somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইরাসের রকমফের

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পোস্টগুলোতে আমরা জেনেছি ভাইরাস কি, সামান্য অসচেতনতায় তা কিভাবে আপনাকে ফেলে দিতে পারে ভয়াবহ বিপদের মুখে এবং কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ডিভাইসটি ভাইরাসাক্রান্ত। আর, এ পর্বে থাকছে ভাইরাসের রকমফের।

ভাইরাস তো ভাইরাস-ই, তার আবার রকমফের কিসের – আপনি, আমি এমনটা ভাবলেও প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা কিন্তু বলেন আলবৎ আছে! তাদের মতে এখন পর্যন্ত ১১ ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এখানে সেসব ক্যাটাগরি ও প্রত্যেকের অন্তর্ভুক্ত কিছু ভাইরাসের নাম উল্লেখ করা হলো:

বুট সেক্টর ভাইরাস

বুট সেক্টর নামটি এসেছে এমএস-ডস থেকে যা আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলিতে মাস্টার বুট রেকর্ড নামে পরিচিত (পার্টিশন করা ডিভাইসের প্রথম ভাগ)।

বুট সেক্টর ভাইরাস এসেছিল সেই ফ্লপি’র জামানায়, যখন এই চারকোণা ডিস্ক ব্যবহার করা হতো কম্পিউটার বুট করতে। পরে অবশ্য কম্পিউটারের ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস ছড়ানোর পদ্ধতিতেও আমূল পরিবর্তন এলেও এখনো হঠাৎ হঠাৎ শোনা যায় ফ্লপি ডিস্কের ভাইরাসের কথা।

ব্রাউজার হাইজ্যাকার

চলে আসি এই প্রজন্মের ভাইরাসের কথায়। আপনি হয়তো কম্পিউটারে বা স্মার্টফোনে কোনো একটি গান, ছবি কিংবা ভিডিও খুঁজতে ইন্টারনেটে ঢুকলেন। গুগল করে খুঁজেও পেলেন সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি। কিন্তু ক্লিক করা মাত্র আপনার ব্রাউজার সেখানে না গিয়ে আপনাকে নিয়ে গেল অন্য আরেকটি সাইটে যেখানে দেখলেন কোনো একটি বিশেষ পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন।

এই ধরণের ভাইরাসগুলোকেই বলা হয় ব্রাউজার হাইজ্যাকার।

আপাতদৃষ্টিতে খুব নিরীহ আর ভদ্রগোছের বলে মনে হলেও শুধু ওই বিশেষ বিজ্ঞাপনটি আপনাকে দেখানোই কিন্তু এই ভাইরাসের মূল উদ্দেশ্য নয়। এরপরই মূলত শুরু হয় এদের মিশন! আপনি চান বা না চান, মোবাইলে এমবি থাকুক বা না থাকুক (প্রয়োজনে মূল একাউন্ট থেকে টাকা কেটে হলেও), ভাইরাস এবার আপনার ডিভাইসে নামাবে বেনামী সব প্রোগ্রাম যেগুলো বয়ে আনে সত্যিকার সব রিস্ক ফ্যাক্টর।

এছাড়াও, ব্রাউজার হাইজ্যাকার ভাইরাস নিজ থেকে আপনার ব্রাউজারে জুড়ে দেয় অখ্যাত সার্চ ইঞ্জিনের টুলবার – আর, এসব স্লো করে দেয় আপনার ইন্টারনেট সার্ফিং।

ওয়ার্ম

বড় বড় কর্পোরেট নেটওয়ার্ক টার্গেট করে বানানো হয় এই ধরণের ভাইরাস। স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজে তালগোল লাগানোই এদের কাজ। হালের লাভগেট, এফ, আই লাভ ইউ ইত্যাদি ওয়ার্মের উদাহরণ।

ডিরেক্ট একশন ভাইরাস

এ ধরণের ভাইরাস নিজ থেকে কাজ শুরু না করলেও দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থাকতে পারে আপনার ডিভাইসে। অতঃপর কোনো একদিন সংক্রমিত ফাইলটি এক্সিকিউট করামাত্রই শুরু হয় এর ধ্বংসলীলা।

১৯৮৮ সালে ব্রাজিলের প্রতিটি কম্পিউটারকে অচল করে দেয়া ভিয়েনা ভাইরাস ছিল এই গোত্রের ভাইরাস।

ফাইল ইনফ্যাক্টর

ভাইরাসের এই ক্যাটাগরিরই সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ ধরণের ভাইরাসগুলো সংক্রমিত পিসির যে কোনো একটি ফাইলে আশ্রয় নিয়ে এক্সিকিউট হওয়ামাত্র ফাইলটিকে ওভাররাইট করে ফেলে ও তারপর নিজেকে ছড়িয়ে দেয় ফোল্ডার থেকে ফোল্ডারে।

