আউরেলিয়ুস আউগুস্তিনুস বা সেইন্ট অগাস্টিন হলেন, প্রাচীন যুগের খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদ, গীর্জা পদ্ধতির লাতিন জনকদের একজন এবং সম্ভবত স্বয়ং যীশুর কথিত শিষ্য সাধু পলর পরেই খ্রিস্ট ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক ছিলেন। ইংরেজভাষীদের কাছে তিনি সেইন্ট অগাস্টিন নামেও পরিচিত, বাংলায় তাকে সাধু অগাস্টিনও বলা হয়। তিনি রোমান অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকাতে বড় হয়েছেন এবং তথাকার হিপ্পো রেগিয়ুস বর্তমানে আলজেরিয়ার আন্নাবা শহর নামক নগরীর বিশপ ছিলেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা অনেক যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত Confessions এবং City of God যে বই দুটো বাইবেলের ভাষ্য হিসেবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং মধ্যযুগীয় ও এমনকি তিনি আধুনিক খ্রিস্টীয় চিন্তাধারারও ভিত্তি রচনা করেছিলেন ।সেইন্ট অগাস্টিন ৩৫৪ সালে উত্তর আফ্রিকার ট্যাগাস্টা নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন প্যাগান এবং মাতা ছিলেন খ্রিস্টান। তার মাতা তাকে খ্রিস্টধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞানদান করেন এবং ৩৪ বছর বয়সে তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।আউগুস্তিনুস পড়াশোনা করেছিলেন ভূমধ্যসাগর তীরের বিখ্যাত শহর কার্থেজে যা বর্তমানে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের একটি উপশহর। ৩৮৩ সালে তিনি ইতালির মিলানে অলঙ্কারশাস্ত্রের শিক্ষক নিযুক্ত হন। খ্রিস্টান ধর্মের অন্যতম প্রধান দার্শনিক হলেও ছাত্র জীবনে আসলে তিনি ব্যাবিলনিয়ার পারসিক ধর্মগুরু মানি প্রবর্তিত ধর্মের আইন-ই-মানি, Manichaeism অনুসারী ছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন মিলানের ধর্মযাজক আউরেলিয়ুস আম্ব্রোসিয়ুসের প্রচারকার্য এবং প্রভাবে।
আউগুস্তিনুস'র ব্যাপটিজম সম্পন্ন হয় ৩৮৭ সালের পুনরুত্থান দিবসে ইস্টার। তারপর তিনি উত্তর আফ্রিকায় তার জন্মস্থান তাগাস্তে-তে Tagaste, প্রাচীন নুমিদিয়া সম্রাজ্যের নগরী, যার ধ্বংসস্তূপের উপর বর্তমান আলজেরিয়ার সুক আহরাস শহর গড়ে উঠেছে সেখানে ফিরে গিয়ে নিজের এবং কয়েকজন বন্ধুর জন্য একটি মঠ গড়ে তোলেন। ৩৯১ সালে তাকে হিপ্পোর ধর্মযাজক পদে নিয়োগ করা হয়। যাজক হিসেবে খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন, তার অন্তত ৩৫০ টি হিতোপদেশমূলক বক্তৃতা সংরক্ষিত আছে। তাছাড়া আগে তিনি যে মানির ধর্মের অনুসারী ছিলেন পরবর্তীকালে সেই মতাদর্শকেই ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অনেক লড়েছেন।৩৯৬ সালে তাকে হিপ্পোর সহকারী বিশপ পড়ে নিযুক্ত করা হয়, যে ক্ষমতাবলে তদানীন্তন বিশপের মৃত্যুর পর তারই বিশপ হওয়ার কথা।তিনি ৪৩০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই নগরীর বিশপ ছিলেন।তিনি নিজের তৈরি মঠ ত্যাগ করলেও আজীবন সন্ন্যাসব্রত পালন করেছেন। তিনি এমন একটি রেগুলা তথা আইনশাস্ত্র রেখে গেছেন যা আধুনিক পাদ্রিবৃত্তির মূলভিত্তি।আর এই কারণেই তাকে সকল পাদ্রির পেট্রন সেইন্ট বলা হয়। মঠে সন্ন্যাস জীবন যাপনের নিয়ম তিনিই প্রথম বিধিবদ্ধ করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: মো. আবদুল ওদুদ,দ্বিতীয় সংস্করণ, এপ্রিল ২০১৪। রাষ্ট্রদর্শন। ঢাকা: মনন পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ১৫১।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩৩