১. মুক্তাদির আহমেদ চুপচাপ বসে আছেন তার রুমে। শান্ত মুখে বসে রকিং চেয়ারে মৃদু দুলছেন। যদিও তার মুখ দেখে বোঝার কোন উপায় নেই তার মনের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এটি তার একটি গুণই বটে। মানুষ বিপদে পড়লে অস্থির হয়ে যায়। হাঁটাচলা করে। তার হয়ে যায় একেবারে উল্টোটা। তিনি অনেকটা স্থির হয়ে যান। অনেকটা বরফের মত।
যদিও তার এ নিশ্চল রূপ দেখে বোঝার উপায় নেই যে কিছুক্ষণ আগেই তিনি তার বসের কাছে থেকে কঠিন কথা হজম করেছেন। সহজ বাংলায় বলতে গেলে ঝাড়ি খেয়েছেন। যদিও তার মত ডাকসাইটে সম্পাদককে(বর্তমানে CEO) ঝাড়ি দেয়া সহজ নয়। কত বড় বড় রাজনীতিবিদ, আমলা কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছেন। দেশপ্রেমিক নেতা ও আমলাকে বানিয়েছেন চোর, আর চোর কে দিয়েছেন পেট্রিওট সার্টিফিকেট। কারণ ক্ষমতা তার হাতে। কয়েকজন আমলাকে তো ওএসডি করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন। তবে বাপেরও বাপ আছে।
এহেন ক্ষমতার লোককে যিনি গালি দিতে পারেন তার ক্ষমতা তো আরও বেশি। কারণ ঝাড়ি দেয়া ভদ্রলোক টি যে তার বস।
২. মাঝে মাঝে মুক্তাদির আহমেদের মনে হয় তিনি কি ভুল করেছেন পত্রিকার বদলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে যোগ দিয়ে। সারাজীবন পত্রিকায় লিখেছেন। নিজের ইচ্ছেমত খবর ছেপেছেন। যদিও এখনও তাই করছেন। শুধু মাধ্যমটা ভিন্ন।
এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগ। পত্রিকা পড়ে শুধু শিক্ষিত লোকেরা। অশিক্ষিত লোকদের পক্ষে পত্রিকা পড়া সম্ভব নয়। কিন্তু শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই টিভি দেখতে পারে। আর নিউজ চ্যানেল হলে ত কথাই নেই। একেবারে গুলশান থেকে অজপাড়াগায় সবাই এখন খবর দেখে। খবর আর টক শো এর দাপটে অন্য প্রোগ্রাম এখন কোণঠাসা। নিজের অজান্তেই হেসে উঠেন। টক শো ওয়ালারা যে পলিটিশিয়ানের কাছ থেকে নজরানা পায়, তার হিসেব যদি জনগণ জানতো।
আর কে না জানে, জনগণ ভাল খবর খায় না। তারা খায় খারাপ খবর । ভাল খবর সারাদিন টিভি পর্দায় ঝুলিয়ে রাখলেও কেও দেখবে না। কিন্তু খুন, রেইপ, দুর্নীতি, মাস কিলিং এর খবর দেখালে মানুষ তার কাজ কর্ম ফেলে সারাদিন টিভি দেখে। নাওয়া খাওয়ার কথাও ভুলে যায়।
কারণ, There is no news like bad news. কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তিনি তার দর্শকের পর্যাপ্ত bad news দিতে পারছেন না।
৩. তার বসের ঝাড়ি দেবার কারণ স্পষ্ট। টিআরপি। নিউজ চ্যানেল গুলোর মধ্যে একেবারে তলানিতে। অথচ যখন তিনি এ চ্যানেল যোগ দিয়েছিলেন তখন গর্ব করে বলেছিলেন, এক বছরের মধ্যে এ চ্যানেলের টিআরপি টপ থাকবে। কিন্তু কোথায় টপ? একেবারে তলানিতে। অবশ্য চেষ্টা কম করেননি। ব্রেকিং নিউজ দিয়েছেন, টকশো তে বড় বড় বক্তাদের এনেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আসলে এত এত টিভি চ্যানেল যে মানুষ কোনটা রেখে কোনটা দেখবে? সব চ্যানেলের খবর ত একই। আসলে তার দরকার একটি ধামাকা। যে ধামাকা তার টিভি চ্যানেল কে একটানে এক নম্বরে নিয়ে যাবে। কিন্তু............
