মেসেজটা আবার পড়ল তন্ময়, "জীবন আর জেনি এদিকে না আসলে তো তোমার এইদিকে আসা হতো না, আসার কথা মাথায়ও আসতো না। কি দরকার ওদের মাঝে হাড্ডি হবার!"
চিটাগং থেকে পরশু দুপুরে ঢাকা ফিরেছে অর্চি। ফিরেই আবার বিকেলে ক্লাস। গতকাল বিকেলে দেখা করার কথা, কিন্তু হঠাৎ দুপুরবেলা শিপু ভাই ফোন দিয়ে বলল, "জরুরী কাজ, অফিসে আয়।" বেরোতে বেরোতে রাত ৯টা। বাসায় ফিরতে ফিরতে ভাবছিল, আগামীকাল কি কি দুঃখ আছে কপালে।
সকালে ঘুম ভেঙ্গেই তন্ময়ের ব্যাংকে দৌড়। দ্রুত কাজ শেষ করে নাপিতের কাছে যেতে হবে। দু'দিন লেটের সাথে মুখ ভর্তি সুন্দরবন আনন্দদায়ক উপহার হবে বলে মনে হয় না। "জংলি দাড়ি ভর্তি মুখে সাথে প্রেমিকাদের গালে গাল ঘষে সেলফি তুলতে না পারার দুঃখই, দাড়ির প্রতি তাদের এত অনীহার কারণ!" এই কথা বলার পর ১ সপ্তাহ তন্ময়ের আকাশে 'পাখিটা' ওড়েনি, দেখা দেয় নি। দাড়ি কামাবি না ভালো কথা, তাই বলে ছবি নিয়ে কটাক্ষ! অমার্জনীয় অপরাধ।
ভাবনা গুলো সুখের হয়ে যাচ্ছে। না না, হবে না। আমি এখন রাগ, অনেক রাগ। ২০ মিনিট আগেই বলল বের হচ্ছে। জীবনকে বলেছি আমরা আসছি। তার কিছুক্ষণ পরেই টেক্সট করল, ভালো লাগছে না, বের হবো না। এখনো দেখা করতে পারেনি বলে অর্চি রাগ করেছে, সেটা তন্ময় বুঝতে পারছিল। কিন্তু বেরোবে বলে না করে দিবে, এতো রাগ তো হবার মতো কি হলো? এখন বুঝতে পারছে, "জীবন আর জেনি মালঞ্চতে লাঞ্চ করতে ডাকছে, যাবে...?" এই প্রশ্নের ফলাফল ভোগ করছে সে। রাগে গিজগিজ করতে করতে বাসায় ঢুকলো।
ছোট ভাই আরাম করে শুয়ে টিভিতে মুভি দেখছে। টিভির দিকে তাকিয়ে রক্ত মাথায় উঠে গেল তন্ময়ের; এক্সটার্নাল হার্ডডিস্কটা টিভির সাথে ঝুলছে। শান্তভাবে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে শুরু করল, "এটা এভাবে ঝুলছে কেন?" উত্তর দেবার আগেই খুলে নিয়ে ছুড়ে মারল সেটা। তারপর বলল, "এটা এভাবে পড়ে গিয়ে যদি ভেঙ্গে যায় তখন কী হবে?"
কুড়িয়ে এনে ছোট ভাই তন্ময়ের হাতে দিল হার্ডডিস্ক। তাকিয়ে ঝাঁকি খেয়ে সম্বিত ফিরে পেল, ছুড়ে মেরে তারপর ভেঙ্গে গেলে কী হবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করে আমার কর্মকান্ড দ্বারা আসলে কী বুঝাতে চাচ্ছে সে! রাগে বোধহয় মস্তিষ্ক ঠিকঠাক ফাংশন করছে না। লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোন হাতে টেক্সট করতে শুরু করল তন্ময়, "ব্যাংকে কিছু কাজ ছিল, শেষ করেই তোমাকে নিয়ে বের হবার প্ল্যান করছিলাম, কিন্তু হঠাৎ জীবন ফোন দেয়াতে আগেই বের হতে বললাম। এটা ঠিক অবশ্যই আমি কাউকে অনুমান করতে বাধা দান করতে পারি না, কিন্তু জিজ্ঞেস করার অপশন থাকলে শুধু অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোন পদক্ষেপ না নেয়াটাই বোধহয় শ্রেয়।"
টেক্সট সেন্ড করে আকাশের দিকে তাকিয়ে মন আরও খারাপ হয়ে গেল। মেঘলা আকাশ, দখিনা বাতাস; ঢাকা শহরের দূর্লভতম সময় গুলোর একটি। মনে মনে ভাবল তন্ময়,"ধ্যাৎ! শালার রাগ, হুদাই একটা প্রেমময় দিন মিস করলাম।"