শেখ মুজিব তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন, ‘আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজোরিটি পার্টির নেতা।’ এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শেখ মুজিব নিজেকে সাবেক পাকিস্তানের নেতা হিসেবে মনে করতেন। কেবলই পূর্ব পাকিস্তানের নেতা হিসেবে মনে করতেন না। তিনি নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন সাবেক নিখিল পাকিস্তানকে; কেবলমাত্র বাংলাদেশকে নয়। অনেকে বলছেন, শেখ মুজিব হলেন, আজকের বাংলাদেশের জনক। কিন্তু তিনি নিজে এ ধরনের কোনো মনোভাব পোষণ করেননি। তিনি চেয়েছেন সাবেক সমগ্র পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিতে। শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণের অনেক রকম বিকৃতি ঘটানো হয়েছে। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের একটি শুদ্ধ নমুনা পাওয়া যাবে ‘স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা’ নামক পুস্তিকায়। বইটি সম্পাদনা করেন, ফজলুল হক বাঙ্গালী, মেসবাহউদ্দিন ও নজরুল ইসলাম। (প্রকাশনা ও প্রচার সংস্থা, মুজিবনগর, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত (১৯৭১)।) এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল ইয়াহিয়া কর্তৃক প্রদত্ত Legal Framework Order (1970) মেনে। যাতে বলা হয়েছিল পাকিস্তান হবে একটা প্রজাতন্ত্র ও ফেডারেশন। এর রাষ্ট্রিক মতাদর্শ (Ideology) হতে হবে ইসলাম এবং এই রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মুসলমান ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী হতে পারবেন না। এই মূলনীতিসমূহের সঙ্গে কোন অসঙ্গতিপূর্ণ সংবিধান রচিত হলে প্রেসিডেন্ট (ইয়াহিয়া) পারবেন তা বাতিল করে দিতে।
১৯৭১-এর পর পরিস্থিতি নানা দিক থেকেই ভিন্ন হয়ে পড়েছে। ১৯৯৮ সালে ১১ মে ভারত রাজস্থানের মরুভূমিতে ভূগর্ভে তার নিজের তৈরি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু পাকিস্তানও এ ক্ষেত্রে ভারতের চাইতে পিছিয়ে নেই। ১৯৯৮ সালের ২৮ মে বেলুচিস্তানের মরুভূমির ভূগর্ভে পাকিস্তান ঘটায় তার তৈরি পাঁচটি পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ। এরপর ঐ একই সালে আরো শক্তিশালী পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় পাকিস্তান। যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় হইচই। কারণ, পাকিস্তান একটি ধনী রাষ্ট্র নয়। পাকিস্তান বানাতে পেরেছে অতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা। গুজব রটে পাকিস্তান খুব সস্তায় পরমাণু বোমা তৈরির কৌশল আবিষ্কার করতে পেরেছে। ভারত যা পারেনি। পাকিস্তান যদি সস্তায় পারমাণবিক বোমা তৈরি করে অন্য দেশে বিক্রি করে, তবে তার পরিণতি দাঁড়াতে পারে ভয়াবহ। কিন্তু পাকিস্তান এভাবে বোমা তৈরি করে বিদেশের কাছে বিক্রি করেনি। রেখেছে কেবল নিজের প্রতিরক্ষার জন্য সংরক্ষিত। পাকিস্তান এখন তৈরি করতে পারছে এমন রকেট, যার সাহায্যে তার পক্ষে সম্ভব ভারতের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ। সমর বিজ্ঞানের দিক থেকে পাকিস্তানকে অবহেলা করা যায় না। পরিস্থিতি পাল্টেছে ঠিকই। কিন্তু সেটা যে ভারতের জন্য অনুকূল হয়েছে, এরকম ভাববার কোনো কারণ নেই। ভারত এখন মিত্রবিহীন দেশ। কিন্তু পাকিস্তান ঠিক তা নয়। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে চীন গড়েছে নৌঘাঁটি। কাশ্মিরের কাছে চীন গড়েছে এমন সড়ক, যার মাধ্যমে সে যে কোন সময় লাদাঘ অঞ্চলে সৈন্য পাঠাতে পারে। শ্রীলঙ্কার উত্তরে জাফলা অঞ্চলেও চীন নৌঘাঁটি গড়ে তুলেছে বলে প্রকাশ। নেপালের সাথে চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হতে পেরেছে খুবই উন্নত। বেইজিং থেকে কাঠমান্ডু এখন সহজেই আসতে পারা সম্ভব। আমাদের দেশে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীর দল ভারতকে যতটা শক্তিমান ভাবছেন, ভারত আসলে সে পর্যায়ে এখনো এসে পৌঁছাতে পেরেছে বলে মনে করবার কোনো হেতু নেই। আওয়ামী লীগ যদি মনে করেই থাকে যে, বাংলাদেশে সে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে পারবে, তবে মনে হয় সে ভুল হিসাবই করছে।
সূত্র- ইন্দিরা গান্ধী একটি বই My Truth , India Speaks
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১৮