দূরের কোনো শহরে বেড়াতে গিয়ে হোটেলে উঠে কিংবা বন্ধুদের সাথে হ্যাং আউটে চীনা রেস্তোরাঁয় ঢুকে জানলেন সেখানেও আছে ফ্রি ওয়াইফাই – নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না? রেফ্রিজারেটরের মতো ফেইসবুকটা একটু খুলে দেখবেন নতুন কিছু এলো কি না... নিদেনপক্ষে একটা ‘চেক-ইন’ দিয়ে তো মানুষকে জানাবেন যে আজ আপনি খাচ্ছেন, কেউ কেউ অবশ্য এ সুযোগে সেরে নেবেন অ কিংবা প্রয়োজনীয় ডাউনলোড!
ধরুন, এমন সময় নটিফিকেশন এলো যে আপনার অ্যাডোবি ফ্ল্যাশপ্লেয়ার, গুগল টুলবার বা মেসেঞ্জারটি বেশ পুরনো হয়ে গেছে এবং আপনি চাইলে তা ‘ওকে’ চেপে তখনই আপডেট করতে পারেন – কী করবেন?
স্থান-কাল বিবেচনায় আমাদের ইনটিউশন বলছে, নেটিজেনদের জন্য চমৎকার একটা সুযোগ, কিন্তু ক্যাসপারস্কি ল্যাব রিপোর্ট বলছে- ডাউনলোড দিয়েছেন তো বিপদে পড়েছেন!!
রাশিয়াভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ক্যাসপারস্কি’র ২০১৫ সালের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্রি-তে ডাউনলোড করতে দেয়া এসব সফটওয়্যারের ইনস্টলেশন ফাইল আসল হলেও তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া আছে ‘ডার্কহোটেল কোড’।
প্রযুক্তিবিদদের মতে প্রায় ৭ বছর আগে এর উদ্ভব হলেও ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে জাপানে প্রথম এ ভাইরাস সনাক্ত করা হয়, আর এবার এক বছর পর তা পাওয়া গেল বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যান্ড, জার্মানি, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া এবং মোজাম্বিক – এসব দেশে।
সাধারণত, ধরা পড়া ঠেকাতে ডার্কহোটেল কোডে যুক্ত থাকে ‘অরিজিনাল সফটওয়্যার সার্টিফিকেট’! এক্ষেত্রে হ্যাকাররা মূলত আসল সার্টিফিকেটের দুর্বল এনক্রিপশন ভেঙ্গে তাতে ম্যালওয়্যার জুড়ে দেয় এবং তারপর আবার গোটা প্যাকেজটি সাজায় নতুন করে – ফলে মোবাইল বা পিসিতে কেবল ‘ট্রাস্টেড’ সফটওয়্যার অপশন দেয়া থাকলেও ডিভাইসগুলো এই ভাইরাস প্রতিহত করতে পারে না।
আর, একবার ওই ম্যালওয়্যার সংক্রমিত সফটওয়্যার প্যাকেজ ইনস্টল হয়ে গেলে কি-লগার, ট্রোজান, ড্রপারসহ বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়ে হ্যাকার নিয়ে নেয় আক্রান্ত মোবাইল বা পিসির সিস্টেম এক্সেস। ফলাফল, ডিভাইসটি প্রকৃত ব্যবহারকারীর হাতে থাকলেও তার সব ফাইলসহ নিয়ন্ত্রণ আসলে অন্য কারো হাতে। এছাড়াও আছে ফিশিং পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করা ও তার এক্সেস নেয়া।
ক্যাসপারস্কি ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী, বড় বড় হোটেলে অবস্থান নেয়া সামরিক-বেসামরিক এক্সিকিউটিভ পর্যায়ের ব্যক্তিবৃন্দই মূলত ডার্কহোটেলের টার্গেট, তাই বলে জালে যে ছোট মাছ একদমই ধরা পড়ে না, তা কিন্তু নয়!
পরিশেষে, ফ্রি’তে ইন্টারনেট পেলে যে একদমই ব্যবহার করবেন না, তা না – কেবল মাথায় রাখুন নিরাপত্তাই প্রথম। যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতিতে অনলাইনে নিরাপদ থাকতে আপনার মোবাইল এবং পিসিতে অবশ্যই এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
তবে তথাকথিত ফ্রি এন্টিভাইরাস কিন্তু সমস্যা কমায় না, বাড়ায়! তাই, বাজারে গিয়ে দেখেশুনে, যাচাই করে যে ব্র্যান্ডের এন্টিভাইরাসে দেখবেন আপনার প্রয়োজনীয় উপকরণগুলি পাচ্ছেন – সে ব্র্যান্ডের এন্টিভাইরাসেরই পেইড ভার্সনটি কিনে ব্যবহার করুন।
এছাড়াও, পাবলিক ওয়াইফাই-তে সংযুক্ত হতে অবশ্যই ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করুন এবং বাড়তি কিছুটা নেট খরচ হলেও আপডেটেড রাখুন আপনার মোবাইল এবং পিসির সিস্টেম (তবে, ভ্রমণে থাকাকালীন বা বাইরে যেখানে সেখানে ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে কখনোই কোনো সফটওয়্যার আপডেট করতে যাবেন না)।
ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো জিজ্ঞাসা বা মতামত জানাতে মন্তব্যের পাশাপাশি আগের অন্যান্য পোস্টসমূহ পড়তে ‘অনুসরণ’ করতে পারেন টেক সমাধান।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