ফাইল ইনফ্যাক্টর ভাইরাস সাধারণত আক্রমণ করে .exe টাইপ ফাইলকে।

ম্যাক্রো ভাইরাস

ম্যাক্রো ভাইরাসের তল্লাট মাইক্রোসফট অফিস তথা ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি। ডিভাইস আক্রান্ত হলে অফিস ফাইল খুললে মূল লেখার বদলে আজেবাজে কিছু লেখাজোখা দেখা যায়।

তবে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহ দিকটি এই যে যারা আউটলুকের মাধ্যমে ইমেইল যোগাযোগ চালান তাদের ক্ষেত্রে আউটলুক থেকে পর্ণোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের নাম-ঠিকানাসহ মেইল চলে যায় সংরক্ষিত সকল ইমেইল ঠিকানায়।

ট্রোজান হর্স

নামের সাথে ‘ঘোড়া’ থাকলেও নিজে না ছুটে এরা বরং যে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে জায়গা করে নেয় তার মালিককেই হয়রানির একশেষ করে দেয়।

ট্রোজানের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে যে কোনো মুহুর্তে এটা হার্ড ডিস্ক ফরম্যাট করে দিতে পারে, মানে চিরতরে মুছে যাবে আপনার সব ছবি, ডাটা বা ফাইল।

ট্রোজানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে এরা ছদ্মবেশ ধরতে পারে! যেমন ধরুন একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হয়তো গেইম খেলতে খুব পছন্দ করেন তথা এই ধরণের প্রোগ্রামগুলোই বেশি চালান। ট্রোজান সেক্ষেত্রে নিজেকে একটি গেমিং ফোল্ডার হিসেবে শো করে অপেক্ষা করতে থাকে ক্লিকের জন্য। ব্যবহারকারী মনের ভুলে ওই ফাইলে ক্লিক করামাত্রই সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে যায়।

বহুমুখী ভাইরাস

ভাইরাসের দুনিয়ায় নতুন সংযোজন এই ক্যাটাগরির ভাইরাসরা। সাধারণত একটি ভাইরাস যে কোনো একটি মাধ্যমে ছড়ায় ও কাজ করে – কিন্তু, এই ক্যাটাগরির ভাইরাসগুলো একসাথে একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করে।

বহুমুখী মাধ্যম ও কার্যপ্রণালী ব্যবহার করার ফলে এই ধরণের ভাইরাসে ক্ষয়ক্ষতির হারও বেশি থাকে।

পলিমরফিক ভাইরাস

আরেকটি শক্তিশালী ভাইরাস-গ্রুপ পলিমরফিক। সংক্রমণের পর থেকে প্রতিটি বিস্তারে কোড চেইঞ্জ (সাধারণত এন্টিভাইরাসগুলো কোড নির্ধারনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে ভাইরাসদের – ফলে কোড চেইঞ্জ হয়ে গেলে একটি ভাইরাসকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না) করে এরা সম্মিলিত আক্রমণ করে আক্রান্ত ডিভাইসে।

রেসিডেন্ট ভাইরাস

ভাইরাসজগতের সবচেয়ে ‘বিশ্রী’ ভাইরাস নিঃসন্দেহে এই রেসিডেন্ট ভাইরাসরা।

অন্যান্য ভাইরাস আশ্রয় নেয় বিভিন্ন ফাইলে, যা হার্ড ডিস্কের বিভিন্ন ফোল্ডারে সে’ভ করা থাকে, কিন্তু রেসিডেন্ট ভাইরাস অপারেটিং সিস্টেম থাকাকালীন হার্ড ডিস্কে ঢুকলেও একসময় আসন গেড়ে বসে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের র‍্যাম তথা মূল মেমোরিতে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় এই যে একবার কম্পিউটারের স্মৃতিতে আশ্রয় নিলে এসব ভাইরাসকে তাড়ানো একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, মানে বুঝতেই পারছেন তখন সম্পুর্ণ কম্পিউটার বা স্মার্টফোনটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস

আমরা প্রায়ই দেখি কোনো কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে তাদের পেইজে প্রদর্শিত ভিডিও বা অন্য কোনো কনটেন্ট দেখতে বিভিন্ন এডঅন ইনস্টল করতে বলা হয়। এ ধরণের ফাইলগুলোর এক্সিকিউশন থেকে ছড়ায় ওয়েব স্ক্রিপটিং ভাইরাস।

ভাইরাসের সাত-সতেরো তো জানা হলো, আগামী পর্বে আমরা জানবো ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার উপায় কী কী।

আগের পোস্টঃ যেভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটার/স্মার্টফোন ভাইরাসের শিকার
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×