somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারের টাকায় মসজিদ বানাতে হবে এটা সংবিধানে নাই: শাহরিয়ার

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারের টাকায় যে মসজিদ-মাদরাসা বানাতে হবে এটা তো আমাদের সংবিধানে নাই। আমাদের দেশে কি মসজিদ-মাদরাসার এতই অভাব পড়েছে? যে সরকারের টাকায় মসজিদ-মাদরাসা করতে হবে? সারা দেশে মডেল মসজিদ বানানোর সরকারি উদ্যোগ কেন নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন গবেষক, তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, কেন হঠাৎ করে মডেল মসজিদ বানাতে হচ্ছে?

শুক্রবার রাতে নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে চট্টগ্রাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির সরকারের কাছে এসব প্রশ্ন তুলে ধরেন।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী গত মাসে সংসদে বলেছেন, দেশে ২১ হাজার ৫০০ স্কুলে গত পাঁচ বছর ধরে হেডমাস্টার নেই। বিজ্ঞানের শিক্ষক নেই, ইতিহাসের শিক্ষক নেই। বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নেই ল্যাবরেটরি। সাধারণ শিক্ষাকেও মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক করে ফেলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই দাবিটা কে করেছে? কে দাবি করেছে আমাদের মডেল মসজিদ করতে হবে? আমাদের কি মসজিদের অভাব রয়েছে? এই দাবিটা কি জামায়াত-হেফাজত করেছে? হেফাজতও তো কখনো দাবি করেনি যে আমাদের দেশে সরকারের টাকায় মসজিদ-মাদরাসা করতে হবে।

শাহরিয়ার কবির আরো বলেন, ইসলামের বিধান যারা জানেন, তারা জানেন সরকারিভাবে মসজিদ-মাদরাসা বানানো যায় না। মাদরাসা-মসজিদ এসব ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তিগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণের পয়সায় এগুলো চলবে। দেওবন্দী মাদরাসা রাষ্ট্রের কাছ থেকে কখনও টাকা নেয় না। তারা বলেছে এটা হারাম। তাহলে এই হারাম কাজটা কেন আমাদের সরকার করছে?

দেশের কওমী মাদরাসা ও শিক্ষা সম্পর্কে শাহরিয়ার কবির বলেন, কওমি মাদরাসাগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। মাদরাসায় বাংলা এবং ইতিহাস পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেন আমাদের ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে না ?

তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ হাজার কওমি মাদরাসার উপর জরিপ করেছি, যেখানে হেফাজত শক্তিশালী। সেখানে তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না? ৮০ ভাগ ছাত্র বলেছে, ক্লাসে শিক্ষক বলেছে, গান গাওয়া হারাম। শতকরা দুই ভাগ বলেছে, এটা হিন্দুর লেখা গান। কেউ কেউ বলেছে এটা ইন্ডিয়ান লোকের লেখা গান, সে জন্য গাওয়া হয় না। এই হচ্ছে আমাদের কওমি মাদরাসার চিত্র।

আগামী সংসদ নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর অতীতের যে কোনো সময়ের বেশি সহিংসতার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের জন্য নির্বাচন উৎসবমুখর নয়, আতঙ্কের। আমাদের দেশে ২০০১ সাল, ২০০৮ সাল এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরেও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়েছে। তবে এবার আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে, সামনের নির্বাচনে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সহিংসতা হবে এবং এর প্রধান শিকার হবেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। মায়ানমারে তাদের উপর গণহত্যা হয়েছে, এটা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু আমাদের দেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে জামায়াত এবং হেফাজত মিলে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এক হাজার কওমি মাদরাসা তারা সেখানে তৈরি করেছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, জামায়াত এবং হেফাজত এক লাখ রোহিঙ্গাকে জিহাদি বানাচ্ছে। তাহলে ভবিষ্যতে এই রোহিঙ্গারা শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো উপমহাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাকে ৯৬ সালেও বলেছি আমাদের উপর আস্থা রাখতে হবে। জামায়াতের উপর নয়। আপনি যদি কোনোদিন এই দেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বলেও ঘোষণা দেন, তারপরও তারা আপনাকে ভোট দেবে না। দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সৌদি আরব হতে চাই না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানবিক বাংলাদেশ চাই।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতা আরেকদিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানের এই হিপোক্রেটিক রূপ রেখে এ দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে প্রচার করা হাস্যকর এবং প্রতারণার শামিল। আমরা এই সংবিধান মানি না। আমরা বাহাত্তরের সংবিধান পুর্নবহাল চাই। আমরা বঙ্গববন্ধুর বাংলাদেশে কখন ফিরতে পারব জানি না। তবে আমরা সংখ্যালঘুরা বঙ্গবন্ধুবিহীন এই বাংলাদেশে অস্তিত্বের সংকটে আছি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই দাবি নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দল এবং জোটের কাছে যাব। যারা এসব দাবি তাদের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবে না, আমরা সেই দল ও জোটকে বর্জন করব। যেসব দল সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীকে মনোনয়ন দেবে, সকল সংখ্যালঘুরা একযোগে সেই প্রার্থী এবং তার দলকে বর্জন করবেন।

সমাবেশে জনসংহতি সমিতির একাংশের সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, শুধু মুখে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বললে হবে না। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রই যদি হবে তাহলে মন্দিরে মূর্তি ভাঙে কেন ? গ্রামে সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন জ্বলে কেন? দেশে থাকলে ভোট, দেশ ছেড়ে গেলে ভিটা-এই নীতি নিয়ে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করা যায় না।

সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়ক প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য, সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হক, পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.জীনবোধি ভিক্ষু, নির্মল রোজারিওসহ আরো অনেকে।

view this link

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×