somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম আলোর 'সীমানা ছাড়িয়ে' বিভাগে প্রকাশিত আমার লেখাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল ক্যাম্পাসের ডিসপ্লে স্ক্রিনে একটি ট্রিভিয়া কুইজ চোখে পড়ল; কোন সে ক্যাম্পাস যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটানা একুশ বছর ধরে সর্বোচ্চ স্থান ধরে রাখা হাসপাতাল; বিশ্বের এক নম্বর পাবলিক হেলথ স্কুল; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্যা ঙ্কিংয়ে এক নম্বর নার্সিং স্কুল এবং তিন নম্বর মেডিকেল স্কুল অবস্থিত? নিচেই বোল্ড হরফে উত্তরটি লেখা- জন্স হপকিন্স মেডিকেল ক্যাম্পাস; জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত অনেকগুলো ক্যাম্পাসের মধ্যে যা সবচেয়ে স্বনামধন্য।


জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের নতুন ভবন

যুক্তরাষ্টের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রধান সেশন হল হেমন্তকালীন সেশন বা ফল সেশন, যা সাধারণত আগস্ট মাসের শেষে কিম্বা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আরম্ভ হয়। স্কুল অব পাবলিক হেলথের ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ডিপার্টমেন্টে, ডক্টরেট ইন পাবলিক হেলথ প্রোগ্রামে, তৃতীয় বর্ষে পা দিয়েছি গত মাসে শুরু হওয়া ফল সেশন থেকে।

দেশের বাইরে যারা পড়তে আসতে চায় তাদের অন্যতম জিজ্ঞাসা থাকে অর্থায়নের ব্যাপারে। তাদের উদ্দেশ্যে আমার অভিজ্ঞতাসঞ্জাত পরামর্শ হল, আগে ভর্তি নিশ্চিত করা উচিত। ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে ফান্ডিং সচরাচর আটকে থাকেনা। তাছাড়া ভর্তির পর অন্তত এক বছর ভর্তি মুলতবি রাখা যায়। এর মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদন করলে ভর্তি নিশ্চিত হওয়া ছাত্র ছাত্রীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।

আমার ফান্ডিং প্রাপ্তি ছিল বেশ নাটকীয়। জন্স হপকিন্সে সুযোগ পাওয়ার পর যখন ফান্ডিংয়ের জন্য হন্যে হয়ে পরিচিত স্বল্প পরিচিত সম্ভাব্য উৎসগুলোতে ধর্না দিচ্ছি, তখনি এ্যাডমিশন ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি ইমেইল পেলাম। জন্স হপকিন্সের বাংলাদেশি অধ্যাপক, নবজাতকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণার বিশ্ববরেণ্য পুরোধা ডক্টর আবদুল্লাহ বাকী তাঁর সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন। পরে জানতে পারলাম বাংলাদেশি একজন ছাত্র হপকিন্সে সুযোগ পেয়েছে এ খবর পেয়ে তিনি স্বত:প্রণোদিত হয়ে তাঁর আওতায় থাকা একটি ট্রেনিং ফান্ড থেকে ফেলোশিপের ব্যবস্থা করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন “মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ”। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ এর সাথে যোগ করেছিলেন, “ তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক”। আমি এক্ষেত্রে কবিগুরুর অনুগামী।

পিএইচডির ক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি প্রায়:শই হতে হয়, “প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে, যিনি এ্যাডমিশন দেবেন?” জানিয়ে রাখি, ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের (বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে) ডক্টরেট প্রোগ্রামে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার ডক্টরেট প্রোগ্রামের জন্য আগে থেকে প্রফেসরের সন্ধান করতে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রয়োজন হয়না। এখানে সাধারণত জিআরই’র স্কোর, রেফারেন্স, স্টেটমেন্ট অফ পারপাজ, কাজের অভিজ্ঞতা, কখনো পাবলিকেশন ইত্যাদি নানা মানদন্ডের আলোকে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে মাস্টার্স বা অন্যান্য কোর্সের মতোই এডমিশন দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ পিএইচডি প্রোগ্রামে দেড় থেকে দু’বছর কোর্সওয়ার্ক করা লাগে, যা ইউরোপিয় ডক্টরেট থেকে আরেকটি পার্থক্যের জায়গা। কোর্সওয়ার্কের সময় থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণার ক্ষেত্র অনুযায়ী এডভাইজার ঠিক করে দেয়া হয়।

পড়াশুনার বাইরে আরেকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে অসংখ্যবার; ঢাকার বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন অফিসারকে দিয়ে যার শুরু- “দেশের বাইরে ডক্টরেট করতে যাচ্ছেন, দেশে তো নিশ্চয়ই ফিরবেন না?” ইমিগ্রেশন অফিসারকে যে উত্তর দিয়েছিলাম, সে উত্তরই দিয়ে আসছি এখন পর্যন্ত বারবার সবাইকেই। তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, “বাড়ি থেকে অফিসে কাজ করতে এসেছেন; অফিসেই কি থেকে যাবেন?” বাড়ি থেকে কাজে বের হয়ে, কাজ শেষে বাড়িতে ফিরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা আমাদের মননে এর ব্যতিক্রমটিকেই স্বাভাবিক বানিয়ে নিয়েছি। নিজেরাও অস্বাভাবিক ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আছি, অপরকেও তাতে প্ররোচিত করছি। তবে আশাবাদী হই যখন দেখি আমার সমবয়সী, তথা আমার জেনারেশনের আরো অনেকেই আজকাল পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে দেশের কাজে লাগাতে চায়। আজ থেকে চার পাঁচ বছর আগেও হয়ত এ ট্রেন্ডটা চোখে পড়তনা, এখন পড়ে।

আরেকটি ছোট্ট পরামর্শ দিয়ে শেষ করব। আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটি কথাকে একটু ঘুরিয়ে আমার অনুজদেরকে বলি, “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় নয়; মানুষ তার স্বপ্নের চাইতেও বড়। কারণ মানুষ তার সম্ভাবনাকে জানেনা”। জেনেভার নাটালির সাথে জামালপুরের নাজমার কোনই পার্থক্য নেই মৌলিক জৈব কাঠামোর দিক থেকে। দু’জনের সম্ভাবনাই সমান, দু’জনের সম্ভাবনাই অসীম। বিশ্বায়ন আমাদেরকে হয়ত অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন করে দিয়েছে, কিন্তু এটাও সত্য যে বিশ্বায়ন আমাদেরকে একটি গ্লোবাল ভিলেজের বিশ্ববাসিন্দা হিসেবে অফুরন্ত সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দিয়েছে। এখন সময় কেবল অপরিসীম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বজয়ের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ার।

[লেখাটির খন্ডিত অংশ প্রথম আলোতে ১৩, অক্টোবর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত হয়]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৫:১৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×