বকরী ঈদ সিজনে বেহেস্তে পুরো উলটো কাহিনি। বেহেস্তের মেইন গেটের বাইরে বিশাল লাইন। ভাববেন না মমিন মুসলমানদের লাইন। মমিন মুসলমান ইদানিং দিনে একটার বেশি দুইটা ঢুকলে ফেরেশতাদের ঈদ লেগে যাবার দশা। এই ইহুদি-নাসারাদের যুগে মমিন মুসলমান পাওয়া বিশাল ভাগ্যের।
লাইনটা গরু ছাগলের। বিরাট গরু ছাগলের লাইন। সাথে আরও আছে উট দুম্বা। বিরাট গরু ছাগলের হাটের পর এবার তারা দাঁড়িয়ে আছে বিরাট গরু ছাগলের বেহেস্ত রেজিস্ট্রেশন লাইনে। হাজারে হাজার, লাখে লাখ, কোটিতে কোটি, বলদ-গাভী-বকনা-বাছুর-খাসী-ভেড়া-ছাগল -উট-দুম্বার জমজমাট আসর। সবার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক, জবাই করা গলা দিয়ে মৃদু ওয়াক্কা ওয়াক্কা সুর বের হচ্ছে।
টানা ৭০ কিলোমিটাররের লাইনে মাত্র ৪টা মমিন মুসলমান। শত কোটি মুসলমানদের এই পৃথিবীতে মাত্র এই চার জন নেকি মিটারে পাস করে বেহেস্তে রেজিস্ট্রির পারমিশন পেয়েছে। বুঝুন অবস্থা!
অবস্থা হতাশাজনক দেখে মহান আল্লাহতালা বিরক্ত হয়ে মিখাইলের উপর সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এইসময় ভেকেশনে থাকেন গত ত্রিশ বৎসর ধরে। এবার ঠিক করছেন বিটিভির ঈদ উপলক্ষে সবগুলা নাটক, টেলিফিল্ম, ঈদ সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন দেখে মুখস্ত করে ফেলবেন।
মিখাইল সাহেবের দায়িত্বজ্ঞান সাংঘাতিক। ভালই ম্যানেজ করতে পারেন সবকিছু। তবে বকরী ঈদের এই বিরাট গরু ছাগলের লাইন নিয়ে তিনি নিজেই বড়ই টেনশিত। আর বেশি দিন এভাবে চললে বেহেস্তে মমিন মুসলমানের সংখ্যার থেকে গরু ছাগলের সংখ্যা দশ গুন হয়ে যাবে। পরিসংখ্যান তাই বলে। জায়গার অভাব নেই। তারপরও পাব্লিক যখন দেখবে মমিনের চেয়ে গরু ছাগলের সংখ্যা বেশি, উলটা পালটা কথা কানে আসবেই। বেহেস্ত আর বেহেস্তখানা থাকবেনা। পার্মানেন্ট বিরাট গরু ছাগলের হাট হবে। দোজখবাসী ইহুদি-নাসারা-নিন্দুকেরা এখনই বলে,"কি ঘোড়ার ঘাস কাট সারাদিন, বেহস্তটাতো বলদ খাসি দিয়া ভইরা ফেললা"!
টেনশনে মিখাইলের ঘুম হয় না। মাঝে মাঝে তার চিন্তা হয়, মহান আল্লাহতালা যদি বেহেস্তের মমিন বান্দাদের প্রডাকশন ক্ষমতা দিতেন, তাহলে এই ক্যারফায় পরতে হত না। মাগার বেশি নাপতালি করতে যেয়ে দিছেন মমিন বান্দাদের খাসি বানিয়ে। এইবার ঠেলা সামলান! গরু বাছুর দিয়েই ভরুক সাধের বেহেস্ত।
কথায় আছে, যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।
গোঁদের উপর বিষফোড়া কাকে বলে, মিখাইল সাহেব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। আশংকা করছেন পরিস্থিতি একটা ভয়ঙ্কর দিকে মোচর খেতে যাচ্ছে - -
কোরবানির ফজিলতে বেহেস্তবাসী গরু ছাগল দুম্বা আর উটের বেশির ভাগই মাটির নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুমিষ্ট হ্রদের শরাবন তাহুরা খেয়ে টাল হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কোন কাজ কাম নেই, লাঙ্গল ঠেলতে হয়না, ঘানি টানতে হয়না, কাঁধে সওয়ার নিতে হয়না। মজ্জাই মজ্জাই।
আর বেহেস্তের ঘাসগুলা খেয়ে খেয়ে এক একটা হাতির সাইজ নিয়েছে।
এদিকে বলদ খাসি গুলারে বেহেস্তের ডিফল্ট বিধান অনুযায়ী সক্ষম করে দেয়া হয়। উপরন্তু সেক্স পাওয়ার সাত গুন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আর ষাঁড় পাঁঠা গুলাতো আগে থেকেই মাশাল্লাহ ! !
কিন্তু প্রব্লেম হচ্ছে গাভী আর মাদী ছাগলের সংখ্যা হাতে গোনা। দুনিয়ার মমিন বান্দাগুলান প্রজননক্ষমতা ও দুধের জন্য গাভী বা মাদী ছাগল কুরবানি দিতে চায় না। অন্তত খুব বেশি ঠেকায় না পড়লে। সেই অনুযায়ী বেহস্তে গাভী মাদি ছাগলের সাপ্লাই নেই বললেই চলে।
তাহলে এই হাতি সাইজের, সাতগুনবেশি সেক্স পাওয়ার সম্পন্ন গরু ছাগল উট দুম্বা গুলার সেক্সের সমাধান কি? জোড়া কোথায়?? ক্ষমতা প্রয়োগের জায়গাটি কোথায়??? ব্যাবহার্যতা কোথায়????
এই সেদিন মিখাইল নিজ চোখে দেখল, এক দেশি বলদ অধুনা বেহেস্তি ষাঁড় শরাবন তাহুরায় টাল হয়ে ঢুলে ঢুলে রাস্তার পাশের ঘাস খাচ্ছিল। রিজার্ভের এক হুর ঐ সময় পাশ দিয়া যাচ্ছিল। ষাঁড়টা আতকা দৌড়ে এসে সামনের দুইপা উচু করে ... ... ... ছি ছি ছি।
লজ্জায় মিখাইলের মাথা হেট হয়ে আসে।
এভাবে আর কয়দিন আটকে রাখা যায়, বেহেস্তর কোনা-কাঞ্চিতে অনেক ঘটনাই ঘটছে ইদানিং। হালকা হালকা আওয়াজ আসে কানে। অন্যান্য ফেরেস্তারাও চুপ মেরে থাকে আজকাল। ভয়ে লজ্জায় বিস্তারিত কিছু বলেনা।
মিখাইলের অস্থিরতা বাড়তেই থাকে।