somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রি এন্টিভাইরাসঃ ভাইরাস তাড়ায় না, পোষে!

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘ফ্রি’ শব্দটা যে ঠিক কোন শব্দের সাথে বোনাস হিসেবে এলো- অনেক খুঁজেও তা পাইনি, বরং একজনের মন্তব্য পেলাম যে মাগনা’র গরুর দাঁত নেই! বলার অপেক্ষা রাখে না, মন্তব্যকারী কিছু একটা ফ্রি’তে পেলেও ‘জাতের’ পাননি বলেই তার এতো ক্ষোভ। বলছিলাম- এন্টিভাইরাসের কথা।। তিন ডব্লিউ’র জগতে ঢুকলেই আপনি পাবেন হাজারো নামী-বেনামী ফ্রি এন্টিভাইরাস... কিন্তু, কথা হচ্ছে এগুলো কতোটুকু নিরাপদ?

অন্যরা নগদ টাকায় এন্টিভাইরাস কিনে যা যা সুবিধা পান, মোবাইল ফোন কোম্পানির দেয়া ‘ফ্রি এমবি’ ব্যবহার করে এন্টিভাইরাসও ফ্রি’তে নামিয়ে সেই একই সুবিধা আমিও পাবো- এই যুগে এসে এটা ভাবছি মানেই তো আমি বোকার স্বর্গে বাস করছি!!

ভাই, এ সময়, যখন ১০ টাকার চিপসের প্যাকেটে ১০টা আলুর ছিলকাও পাওয়া যায় না কিংবা রিকশায় উঠে নেমে গেলেও অন্তত ২০ টাকা ভাড়া দেয়া লাগে তখন একটি পয়সাও খরচ না করে ৫০০-৭০০ টাকায় যারা এন্টিভাইরাস কিনে তাদের সমান সুবিধা পাওয়ার আশা ‘ক্যামনে’ করেন?

বাদ দিন সমান সুবিধা’র কথা – আগে বলুন কখনো পরীক্ষা করে দেখেছেন কি আদৌ এসব ফ্রি এন্টিভাইরাস ম্যালওয়্যার ধরতে পারে কি না বা নিয়মিত আপডেট হয় কি না; ধরুন- ঘরের ইঁদুরের মতো এই এন্টিভাইরাস উল্টো আপনার কম্পিউটারের কোনো ক্ষতি করলো, সেক্ষেত্রে কার কাছে তার সমাধান চাইবেন? অভিযোগ জানাতে কাস্টমার কেয়ার বা তাদের কোনো রিপ্রেজেন্টেটিভ খুঁজে পাবেন কি! এছাড়াও, নেটে সংযুক্ত হলেই যে কিছুক্ষণ পর পর এই এন্টিভাইরাস তার পেইড ভার্সন কেনার জন্য বিজ্ঞাপন দেখায় এবং তা না করা হলে আস্তে করে সার্ভিস দেয়া বন্ধ করে দেয় – তার কী করবেন?



‘ফ্রি’ না ‘ফি (মাশুল)’ গুনছেন??
নেহায়েত মানবসেবার জন্য ট্রাস্ট খুলে না বসলে কেউ কাউকে যেখানে ফ্রি’তে অ্যাডভাইসও দেয় না সেখানে এন্টিভাইরাস কোম্পানিগুলো আপনাকে-আমাকে বিনে পয়সায় তাদের প্রোডাক্ট দিচ্ছে – কখনো ভেবে দেখেছেন কি এটা তারা কেন করে? আসলে, আখেরে লাভটা তাদেরই!

লাভটা কী- সে কথা বলছি পরে, তার আগে বলি ফ্রি আর ফি দিয়ে নেয়া এন্টিভাইরাসের পার্থক্যঃ

ইউজার ইন্টারফেস
একটি প্রোগ্রামের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় তার নির্ধারিত কাঠামো অর্থাৎ সেই অ্যাপ্লিকেশনটি চালানোমাত্র যে উইন্ডোটি আসে তা দিয়ে। সহজ কথায় এটাকেই বলে ইউজার ইন্টারফেস। দেখা গেছে যে প্রোগ্রামের ইউজার ইন্টারফেস যতো সহজ তা ততো কাজের হয়, মানে ব্যবহার করা ততো সুবিধের হয়।

সাধারণত ফ্রি এন্টিভাইরাসগুলোর ইউজার ইন্টারফেস কিছুটা জটিল হয়, কিন্তু, পেইড ভার্সনেরটা (যার ছবি আপনাকে রোজ অ্যাপ্লিকেশন চালু করামাত্র বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়) সহজ-সরল। আর, এটাই আপনাকে উৎসাহিত করে (কিংবা নিয়মিত প্যারা দেয়) পেইড ভার্সনটি নিতে। এখানেই আমাদের আপত্তি - ভালো জিনিস দিলে পয়সা নিয়ে প্রথমেই দাও, কেন ফ্রি’র নামে হেনস্থা করা!



