মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী আর জেএসসি পরীক্ষা নাকি বাচ্চাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। বুঝলাম, মানুষ শিশু থেকে বুড়ো হয়, বুড়ো হয়ে শিশুদেরও বুড়ো বানিয়ে দিতে চায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আবার প্রমাণ করে দিলেন, জনগণের সঙ্গে আপনাদের রাজনীতিবিদদের কোনো কানেকশন নাই। কত জন শিশুর সঙ্গে কথা বলে আপনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন?
আপনি বলেছেন, শিশুরা সার্টিফিকেট পাচ্ছে, এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। আমি একজন শিক্ষক ছিলাম। আমি জানি, শিশুদের সার্টিফিকেট পাওয়ার কোনো আকাঙ্ক্ষাই নেই। তারা চায় পাখির মতো উড়তে, নদীর মতো কলকলাতে, ফুলের মতো সুবাস ছড়াতে। তাদের খেলার সময় দিন। তাদের চার পাশের জগত দেখে বিস্মিত আর মুগ্ধ হবার অবকাশ দিন। তাদের মেরুদন্ড সুদৃঢ় হতে দিন।
আপনি হয়ত জানেন না, তাদের এখন এ প্লাস নিয়ে ভাবতে হয়। তাদের মুখস্থ করতে হয়, লাল আর নীলে মিলে বেগুনী রঙ হয়। কিন্তু তারা জানে না, হলুদাভ লাল আর নীলে মিলে হাজার মাথা কুটলেও সঠিক বেগুনী রঙ পাওয়া যায় না। তাদের রঙ নিয়ে খেলার সময় দিন। বৈচিত্র্য খুঁজে নিতে দিন।
শিশুদের বাঁচতে দিন। ভুল করেছেন, কিন্তু ভুল শুধরে নেয়ার মধ্যে কোনো অগৌরব নাই। বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করা বন্ধ করুন। শিশুদের মনস্তত্ব বোঝার চেষ্টা করুন। ফিনল্যান্ডের দিকে তাকান। তাদের অনেক আগে থেকেই এমন কোনো পরীক্ষা নেই। সিঙ্গাপুরও সম্প্রতি তুলে দিল। এমনকি ক্লাসে পর্যন্ত শিশুদের র্যাংকিং করবে না তারা। তাদের নম্বরপত্রে উল্লেখ থাকবে না, কে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। শিশুদের ফেলকে তারা লাল কালিতে দেখাবে না আর। দুনিয়াজুড়ে অনেক কিছুই ভাবছে মানুষ। আপনারাও ভাবুন, প্লিজ। একজন শিশুর অভিভাবক হিসেবে এ আমার কাতর অনুনয়। 'কেন এ প্লাস পেতে হবে?', 'পরীক্ষা না থাকলে কী এমন ক্ষতি হত?'.........এমন সব প্রশ্নের সম্মুখীন আর হতে চাই না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