সুদীর্ঘ অন্তর্ধানান্তর আশ্রমে ফিরিয়া আসিয়াছেন ধরাধাম গুরু ন্যাড়া বাবা।
গাবগাছের তলায় পদ্মাসনে বসিয়া হাক দিলেন; “আয়রে আমার টিয়া, আয়রে আমার ময়না!!”
সাজসাজ রব পড়িয়া গেল চতুর্দিক। প্যা পো … প্যা পো। আনাচে-কানাচের হরিদাস পাল ভক্তবৃন্দ হন্ত-দন্ত ছুটিয়া আসিল। “কই আছিলেন গুরু? খবর সবর কি? কি কাহিনি? কি ইতং??” গুরুর সুদীর্ঘ প্রয়ানে ভক্তকূল বেজায় উদ্দীগ্ন, উদ্বেলিত, কাতর; সেইসাথে আশায় বুক বাধাঁ “পরমেশ্বরের অস্তিত্বের কি প্রমান আনিয়াছে গুরু?”
ঢোল বাজিল,সানাই বাজিল, কলাপাতায় ফিন্নি রাঁধিল। ফিন্নি খাইয়া গুরু কহিলেন “সে এক বিরাট ইতিহাস!” হরিদাস পালেরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিল। গুরুর কাজকাম; সেতো বিরাট ইতিহাসই হইবে। আজ্ঞে তারপর …
“নাস্তিকে মেট্টিকের ফেল” বলিয়াই গুরু হাসতে হাসতে লুটোপুটি। হরিদাস পালগণ কিয়ৎক্ষন পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিল। রেলের লাইনে চাকরী পাইতে মেট্টিকের প্রয়োজন আছে। পরমেশ্বরের সাথে তাহার কি যোগ; বুঝিতে পারেনা। তবে গুরু যেহেতু হেসে খুন, হরিদাস পালেরাও খানিক “হেহ হেহ” করিয়া কাষ্ট্য হাসি হাসিয়া ফের সুধায় “ঈশ্বরের কোন খোজ পাইলেন গুরু?”
“আরে রাখো তোমাদের ঈশ্বর” ঝেড়ে ওঠেন গুরু ন্যাড়া বাবা।
“নাস্তিকে আংরেজি জানেনা” বলিয়াই গুরু খ্যাক খ্যাক করিয়া পদ্মাসন হইতে মাটিতে শুইয়া গড়াগড়ি করিতে থাকেন। হাসির দমকে ভুড়ি খানা কাপিয়া উঠিতেছে।
হরিদাস পাল কাহিনি কিছুই ধরিতে পারেনা। পরেমেশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক ‘নাস্তিকে আংরেজি না জানা’র যোগসুত্র কি, ভাবিতে ত্থাকে। কিন্তু এত ভাবলে কি চলিবে? গুরুকে তালও দিতে হইবে যে, নইলে পরমেশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করিবে কোনজন? তাই হরিদাস পাল কাল বিলম্ব না করিয়া নৃত্য আরম্ভ করিল। তা তা থৈ থৈ তা তা থৈ থৈ। ঝাকানাকা ঝাকানাক দেহ দোলা না।
মাতম কিঞ্চিত ঝিমাইয়া আসিলে, গুরু একটু স্থির হইয়া চতূর্দিক দেখিয়া লয়। হরিদাস পালের সংখ্যা গুনিয়া নেয়। গণনা শেষে তুষ্ঠ্য চিত্তে চোয়ালের হাড় শক্ত করিয়া বলিলেন “আই এম এ এমে পাস ফাস্ কেলাস!”
হরিদাস পালের ভিড়ে কিঞ্চিত চাঞ্চল্য দেখা দেয়। রব পরিণত হয় কোলাহলে। গুরুর এহেন ফাস কেলাস প্রাপ্তিতে পরমেশ্বরের কি লাভ-ক্ষতি তাহা হাটু চুলকাইয়াও পরিস্কার হয় না বটে তবে ভক্তকুলের বুকের ছাতি দুই দেড় ইঞ্চি প্রশস্ত হয়, শরীরে এক প্রকার তাকত অনুভুত হয়। নিখিল ধরাধামে এই প্রকার এমে পাস ফাস্ কেলাস গুরু আর কোথায় কারই বা আছে।
আচানক, এক হরিদাস পাল ম্যাতকার করিয়া উঠে “ইউরেকা! ইউরেকা!!” … “পাইছি! পাইছি”!! সকলে ফিরিয়া চায় তাহার দিকে! এযে গোবরধনের পুত্র লেদাধন, বোস বাড়িতে ছাগল চড়ানোর কাজ করে। শেষ পর্যন্ত ছাগল সাহচর্যে তাহার বুদ্ধি খুলিল নাকি, সকলেই অবাক। কৌতুহলি দৃষ্টি ঘিরিয়া তোলে তাহাকে। লেদাধন ভাব মারিয়া সামনে আউগায় যায়। গুরুর কাছাকাছি আসিয়া, পশ্চাদদেশে তীক্ষ্ণ একটা ঘুর্নি তুলিয়া ১৮০ ডিগ্রী ঘুড়িয়া দাঁড়ায় সমবেত হরিদাস পালের উদ্দেশ্যে। রহস্য পরিস্কার করে “ভাইসব, যেহেতু নাস্তিকে মেট্টিক ফেল এবং আমাগের গুরু ন্যাড়া বাবা এমে পাস ফাস্ কেলাস- সুত্রাং আমাগের পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রমানিত। পরমেশ্বর আমাগের সাথে আছেন, আমাগের গুরুর সাথে আছেন, পরমেশ্বর না থাকিলে আমাগের গুরুর এমে পাস সম্ভব ছিল না, ফাস কেলাস সম্ভব ছিল না। অতঃএব পরমেশ্বরের অস্তিত্ব সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত এবং প্রতিষ্ঠিত”। বক্তব্য শেষ হইবা মাত্র হরিদাস পালগণ সমস্বরে চিৎকার করিয়া ওঠে, “জয় পরমেশ্বরের জয়!! … জয় গুরু এমে পাস ফাস কেলাস ন্যাড়া বাবার জয়”!!
অতঃপর ধরাধাম গুরু ন্যাড়া বাবা হৃষ্ট চিত্তে লেদাধন কে কাছে ডাকিলেন, পিঠ চাপড়াইয়া আশির্বাদ করিলেন; বলিলেন “সাব্বাশ বেটা, তুই আমার যোগ্য ধর্মপুত্, তোকে আর ছাগল চড়াতে হবে না; নে এই আশ্রমের চাবিখানা; সকল দায় দায়িত্ব তোর ঘাড়ে।”
পরমেশ্বরের অস্তিত্ব প্রমান হইবার পর থেকে লেদাধন আশ্রমেই থাকে, ছাগল চড়ায় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:৩০