somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের যা বলার ছিল

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক মানুষ কিছু অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আমাদের মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পত্রিকার কলাম আরো বিভিন্ন সব উৎস থেকে আমরা এসব মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছি। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে শহরের রিকশাচালক পযর্ন্ত সবাই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার গুলো সম্পর্কে অবগত। সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যখন গবেষণার কাজে গিয়েছি সেখানেও দেখেছি গরিব, অশিক্ষিত রোগিরাও স্টাফদের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছে, ‘হামরা ভোট দিয়া সরকার বানাইছু, মুই ওষুধের জন্যে টাকা দিবু ক্যান বাহে?’ জীবন ধারণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা- এসব বিচারে বাংলাদেশিরা যথেষ্ট সোচ্চার বলেই মনে হয়। হয়ত সে জন্যই এ জনগোষ্ঠী ভারতবর্ষের বেশিরভাগ জাতি থেকে ব্যতিক্রম হিসেবে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক হতে পেরেছে। বহু চড়াই উতরাই পেড়িয়ে নাম মাত্র হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রেখে বেঁচে বর্তে আছে। অসংখ্য অপ্রাপ্তির যন্ত্রণার মাঝেও এদেশের কষ্টসহিষ্ণু মানুষগুলো এই ভেবে সান্ত্বনা পায় যে, সে চাইলেই তার জনপ্রতিনিধি নেতাটিকে কষে দুটো গালি অন্তত দিতে পারে, সেই অধিকার তার রয়েছে। পেটে ভাত আর গায়ে কাপড় থাকুক আর নাই থাকুক।

এর সবকিছুই ঠিক আছে। এই সামান্য সান্ত্বনাটুকু থেকে মানুষকে বঞ্চিত করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমরা কদাচ ভুলে যাই অধিকারের সাথেই লেপ্টে থাকা মুদ্রার অপর পিঠের মতোই আরেক অকৈতব উচ্চারণ- ‘দায়িত্ব’। যেখানেই অধিকারের দাবি সেখানেই দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা। বিশ্বের নানা দেশে পেশাগত ও নানা কারণে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বেশিরভাগ দেশের নাগরিকই নিজ নিজ দায় দায়িত্ব বিষয়ে আমাদের দেশের জনগণের চেয়ে বেশি সচেতন। সুইজারল্যান্ডে দেখেছি মানুষ কিভাবে বেশ খানিকটা হেঁটে গিয়ে হলেও ঠিক জেব্রা ক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হয়, এমনকি রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকলেও। সেখানে বিভিন্ন ধরণের আবর্জনা ফেলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডাস্টবিন রয়েছে। একজন মানুষকেও চোখে পড়েনি এর ব্যতিক্রম করতে, রাস্তায় ময়লা ফেলা তো দুরের ব্যাপার। আমরা জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার সম্পর্কে যতটা সচেতন হয়েছি, দায়িত্বগুলো সম্পর্কে কি ততটা হয়েছি? আদৌ কি সচেতন হয়েছি বা চিন্তা করে দেখেছি নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্বগুলো কি কি?

এখন রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ চলছে। পেপারে পড়েছি এক জার্মানির সমর্থক জমি বিক্রি করে সে দেশের র্দীর্ঘতম পতাকাটি বানানোর প্রয়াস পেয়েছেন। অথচ ইউরোপের রাস্তায় সেই দেশের পতাকা ছাড়া অন্য কোন দেশের পতাকা কল্পনাও করা যায়না। এ যে নিজের সার্বভৌম সত্তার প্রতি তীব্রতম কটাক্ষ, এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বেআইনি তো বটেই। সেদিন এক ফেসবুক ভিডিওতে ব্রাজিলের সাওপাওলো প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে দেখলাম শহরের উঁচু বিল্ডিংগুলো মোবাইলের ক্যামেরায় দেখাচ্ছে- কোথাও কোন পতাকা নেই, এমনকি ব্রাজিলের পতাকাও নয়। ভদ্রলোক আরও বলছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা ওড়ানোর জন্য তাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে, এবং মাত্র কয়েক ঘন্টা তা ওড়ানোর অনুমতি তারা পেয়েছিলেন। আমার মনে হয় আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের যত পতাকা আমার দেশের আকাশে ওড়ে, ওইসব দেশে নিজ দেশের পতাকাও এত ওড়েনা।



ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলাম; বড় বড় উদাহরণ তো আমাদের চার পাশেই ছড়ানো ছিটানো আছে। লিখতে গেলে মহাকাব্যিক বিশালতা এ লেখাকে আকীর্ণ করবে। একটা উপলব্ধি শেয়ার করে শেষ করি। আমাদের পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশে এমনকি আমাদের মিডিয়াতেও মানুষকে কিভাবে মস্তিষ্ক খাটানো না লাগে তার প্রচ্ছন্ন শিক্ষাই দেয়া হয়। কারণ, মানুষ চিন্তা করতে শিখলেই তো বিপদ। মানুষ বুঝে যাবে কিভাবে শোষণের মিহিন জাল পেতে রাখা আছে চারিদিকের আপাত নির্দোষ বিজ্ঞাপনের চাকচিক্যে, তথাকখিত গণতন্ত্রের মোহময়ী শ্লোগানে, আমাদের পুঁজিবাদী-ভোগবাদী বিলাসী জীবনটার প্রতিটা পরতে। আমাদের স্বাধীনতাকামী পূর্বপুরুষেরা নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন আমাদের ছেলেমেয়েরা আর কিছু করুক আর না করুক অন্তত স্বচ্ছ চিন্তা করতে শিখবে। কৌতূহলী হয়ে উঠবে আমাদের দিনানুদৈনিকতার অসামঞ্জস্যগুলো সম্পর্কে, প্রতিকার করতে পারুক আর না-ই পারুক। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একটা লাইন লেখা আছে, কবি আসাদ চৌধুরির, ‘তোমাদের যা বলার ছিল, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?’ আজকের বাংলাদেশ কি আসলেই তা বলছে যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা বলতে চেয়েছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×