somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ভিনদেশী’ এন্টিভাইরাস কীভাবে বুঝবে আপনার প্রয়োজন!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে উপরের প্রশ্নটি দেখে যদি আপনার ভ্রু কুঁচকায় তবে জেনে রাখুন ভৌগলিক সীমারেখা শুধু পৃথিবীর মাটিতেই নয়, সাইবার স্পেসেও বিরাজমান!

কি, বিশ্বাস হচ্ছে না – না!

বেশ, আসুন প্রমাণ করে দেই...।

ধরা যাক, আপনি এবং একজন আমেরিকান ভদ্রলোক কোনো একদিন ঠিক একই সময়ে একই শব্দ বা টপিক লিখে গুগলে সার্চ দিলেন – বলুন তো - ফলাফল কী দাঁড়াবে?

ভাবছেন, আপনি যা দেখছেন আমেরিকান ভদ্রলোকও ঠিক তাই দেখবেন?

ভুল!

আপনি এখানে বসে দেখবেন আপনার দেশ, ভাষা ও কৃষ্টিনির্ভর কিছু ফলাফল, আর আমেরিকান ভদ্রলোক দেখবেন তার জীবনযাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কিছু।

বিশ্বাস হচ্ছে না?

বেশ, আপনার ব্রাউজারের উপরের অংশে থাকা এড্রেস বার লক্ষ্য করুন... আজিব! http://www.google.com.bd দেখাচ্ছে? আপনি না স্রেফ ‘www.google.com’ লিখেছিলেন!

এর মানে হচ্ছে আপনি ‘কী’ খুঁজবেন এটা ঠিক করলেও ‘কীভাবে’ তা পাবেন সেটা ঠিক করে দেয় আসলে অন্য কেউ তথা সার্চ ইঞ্জিন – আর, তা করা হয় আপনার অবস্থানের ভিত্তিতে!



চাইলে, আইপি চেঞ্জ করেও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন (‘আইপি চেঞ্জার’ সফটওয়্যার ‘গুগল’ করলেই পাবেন)। একেকবার একেক দেশের আইপি বসান – গুগল যখন জানবে আপনি অমুক দেশে আছেন তখন সেও আপনাকে তমুক দেশের মানুষ ভেবে নেবে!

নারে ভাই, গুগলের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। লাগে না – ধান ‘বানতে’ শুরু করার আগে একটু শিবের গীত!

এবার আসি উপরের ঘটনার ব্যাখ্যায়।

ইন্টারনেট জায়ান্টরা সাধারণত তাদের ওয়েবসাইটের জন্য একাধিক সার্ভার ব্যবহার করেন। ফলে দেখা যায় এড্রেস একই থাকলেও ওয়েবসাইটগুলো একেক দেশ থেকে একেক রকম দেখায়, মানে কনটেন্ট আলাদা হয়।

অবশ্য, এতে লাভ কোম্পানি এবং গ্রাহক উভয়েরই। যেমন, স্রেফ একটি সার্ভার হলে ভিজিটর বাড়লে তা ‘ক্র্যাশ’ করতে পারে, আবার ‘সাইবার অ্যাটাক’ হলে ওই ওয়েবসাইটটি একই সময়ে পৃথিবীর সব প্রান্তেই বিকল হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু, অনেকগুলো সার্ভার হওয়ায় ব্যবহারকারী বাড়লেও সাইটে যেমন চাপ কম পড়ে, পাশাপাশি অঞ্চলভেদে মানুষের জন্য কাস্টমাইজড সেবাও দেয়া যায় সহজে। এছাড়াও, এতে যে কোনো সমস্যায় কেবল একটি নির্দিষ্ট সার্ভারের ব্যবহারকারীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েন, সারা পৃথিবীর সব ভিজিটরদের কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।

অবশ্য, এর কিছু নেগেটিভ দিকও আছে। আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও যোগাযোগ সহজ করতে যেমন একদিকে কিছু প্রোগ্রামার নিরলসভাবে সময় দিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি কেউ কেউ আবার তাদের রাতের ঘুম হারাম করছেন কেবল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ‘তথ্য’ চুরির কাজে। আর, এ কাজের জন্য তারা প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছেন ধ্বংসাত্মক সব ভাইরাস তথা ম্যালওয়্যার।



আর, এই ম্যালওয়্যারই যত সমস্যার মূল। বাই হুক অর ক্রুক এসব ম্যালওয়্যার একবার আপনার/আমার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্ট টেলিভিশনসহ যে কোনো এন্ড্রয়েড ডিভাইসে জায়গা করে নিতে পারলেই শুরু করে ধ্বংসযজ্ঞ।

ইন্টারনেট জায়ান্টরা যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য আলাদা আলাদা সার্ভার স্থাপন করেন, হ্যাকাররাও তেমনি আপনার-আমার তথ্য, ছবি পেতে নিত্যনতুন উদ্ভাবিত ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছেন এসব সার্ভারে। এর উপর আছে স্থানীয় কম্পিউটার পণ্ডিতদের উৎপাত (‘গুগল’ করে পুরনো ভাইরাসকে আবার নতুন করে বানানো, মজা করে বা কৌতূহলে তা আবার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদের কম্পিউটার/স্মার্টফোনে ট্রান্সফার করে দেখা)!

