ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার উপায় – আগের পোস্টে বলেছিলাম আপনি ঘরের বা অফিসের কম্পিউটার বা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা না করেন, নিরাপদে থাকার আসলে একটাই উপায়; আর তা হচ্ছে এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা।
এন্টিভাইরাস শুধু আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে থাকা পুরনো ভাইরাস দূর করে নতুন করে যেন আর কোনো ভাইরাস আপনার ডিভাইসের সংস্পর্শে আসতে না পারে তা-ই নিশ্চিত করবে না, বরং তার পাশাপাশি আপনার সার্বিক নিরাপত্তাসহ বৃদ্ধি করবে আপনার ডিভাইসের পারফর্মেন্স।
টুকিটাকিঃ একটি আধুনিক এন্টিভাইরাস আপনাকে নিম্নোক্ত সুবিধাসমূহ দেবে-
সার্বিক গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা
হারানো/খোয়া গেলে ডিভাইসের লোকেশন বের করে দেয়া
সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ ও হালনাগাদ
সব ধরণের ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষা
ব্রাউজার হাইজ্যাকিং বন্ধ করা
ওয়ার্ম, অ্যাড ও স্পাইওয়্যার ঠেকানো
প্রোগ্রামের শর্টকাট তৈরি হতে না দেয়া
এবার আসি অন্য কথায়... গত পোস্টের প্রেক্ষিতে আমরা কিছু ম্যাসেজ পেয়েছি আমাদের ফেইসবুক ফ্যানপেইজে। সেখানে যে যা সমস্যার কথা বলেছেন তাৎক্ষণিক তার সমাধান তাদের জানিয়ে দেয়া হলেও একটা বিষয়ে মজা পেয়েছি, আর তা নিয়েই এবারের পোস্ট। বিষয়টির আপনিও সাক্ষী, হয়তো খেয়াল করে দেখেননি কখনো – এই যা! দেখবেন, যে যা এন্টিভাইরাসই ব্যবহার করুক না কেন প্রায়ই বলেন – এতোগুলো ভাইরাস ধরেছে/ খেয়েছে/ মেরেছে কিংবা তার এন্টিভাইরাসটি ভাইরাস ধরতে পারে না/ খেতে পারে না/ মারতে পারে না।
আজিব তো! এন্টিভাইরাস কি দারোগা নাকি যে চোর ধরবে? নাকি ভেবেছেন রাক্ষস, যা পাবে তা-ই খাবে!! তবে কি ভেবেছেন যে বদরাগী স্কুল টিচার, নয়তো খামোখা মারধোর করবে কেন??
আসলে, এন্টিভাইরাস ভাইরাস’এর করেটা কী – সেটাই জানবো আজকের পোস্টে।
এন্টিভাইরাস যা করেঃ
একসময় কম্পিউটারে কিছু সংযুক্ত করলে ‘ক্যাঁক’ করে তাতে ক্ষতিকর কিছু আছে বলে জানিয়ে দিয়ে তাতে প্রবেশ না করতে ও ইতিমধ্যে তা করে থাকলে ম্যানুফ্যাকচারের কাছে (!) তা নিয়ে যেতে তাগাদা দিলেও হালের এন্টিভাইরাস আপনি কোনো সাইটের নাম লিখলে সেকেন্ডের ব্যবধানে তা রিডাইরেক্টেড হওয়ার আগেই তা স্ক্যান করে নেয়, আজেবাজে মেইল নিজ থেকে বেছে আলাদা করে রাখে জাংক বক্সে এমনকি আপডেট করে দেয় পিসির সফটওয়্যার পর্যন্ত! এতোকিছু করলেও আসলে সব এন্টিভাইরাসের মূল কাজ কিন্তু একটাই- যে ডিভাইসে সেটি ইনস্টল করা হচ্ছে তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এ ধরণের প্রোগ্রামের প্রধান অংশ ‘ভাইরাস গার্ড’ যা যে কোনো ফাইল বা ওয়েবপেইজ ব্যবহার তথা খোলার আগে পরীক্ষা করে দেখে তাতে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের জন্য ক্ষতিকর কিছু আছে কি না। তেমন কিছু পাওয়া গেলে প্রোগ্রামটি তাৎক্ষণিকভাবে ওই পেইজ বা ফাইলটি ‘ফ্রিজড’ করে তা থেকে ভাইরাস অপসারণ করে বা কোনো কারণে ফাইলটি ত্রুটিমুক্ত না করা গেলে এন্টিভাইরাস সেটিকে ‘ব্লকড’ করে ফেলে বা সম্পূর্ণরুপে মুছে দিয়ে (আপনার নির্দেশ মোতাবেক) আপনার ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলি নিচের দুই (২) নিয়মে কাজ করে-
রুটকিট ডিটেকশন
রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন
