ভাইরাস অমনিবাসের শেষ পরিচ্ছদ ‘হ্যাকিং’! নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এর আওতায় কোনো সার্ভারের ত্রুটি খুঁজে বের করা আর ২০০০ এর গোড়ার দিকে কোনো ওয়েবসাইটে নিজের ‘ডিফেইস পেইজ’ বসিয়ে দেয়ার ঐতিহ্য থাকলেও ইদানিং এর বেশি চল দেখা যায় পার্সোনাল আইডি (ফেইসবুক, মেইল ইত্যাদি) কেড়ে নেয়া ও ক্রেডিট কার্ড হাতানোর অপচেষ্টায়। ফলে, সময়ের সাথে বদলে গেছে হ্যাকিং-এর সংজ্ঞাও।
এখন কোনো ডিভাইস, ওয়েবসাইট, ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ দখলে 'সিদ্ধহস্ত'কে হ্যাকার বলা হলেও উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত হ্যাকার বলতে তাদের বোঝানো হতো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক তথ্যাদির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরামর্শ সেবা দিতেন!
যেহেতু যাবতীয় সকল ম্যালওয়্যারই ভাইরাস, আর বলা চলে হ্যাকাররা ভাইরাসের সহায়তায়ই তথ্য সংগ্রহ করে কোনো ডিভাইস বা একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়, তাই এই দুটির মিশেলেই আজকের আলোচনা।
বরাবর আমরা বলে আসছি– আপনার অনলাইন ভ্রমণ নিরাপদ রাখতে এন্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য ফ্রি এন্টিভাইরাস আপনাকে রক্ষা করার বদলে ঠেলে দেয় আরও বড় বিপদের মুখে। তাই, আপনার তথ্য ও ছবির গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং আপনার ডিভাইস (ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ফোন কিংবা স্মার্ট টেলিভিশন) নিরাপদ রাখতে অবশ্যই লাইসেন্সড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
এ তো গেল সামনের দিনগুলিতে নিরাপদে থাকার উপায়, কিন্তু কোনো কারণে যদি আগে থেকেই আপনার ডিভাইসে ভাইরাস বাসা বেঁধে থাকে? কিংবা অসেচতনতায় আপনার কোনো একাউন্ট যদি হ্যাকড হয়ে থাকে?? চলুন দেখা যাক – সেক্ষেত্রে কী করণীয়।
জানান গ্রাহক/বন্ধু/সংশ্লিষ্টদের
আপনার ওয়েবসাইট বা যে কোনো একাউন্ট বেহাত হয়ে গেছে - বুঝতে পারামাত্র প্রথম কাজ হচ্ছে গ্রাহক, বন্ধু বা সংশ্লিষ্টদের জানানো। কেননা এসব ক্ষেত্রে হ্যাকার প্রথমেই যা করে তা হচ্ছে – কোনো ব্যাংকিং তথ্য আছে কি না খুঁজে বের করে এবং তার মাধ্যমে আর্থিক লাভের পথ খুঁজে।
অনেক সময় ব্যাংকিং তথ্য না পেলে বা সোশ্যাল মিডিয়া আইডি’র ক্ষেত্রে ভিক্টিম সংশ্লিষ্টদের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অনেক উদাহরণ আছে। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে একাউন্টের সাথে জড়িতদের কাছে ভিক্টিমকে নিয়ে আজেবাজে মেসেজ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্ট ইত্যাদি তো আছেই।
তাই, কোনো কারণে আপনার একাউন্ট বেহাত হলে যে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর আগে প্রথমেই সরাসরি বা ফোনে কিংবা অন্য কারো একাউন্ট থেকে সবাইকে সতর্ক করে দিন।
চেষ্টা করুন ইমেইল দিয়ে পুনরুদ্ধারের
কোনো কারণে নির্ধারিত ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড কাজ না করলে প্রথমে ‘Forgot Password’ দিয়ে পাসওয়ার্ড রিসেটের জন্য আবেদন করুন। এই সেবাটি পাবেন যে ইমেইল এড্রেস দিয়ে একাউন্ট খোলা হয়েছিল সেই ইমেইলে (এজন্য কখনোই একাধিক একাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত নয়)।
এবার আপনার একাউন্টের এগেইন্সটে থাকা মেইলে আসা লিংক থেকে নতুন করে পাসওয়ার্ড সেট করে নিন।
কাজ না হলে জানান কাস্টমার কেয়ারকে
দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন সংক্রান্ত কোনো সমস্যায় আমরা যেমন সবার আগে কাস্টমার কেয়ারকে জানাই – হ্যাক হলেও তেমনি আগে জানানো উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এমনকি ফেইসবুক, টুইটারসহ সকল সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটের জন্যও একটি করে নির্ধারিত বিভাগ থাকে যারা আপনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা দেয়ার চেষ্টা করে।
সেখানে আবেদন করলে আপনার ইউজার নেম ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড কিংবা সরাসরি তুলে পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে একাউন্টটি আপনার - তার যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারলে তারা সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইডি ফিরিয়ে দেয়ার বা রিমুভ করে ফেলার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এক্ষেত্রেও একাউন্ট ফিরে পাওয়ার পর প্রথম কাজ আগের পাসওয়ার্ডের বদলে নতুন ও শক্তিশালী (যেটা অনুমান করা কঠিন) পাসওয়ার্ড সেট করা।
সাম্প্রতিক ব্যবহৃত অ্যাপস, প্লাগ-ইন ও এক্সটেনশন নিষ্ক্রিয় করা
হ্যাক হওয়া ডিভাইস বা ওয়েবসাইট পুনরুদ্ধার করেই সাম্প্রতিক ব্যবহৃত অ্যাপস, প্লাগ-ইন ও এক্সটেনশনসমূহ নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। সম্ভাবনা প্রবল যে এসবের মাধ্যমেই ম্যালওয়্যারটি এসেছিল আপনার ডিভাইসে।
পরীক্ষা করুন পোস্ট, মেসেজ, ইমেইল ও সেটিংস
এবার যাচাই করে নিন আপনার সাম্প্রতিক পোস্ট, মেসেজ, ইমেইলসহ সেটিংস আগের মতো আছে কি না। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় হ্যাকার লিস্টের মানুষদের এটা-সেটা মেইল করে বা আজেবাজে পোস্ট দিয়ে আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করে। তাই, পরীক্ষা করে দেখুন সেন্টবক্সসহ সবকিছু – নতুন কিছুর অস্তিত্ব বা কোনো অসামঞ্জস্য দেখলে জানান সংশ্লিষ্টদের।
যোগ করুন বাড়তি নিরাপত্তা
ফের সাইবার হামলার শিকার হতে না চাইলে আপনার একাউন্টে যোগ করুন টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনসহ লগইন অ্যাপ্রোভাল নোটিফিকেশন। এখন মোটামুটি সব ওয়েবসাইটেই এই সুবিধা সংযুক্ত থাকে (প্রাইভেসি অপশন চেক করুন)। এটা অপরিচিত ব্রাউজার বা ডিভাইস থেকে একাউন্টে লগইন ডিনাই করে নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে (যে কোনো অপারেটর) গোপন কোডসহ একটি এসএমএস পাঠায় যা তাৎক্ষণিক পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চুড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকুন নিশ্চিন্ত
চুড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতীত যতই সাবধানতা অবলম্বন করুন না কেন – তিন ডব্লিউ’র দুনিয়ায় আপনি, আমি কেউই নিরাপদ নই। তাই, ঝুঁকিমুক্ত থাকতে আপনাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এন্টিভাইরাস, তবে মাথায় রাখবেন তথাকথিত ফ্রি এন্টিভাইরাস কিন্তু সমস্যা না কমিয়ে বরং বাড়ায়। তাই, দেখেশুনে ও যাচাই করে কিনুন পছন্দসই এন্টিভাইরাসের পেইড ভার্সন, আর অনলাইনে থাকুন স্মার্ট ও সেফ!!
ভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনো জিজ্ঞাসা বা মতামত জানাতে মন্তব্যের পাশাপাশি তালাচাবি এবং আগের অন্যান্য পোস্টসমূহ পড়তে ‘অনুসরণ’ করতে পারেন টেক সমাধান।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০