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতেই আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল – আঞ্চলিক এসব ভাইরাস/ম্যালওয়্যার অপসারণে তথাকথিত গ্লোবাল এন্টিভাইরাসমূহ কতোটা কার্যকর?

এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে সাম্প্রতিক একটি দৃষ্টান্ত। কিছুদিন আগে ভাইরাস পাওয়া যায় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্লগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এসময় পাঠক পত্রিকাটি পড়তে না পারার পাশাপাশি ভাইরাসটি ওয়েব থেকে স্থানান্তরিত হয় যার যার ডিভাইসেও।



ফ্যাক্ট হচ্ছে যে বা যারাই ভাইরাসটি ডেভেলপ বা ইঞ্জেক্টেড করুক না কেন তাদের টার্গেট কিন্তু সারা পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ছিল না, ছিল কেবল বাংলাদেশের মানুষরা – সহজ কথায় বাংলা ভাষার একটি পত্রিকার পাঠক বাংলাদেশি ও বাংলাভাষীরাই। সে সূত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাংলাভাষীরা ছাড়াও বিভিন্ন দেশে বসবাস করা বাঙালিরা এর শিকার হলেও মূল লক্ষ্য ছিল কেবল বাংলাদেশ।

অন্যদিকে, এন্টিভাইরাস যেহেতু যে কোনো ভাইরাসেরই সনাক্তকারী কিছু চিহ্ন তথা সিগনেচার ধরে কাজ করে আর এই ভাইরাসের সিগনেচার ভিনদেশী এন্টিভাইরাসগুলোর কাছেও ছিল অজানা, তাই উইন্ডোজ ডিফেন্ডার, ক্যাসপারেস্কি, নর্টন, এভিজি, ই-সেট, অ্যাভাস্টসহ যাবতীয় এন্টিভাইরাসই ব্যর্থ হয় এটির মোকাবেলায়।

এছাড়াও, উল্লেখিত এন্টিভাইরাসসমূহ সাধারণত যেসব দেশে ডেভেলপ করা হয় এবং যেসব দেশের ব্যবহারকারীর কথা বিবেচনা করে সিগনেচার আর্কাইভ তৈরি করে, তার কোনোটাই আমাদের এ অঞ্চলের ম্যাল ও অ্যাডওয়্যারের সাথে মিলে না।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি এত ব্যবহারকারী থাকা সত্ত্বেও এসব এন্টিভাইরাসের কোনোটিরই ন্যুনতম একটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারও নেই এখানে! ফলে তাদের তথাকথিত কাস্টমার কেয়ারে নক করলেও এখানকার কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়। ফলে, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রতিকার করার আগ পর্যন্ত উল্লেখিত ভাইরাসের শিকার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ডিভাইস অকেজো হয়ে পড়েছিল বেশ কয়েকদিন (কেউ কেউ অবশ্য অপারেটিং সিস্টেম রিইনস্টল করে পিসি সারিয়েছিলেন)। আর, এখানেই আমাদের আক্ষেপ!



যেহেতু, ইউরোপ-আমেরিকার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও আমাদের দেশীয় ব্যবহারকারীদের ধ্যান-ধারণা এক না; তাদের সাথে আমাদের ব্রাউজিং হ্যাবিট মিলে না, এমনকি ম্যালওয়্যার, অ্যাডওয়্যার তথা ভাইরাস ও এর উৎপাদনকারীও ভিন্ন – তাই, অনেক আগে থেকেই প্রয়োজন ছিল আমাদের উপযোগী একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ এন্টিভাইরাস।

অন্তত যা দোকান থেকে কিনে এনে পরে ‘কোথা থেকে এনেছি’ সেটাও না ভুলে গিয়ে যে কোনো সমস্যায় সার্বক্ষনিক কাস্টমার কেয়ার সেবা (অবশ্যই সেটা হতে হবে বাংলায়) পাওয়া যাবে - এমন একটি এন্টিভাইরাস আসলেই আমাদের খুব দরকার!

পাওয়ার অফ হাইজ্যাক ভাইরাস: কাজ শুরু করে ফোন ‘বন্ধ’ হলে সহ আগের পোস্ট পড়তে ও ‘টেক সমাধান’ পেতে ক্লিক করে রাখতে পারেন ‘অনুসরণ’ বাটন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×