আমার কাজ একেবারেই সহজ। আজ পাঁচটা পূরন হতে যাচ্ছে। তারপরই আমি পেয়ে যাব ত্রিশ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে টোপ দিয়ে দিয়েছি। শিকার টোপ গিলতে শুরু করেছে।
-ভাইজান, আপনের ট্যাকা ছিঁড়া। পাল্টাইয়া দ্যান।
-এই রে, আমার কাছে তো এইটা ছাড়া আর কোন ট্যাকাই নাই।
-ট্যাকা দিয়া যাইতে হইব।
-চল আমার লগে। ট্যাকা দিমু।
-কই যামু?
-এইতো সামনে।
আমি পার্কের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি। আমার সাথে সাথে হাঁটতে থাকে ছোট্ট কমলা বিক্রেতাটি। সে আমার সাথে সাথে হাঁটছে ত্রিশ টাকার আশায়। টাকাটা পেলে সে হয়তো বাড়ি ফিরে যাবে। চুলায় হাঁড়ি চড়াবে তার মা। বেচারা জানেই না, মায়ের কাছে সে আর ফিরবেই না। কী ভাবছেন? সে কথা ভেবে আমার দুঃখ হচ্ছে? উঁহু। আমি ত্রিশ হাজার টাকায় তিন মাস বিনাকর্মে বসে বসে খাব। মায়েদের ছেলে বাড়ি ফিরে না গেলে আমার কী? জানোয়ারদের দুঃখবোধ থাকতে হয় না যে।
ক্লিনিকের মূল দরজায় চলে এসেছি। আমার বুক ঢিপঢিপ করছে। ত্রিশ হাজার টাকার আনন্দে। দ্রুত হেঁটে ভেতরে চলে এলাম। ছেলেটিও। আমার পরিচিত সেই চেম্বারে প্রবেশ করে ডাক্তারকে চোখের ইশারা করলাম। ডাক্তার বেল চাপলেন। সাথে সাথে ভেতর থেকে দুজন কর্মচারী বের হয়ে এল। তারা ছেলেটির মুখ বেঁধে ফেলল। সেই সাথে হাত দুটিও, পেছনদিকে নিয়ে। কিছুক্ষন আগে আমাকে 'ভাইজান' বলে সম্বোধন করা ছেলেটির চোখে এখন রাজ্যের বিস্ময়, ছেলেটির দিকে না তাকিয়েও আমি সেটা বুঝতে পারি। হয়তো ঘৃণাও আছে। না, ঘৃণা নেই। সে বুঝতেই পারছে না কী ঘটছে এখানে। ডাক্তার আমার হাতে চেক তুলে দিলেন। সেটা নিয়ে আমি ফুরফুরে মেজাজে বের হয়ে এলাম। ভিক্টিমের চোখের দিকে তাকানোর সময় জানোয়ারদের থাকে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:০৩