রুটকিট ডিটেকশনঃ
রুটকিট হচ্ছে সে’সব ভাইরাস যারা নিজেদের ধরণ-ধারণ বদলাতে বদলাতে না ধরা পড়ে পৌঁছে যায় অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ লেভেলে। আর, এটি ডিভাইসের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় সেখানে থাকা ভাইরাস চাইলে এমনকি অপারেটিং সিস্টেমেও পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তাই এই ভাইরাস দীর্ঘদিন অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ লেভেলে থাকলে ডিভাইস একসময় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, ফলে দেখা যায় অপারেটিং সিস্টেম আবার নতুন করে দিয়ে নিতে হয়।
রুটকিট ডিটেকশন পদ্ধতিতে ডিভাইসের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর এসব ভাইরাস – যারা অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ লেভেলে পৌঁছে যায়, তাদের মোকাবেলা করে।
রিয়েল-টাইম প্রোটেকশনঃ
অন-একসেস স্ক্যানিং, ব্যাকগ্রাউন্ড গার্ড, রেসিডেন্ট শিল্ড কিংবা অটো প্রটেকশন ইত্যাদি সবকিছুই এই রিয়েল টাইম প্রোটেকশনের আওতাধীন। এটা সার্বক্ষণিক মনিটর করে আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনটিকে। সিডি প্রবেশ করামাত্র কিংবা কেউ ইমেইল পাঠালে বা কোনো একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই এন্টিভাইরাসের এই অংশ তা স্ক্যান করে জানিয়ে দেয়- তাতে কোনো সমস্যা আছে কি না।
ভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতিঃ
কোনো ফাইল বা পেইজ ক্ষতিকর কি না - তা বুঝতে এন্টিভাইরাসগুলো নিচের পাঁচ-রকমে পরীক্ষা করে-
সিগনেচার পদ্ধতি
হিউরিস্টিক এলগরিদম
বিহেভিয়ার এনালাইসিস
স্যান্ডবক্স ডিটেকশন
ডাটা মিনিং টেকনিক
সিগনেচার পদ্ধতিঃ
প্রচলিত বেশীরভাগ এন্টিভাইরাসই এ পদ্ধতিতে কাজ করে। সিগনেচার পদ্ধতিতে এন্টিভাইরাস ইঞ্জিন কোনো একটি ফাইল বা পেইজের কনটেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখে তাতে কোনো ম্যালওয়্যার সিগনেচার পাওয়া যায় কি না।
হিউরিস্টিক এলগরিদমঃ
হিউরিস্টিক এলগরিদম অনেকটা সিগনেচার পদ্ধতির মতোই কাজ করে। এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম এখানে ফাইল বা ওয়েবপেইজের কোড যাচাই করে দেখে।
বিহেভিয়ার এনালাইসিসঃ
রানটাইমে সিগনেচার বা কোডের বদলে একটি ফাইল বা ওয়েবপেইজের বিহেভিয়ার বিশ্লেষণ করে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায় কি না দেখাই এই ইঞ্জিনের কাজ।
স্যান্ডবক্স ডিটেকশনঃ
স্যান্ডবক্স ডিটেকশন বিহেভিয়ার এনালাইসিসের মতো হলেও এটা কাজ করে একটি প্রোগ্রামকে অন্য একটি ভার্চুয়াল বক্সে রান করিয়ে। সেখানে যদি ফাইল বা পেইজে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায় তাহলে তা মূল কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে প্রোগ্রামটিকে আর চলতে দেয় না।
ডাটা মিনিং টেকনিকঃ
ম্যালওয়্যার অনুসন্ধানের সর্বশেষ প্রযুক্তি ডাটা মিনিং টেকনিক। ডাটাবেজ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফাইল বা পেইজ যাচাইপূর্বক ডিভাইসের প্যাটার্ন অনুযায়ী তার কোড বিশ্লেষণ করে এখানে ফাইল বা পেইজের আচরণ পরীক্ষা করা হয়।
এ তো গেল এন্টিভাইরাস কী এবং কীভাবে কাজ করে, তা; আমাদের পরবর্তী পোস্টের বিষয় ‘ফ্রি এন্টিভাইরাস কতোটা নিরাপদ?’!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১২