কার্যক্ষমতা
আমাদের আজকের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। ফ্রি হোক আর পেইড হোক- আগে তো জানতে হবে কোনটা কতোটুকু কাজের আর কোনটা কেবল শো-অফ! চলুন, দেখি পিসি ওয়ার্ল্ডের একটি সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফলাফল।

(উল্লেখ্য, বিভিন্ন এন্টিভাইরাসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য একই ম্যালওয়্যারে একই কোম্পানির একই ভার্সনের ফ্রি এবং পেইড ভার্সন একই সময় ব্যবহার করা হয়েছে।)

সিগনেচার-ভিত্তিক ভাইরাস অনুসন্ধানে প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পেইড ভার্সনের তুলনায় ফ্রি ভার্সনের পার্ফরম্যান্স অনেক কম। এছাড়া, বিভিন্ন এন্টিভাইরাসের ফ্রি ভার্সনের তুলনায় সবচে পিছিয়ে আছে পান্ডা। হালের ক্রেজ নায়লা নাইম যতোই ‘ছোট ভল্লুক’ নিয়ে নর্তন-কুঁদন করুক না কেন - পান্ডা ক্লাউড এন্টিভাইরাসের প্রো ভার্সনের তুলনায় ফ্রি ভার্সনের ফলাফল ছিল অতিশয় জঘন্য।

আসলে, টাকা সত্যিই কথা বলে... দেখুন না- মোটামুটি সব এন্টিভাইরাসেরই পেইড ভার্সন শতকরা ৯৬.২ ভাগ ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে পারে অনায়াসে, অথচ সেসবের ফ্রি ভার্সনের ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় তার হার! এছাড়াও, সামগ্রিকভাবে ফ্রি এন্টিভাইরাসসমূহের নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থতার গড় হার ১৫.২ শতাংশ।

শুধু তাই নয়, শনাক্তকৃত ভাইরাস মুছে ফেলার ক্ষেত্রে এ ব্যবধান আরও ভয়াবহ।

যে কোনো পেইড এন্টিভাইরাসে ম্যালওয়্যার অপসারণের হার যেখানে গড়ে ৭৪ শতাংশ, ফ্রি এন্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩৪ শতাংশ!

তাই, ইতি’র আগেই ইতি টানা হলে এখানেই বলছি- আজই আনইনস্টল করুন আপনার তথাকথিত ফ্রি এন্টিভাইরাস।



গতি
দেখা গেছে যেসব এন্টিভাইরাসের পেইড আর ফ্রি – দু’টি ভার্সন আছে, রহস্যজনকভাবে তাদের ফ্রি ভার্সন কেন যেন খুব স্লো! স্ক্যানিং থেকে শুরু করে কপি-পেস্ট পর্যন্ত সব কাজই এতে কেমন যেন থমকে যায়।

বোধহয় এ থেকেই এসেছে সেই চিরায়ত ডায়লগ ‘এন্টিভাইরাস লাগালে পিসি স্লো হয়ে যায়’। তাই, আমরা বলি কি, ফ্রি এন্টিভাইরাস মুছে ফেলে দেখেশুনে একটি পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন - দেখবেন পিসি দৌড়াবে!!

সুবিধার স্বল্পতা
ফ্রি এন্টিভাইরাসে আপনি নামকাওয়াস্থে শুধু ভাইরাস আছে কি না স্রেফ এটা চেক করতে পারলেও বাদবাকি সব বিষয়েই লবডংকা। উদাহরণস্বরূপ পেইড এন্টিভাইরাসে আপনি ভাইরাস চেক-মুছে দেয়া ছাড়াও আপনি আরও অনেক সুবিধা পাবেন, যেমন নিয়মিত ও সম্পূর্ণ আপডেট সুবিধা, সফটওয়্যার মেইন্টেইনেন্স সুবিধা, যে কোনো সময় যে কোনো সমস্যায় সাপোর্ট, কোনো কারণে ডিভাইস হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে ট্র্যাকিং করার সুযোগ ইত্যাদি – যা ফ্রি এন্টিভাইরাসের ক্ষেত্রে কখনোই পাবেন না।

এছাড়াও, কিছু ফ্রি এন্টিভাইরাসে তার পেইড ভার্সন কেনার জন্য বারবার বিজ্ঞাপন দেয়া এবং না কেনা হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেবা বন্ধ করে দেয়া’র কথাও পাওয়া গেছে ইউজারদের রিভিউতে – এটা গাছে তুলে মই সরিয়ে দেয়ার মতোই। কারণ- কিছু শনাক্তকৃত ভাইরাসকে আবদ্ধ রেখে হুট করে যদি আবার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেক্ষেত্রে ফলাফল আরও বেশি বিপদজনক হতে পারে।



আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নিরাপদ রাখতে এন্টিভাইরাসের কোনো বিকল্প নেই। তাই বলে আবার ফ্রি’তে আবর্জনা দিয়ে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ভরানোও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নগদ টাকায় এন্টিভাইরাস কিনুন, দেখবেন টাকাই কথা বলবে!

আগের পোস্টঃ এন্টিভাইরাস কী? ইহা ভাইরাস ‘খায়’ না ‘মারে’??
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৩
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×