই।
*** জুন, ২০০৭ এ - আমার হাই ব্লাড প্রেসার ১৮০/১২০ ধরা পরে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আনুমানিক ভোর ০৫:০০ টায় । আর্মি ডাক্তার ও নার্সদের অক্লান্ত চেষ্টা ও চিকিৎসা আর পরম করুণাময়ের দয়ায় আমি আবার ফিরে আসি নিজ বাসায়, নিজ অফিসে, নিজ ভূবনে - আমার আম্মা, চাচী, ফুফু, আমার স্ত্রী সহ আমার ছেলেমেয়ে - বাসায় সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন - আমি ধমকে উঠি তারা অশ্রুচোখে হাসেন, আমার ফুফু আমাকে বলেন “বাবা তুই আরো ধমক দে, তোর ধমক শুনতে ভালো লাগে রে বাপধন” ! - বুক ভরে শ্বাস নিতে ভালো লাগে, আহঃ এটাই হয়তো বেঁচে থাকার আনন্দ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