somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদা এক ধরাধাম গুরু ন্যাড়া বাবা যেভাবে পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান করিয়াছিলেন

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুদীর্ঘ অন্তর্ধানান্তর আশ্রমে ফিরিয়া আসিয়াছেন ধরাধাম গুরু ন্যাড়া বাবা।
গাবগাছের তলায় পদ্মাসনে বসিয়া হাক দিলেন; “আয়রে আমার টিয়া, আয়রে আমার ময়না!!”

সাজসাজ রব পড়িয়া গেল চতুর্দিক। প্যা পো … প্যা পো। আনাচে-কানাচের হরিদাস পাল ভক্তবৃন্দ হন্ত-দন্ত ছুটিয়া আসিল। “কই আছিলেন গুরু? খবর সবর কি? কি কাহিনি? কি ইতং??” গুরুর সুদীর্ঘ প্রয়ানে ভক্তকূল বেজায় উদ্দীগ্ন, উদ্বেলিত, কাতর; সেইসাথে আশায় বুক বাধাঁ “পরমেশ্বরের অস্তিত্বের কি প্রমান আনিয়াছে গুরু?”

ঢোল বাজিল,সানাই বাজিল, কলাপাতায় ফিন্নি রাঁধিল। ফিন্নি খাইয়া গুরু কহিলেন “সে এক বিরাট ইতিহাস!” হরিদাস পালেরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিল। গুরুর কাজকাম; সেতো বিরাট ইতিহাসই হইবে। আজ্ঞে তারপর …

“নাস্তিকে মেট্টিকের ফেল” বলিয়াই গুরু হাসতে হাসতে লুটোপুটি। হরিদাস পালগণ কিয়ৎক্ষন পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিল। রেলের লাইনে চাকরী পাইতে মেট্টিকের প্রয়োজন আছে। পরমেশ্বরের সাথে তাহার কি যোগ; বুঝিতে পারেনা। তবে গুরু যেহেতু হেসে খুন, হরিদাস পালেরাও খানিক “হেহ হেহ” করিয়া কাষ্ট্য হাসি হাসিয়া ফের সুধায় “ঈশ্বরের কোন খোজ পাইলেন গুরু?”

“আরে রাখো তোমাদের ঈশ্বর”
ঝেড়ে ওঠেন গুরু ন্যাড়া বাবা।
“নাস্তিকে আংরেজি জানেনা” বলিয়াই গুরু খ্যাক খ্যাক করিয়া পদ্মাসন হইতে মাটিতে শুইয়া গড়াগড়ি করিতে থাকেন। হাসির দমকে ভুড়ি খানা কাপিয়া উঠিতেছে।

হরিদাস পাল কাহিনি কিছুই ধরিতে পারেনা। পরেমেশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক ‘নাস্তিকে আংরেজি না জানা’র যোগসুত্র কি, ভাবিতে ত্থাকে। কিন্তু এত ভাবলে কি চলিবে? গুরুকে তালও দিতে হইবে যে, নইলে পরমেশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করিবে কোনজন? তাই হরিদাস পাল কাল বিলম্ব না করিয়া নৃত্য আরম্ভ করিল। তা তা থৈ থৈ তা তা থৈ থৈ। ঝাকানাকা ঝাকানাক দেহ দোলা না।

মাতম কিঞ্চিত ঝিমাইয়া আসিলে, গুরু একটু স্থির হইয়া চতূর্দিক দেখিয়া লয়। হরিদাস পালের সংখ্যা গুনিয়া নেয়। গণনা শেষে তুষ্ঠ্য চিত্তে চোয়ালের হাড় শক্ত করিয়া বলিলেন “আই এম এ এমে পাস ফাস্ কেলাস!”
হরিদাস পালের ভিড়ে কিঞ্চিত চাঞ্চল্য দেখা দেয়। রব পরিণত হয় কোলাহলে। গুরুর এহেন ফাস কেলাস প্রাপ্তিতে পরমেশ্বরের কি লাভ-ক্ষতি তাহা হাটু চুলকাইয়াও পরিস্কার হয় না বটে তবে ভক্তকুলের বুকের ছাতি দুই দেড় ইঞ্চি প্রশস্ত হয়, শরীরে এক প্রকার তাকত অনুভুত হয়। নিখিল ধরাধামে এই প্রকার এমে পাস ফাস্ কেলাস গুরু আর কোথায় কারই বা আছে।

আচানক, এক হরিদাস পাল ম্যাতকার করিয়া উঠে “ইউরেকা! ইউরেকা!!” … “পাইছি! পাইছি”!! সকলে ফিরিয়া চায় তাহার দিকে! এযে গোবরধনের পুত্র লেদাধন, বোস বাড়িতে ছাগল চড়ানোর কাজ করে। শেষ পর্যন্ত ছাগল সাহচর্যে তাহার বুদ্ধি খুলিল নাকি, সকলেই অবাক। কৌতুহলি দৃষ্টি ঘিরিয়া তোলে তাহাকে। লেদাধন ভাব মারিয়া সামনে আউগায় যায়। গুরুর কাছাকাছি আসিয়া, পশ্চাদদেশে তীক্ষ্ণ একটা ঘুর্নি তুলিয়া ১৮০ ডিগ্রী ঘুড়িয়া দাঁড়ায় সমবেত হরিদাস পালের উদ্দেশ্যে। রহস্য পরিস্কার করে “ভাইসব, যেহেতু নাস্তিকে মেট্টিক ফেল এবং আমাগের গুরু ন্যাড়া বাবা এমে পাস ফাস্ কেলাস- সুত্রাং আমাগের পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানিত। পরমেশ্বর আমাগের সাথে আছেন, আমাগের গুরুর সাথে আছেন, পরমেশ্বর না থাকিলে আমাগের গুরুর এমে পাস সম্ভব ছিল না, ফাস কেলাস সম্ভব ছিল না। অতঃএব পরমেশ্বরের অস্তিত্ব সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত এবং প্রতিষ্ঠিত”। বক্তব্য শেষ হইবা মাত্র হরিদাস পালগণ সমস্বরে চিৎকার করিয়া ওঠে, “জয় পরমেশ্বরের জয়!! … জয় গুরু এমে পাস ফাস কেলাস ন্যাড়া বাবার জয়”!!

অতঃপর ধরাধাম গুরু ন্যাড়া বাবা হৃষ্ট চিত্তে লেদাধন কে কাছে ডাকিলেন, পিঠ চাপড়াইয়া আশির্বাদ করিলেন; বলিলেন “সাব্বাশ বেটা, তুই আমার যোগ্য ধর্মপুত্, তোকে আর ছাগল চড়াতে হবে না; নে এই আশ্রমের চাবিখানা; সকল দায় দায়িত্ব তোর ঘাড়ে।”

পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান হইবার পর থেকে লেদাধন আশ্রমেই থাকে, ছাগল চড়ায় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:৩০
৩৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×