গুরু গোবিন্দ সিংহ জি বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের পাটনা শহরে ১৬৬৬ সালের ২২ শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। গুরু গোবিন্দ ১৬৭৫ সালের ১১ নভেম্বর মাত্র নয় বছর বয়সে পিতা গুরু তেগ বাহাদুরের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন শিখ জাতির নেতা, যোদ্ধা, কবি এবং একজন দার্শনিকও। শিখ সমাজে গুরু গোবিন্দ হলেন আদর্শ পৌরুষের প্রতীক। তিনি তার উচ্চশিক্ষা, দক্ষ অশ্বচালনা, সশস্ত্র যুদ্ধবিদ্যায় পটুতা ও চারিত্র্য দাক্ষিণ্যের জন্য প্রসিদ্ধ।শিখদের আদর্শ এবং দৈনন্দিন জীবনে গুরু গোবিন্দ সিংহের জীবন ও শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তার খালসা প্রবর্তন শিখ ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি মুঘল এবং শিবালিক পার্বত্য অঞ্চলের মুঘল সহকারী রাজাদের সঙ্গে কুড়িটি আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। গুরু গোবিন্দই শেষ মানব শিখ গুরু। ১৭০৮ সালের ৭ অক্টোবর তিনি শিখধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিবকে শিখদের পরবর্তী এবং চিরস্থায়ী গুরু ঘোষণা করেন। তার চার ছেলে ছিল তারা হলেন অজিত সিংহ, জুহর সিংহ, জোরাওয়ার সিংহ, ফতেহ সিংহ।গুরু গোবিন্দ সিংহ যখন জন্মগ্রহন করে ছিলেন তখন থেকেই তার নাম ছিল গোবিন্দ রাই। তার পিতা ছিলেন গুরু তেগ বাহাদুর আর তার মা ছিলেন মাতা গুজরি। গুরু গোবিন্দ সিংহ তার জীবনের প্রথম ৫ বছর পাটনা শহরে কাটান। একবার পাটনা শহরের রাজা ফতে চাঁদ এবং তার রানী, যারা সন্তানহীন ছিলেন, শিব দত্ত এর কাছে আসেন এবং একজন সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতে বলেন। শিব দত্ত তাদের শিশু গুরু গোবিন্দ সিংহ এর সাথে দেখা করতে ও তার আর্শিবাদ নিতে বলেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ এর সাথে দেখা করার পর রানী তাকে ছেলে সন্তানের জন্য আর্শিবাদ দিতে অনুরোধ করেন, এতে গুরু গোবিন্দ সিংহ হাসি দিয়ে বলেন যে তাদের ছেলে সন্তানের দরকার কি ? তাকেই তারা ছেলে হিসাবে ডাকতে পারেন। তারপর হতে রানী তাকে ছেলে মর্যাদা দেন এবং তাকে ছেলে বলে ডাকতেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ তখন প্রায়ই তাদের প্রসাদে যেতেন ও খেলা করতেন। রানী তাকে এবং তার খেলার সাথীদের পুরি ও ছোলার ডাল রান্না করে দিতেন। আজও সেই প্রসাদে পুরি ও ছোলার ডাল রান্না করা হয় এবং তা গরীব মানুষের মাঝে বিতরন করা হয়। প্রসাদটি এখন গুরুদোয়ারাতে পরিনত হয়েছে। নওয়াব করিম বখশ ও রহিম বখশ তাকে পছন্দ করতেন এবং গুরু গোবিন্দ সিংহকে একটি গ্রাম এবং বাগান উপহার দিয়েছিলেন।
গুরু তেগ বাহাদুর আনন্দপুর নগরী এর সূচনা করেন ১৬৬৫ সালে বিলাসপুরের,কাহলুর শাসকের হতে জমি ক্রয় এর মাধ্যমে। তার পূর্ব ভারত ভ্রমণ শেষ হলে তিনি তার পরিবারকে আনন্দপুর আসতে বলেন। গুরু গোবিন্দ সিংহ ১৬৭২ সালে আনন্দপুরে পৌছান। গুরু গোবিন্দ সিংহ শুরুর শিক্ষা জীবনে পাঞ্জাবি, সংস্কৃতি, পারসিক, আরবি ভাষা শিখেন, এবং একজন সেনা হিসাবে প্রশিক্ষন নেন। তিনি হিন্দি ও সংস্কৃত পাটনা শহরে শিক্ষা লাভ করেন। আনন্দপুরে, তিনি পাঞ্জাবি শিখেন সাহিব চাঁদ, এবং পারসিক কাজী পীর মুহাম্মদের থেকে।
১৬৮৫ সালের এপ্রিল মাসে গুরু গোবিন্দ সিংহ বাসস্থান বদল করে পানোটাতে যান সিমুর রাজ্যর রাজা মাত প্রকাশ এর অনুরোধে। সিমুর রাজ্যর ইতিহাস অনুসারে গুরু গোবিন্দ সিংহ আনন্দপুর নগরী ত্যাগ করতে বাধ্য হন ভিম চাঁদ এর সাথে মতবিরোধ থাকার জন্য এবং তখন টোকা নামক স্থানে চলে যান। টোকা নামক স্থান হতে তিনি সিমুর রাজ্যর রাজধানীতে চলে যান। তিনি সেখান হতে পানোটাতে গমন করেন।সিমুর রাজ্যর রাজা মাত প্রকাশ অনুরোধ করেন গুরু গোবিন্দ সিংহকে তার রাজ্যতে আসার জন্য যাতে করে রাজা ফতে সাহ যিনি গুরওয়ালের শাসক ছিলেন তার বিপক্ষে যাতে পদ এবং অবস্থান সুরক্ষিত হয়। রাজা মাত প্রকাশ এর অনুরোধে গুরু গোবিন্দ সিংহ তার অনুসারীদের সাহায্যে খুবই অল্প সময়ের মাঝে পানোটাতে একটি দূর্গ নির্মাণ করেন । তিনি তার সেনাবাহিনীতে সেনা সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। পানোটাতে গুরু গোবিন্দ সিংহ তিন বছর অবস্থান করেন এবং অনেক শ্লোক রচনা করেন। সিমুর রাজ্যর রাজা মাত প্রকাশ ও গুরওয়ালের রাজা ফতে সাহের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকে এবং পানোটা এর কাছাকাছি স্থান থেকে অবশেষ ভাংগানী এর যুদ্ধ শুরু হয়। ১৬৮৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর গুরওয়ালের রাজা ফতে সাহ আক্রমণ শুরু করেন।আর সেই যুদ্ধে রাজা গুরু গোবিন্দ সিংহ জয় লাভ করেন।তার মৃত্যু হয় ১৭০৮সালের ৭ই অক্টোবর ।
সূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৯ রাত ১১:৫৪