হঠাত করে ভারতের NDTV তে তার চোখ পরলো। সেখানে ব্রেকিং নিউজ ভাসছে।
Again gang rape in India. This time in broad day light of Mumbai.
A photographer gang raped during his assignment time.
Police publish picture of 6 rapists. Among them one is caught by police.
This incident increase anger among the women’s. Bollywood superstar…….. says no women safe in India except Sonia Gandhi. In a protest.................
দূর, মেডিকেলের ছাত্রীর পর ফটোগ্রাফার গ্যাং রেইপড। ইন্ডিয়ার মিডিয়ার পোয়াবারো। এত বিচিত্র সব ক্রাইম হয় ভাবাই যায় না। হটাত করে নিজে নিজেই একটু হেসে উঠে মোক্তাদির সাহেব, কারণ তিনি তার ধামাকা নিউজ পেয়ে গিয়েছেন।
৪. সব সময় ধামাকা নিউজ পাওয়া যায় না। কিন্তু নিউজ তো সৃষ্টি করাও যায়। যে নিউজ সারা দেশকে কাপিয়ে দেবে। সব চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ, পত্রিকার শিরোনামে, টক শোতে আলোচনার বিষয় হিসেবে। আর তার নেতৃত্ব দেবে তার বাংলা ২৪ চ্যানেল।
কাজটিতে ঝুঁকি আছে। খুব বেশি ঝুঁকি। যদি আসল ঘটনা ফ্লাশ হয়ে যায়, তাহলে তার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
বসের সাথেও কথা হয়ে গেছে। বসের বিকৃত হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি রাজি এ প্লানে। আর কেনই বা হবেন না।
রাত এখন কয়টা হবে? ২টা না ৩টা। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না। রাতের বেলায় তার আবার একটু ড্রিঙ্কস করার অভ্যাস আছে। কারণ ড্রিঙ্কস করাও তার কাছে একটু আর্ট। তাই তিনি সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পান করেন। আর রহিম(কাজের ছেলে) খুব ভাল করেই জানে কি ভাবে ড্রিঙ্কস দিতে হয়। তিনিই ট্রেইন করিয়েছেন।
একা মানুষ তিনি। স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অনেকদিন। সন্তানেরা মায়ের সাথেই থাকে। বাবা নাকি সেলফিশ। স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না। সন্তানদের সময় দেন না। হঠাত করে করে উত্তেজিত হয়ে গেলেন মুক্তাদির সাহেব। “Yes, I am selfish. I am quite a damn selfish. So what? I am successful. নিজের টাকায় ড্রিঙ্কস করি। কার বাপের কি?” চিৎকার চেঁচামেচি করে একটু করে শান্ত হলেন তিনি। এটাও তার অভ্যাস।
না, আর পাগলামি করা যাবে না। প্লান নিয়ে ভাবতে হবে। তার লাইফ বদলে দেয়া প্লান।
৫. হাসান সাহেব, কি ভয় পেয়ে গেলেন?
স্যার, যদি বলি ভয় পাই নি, তাহলে ১০০% মিথ্যে বলা হবে। আপনার প্লান শুনে আমার গায়ের লোম পর্যন্ত দাড়িয়ে গেছে।
(কথোপকথন: Crime dept এর হেড হাসান সাহেব ও CEO মুক্তাদির আহমেদ)
আপনি না হেড অফ ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট............কিছুটা শ্লেষ নিয়ে কথাটা বললেন CEO......
হ্যাঁ, স্যার, ক্রাইম আমার জন্য নতুন কিছু নয়। সারা জীবন আমি ক্রাইম আর ক্রিমিনাল নিয়ে কাটিয়েছি। ক্রাইমের ধরণ ও ক্রিমিনালের মনস্তত আমার নখ দর্পণে। কিন্তু.........
হ্যাঁ, এবার আমরা নিজেরা মানে আমাদের ভাড়াটে লোকেরা ক্রাইম করবে। আর আমরা তার লাইভ আপডেট দিব। আর আমাদের প্রথম ক্রাইম থাকবে......
রেইপ।
NO, you are wrong, গ্যাং রেইপ। মানুষ শুধু রেপের খবর খাবে না। আপনার কোন আইডিয়া আছে সারা দিন বাংলাদেশে কি পরিমাণ রেইপ হয়। কিন্তু তার মধ্যে কয়টি লাইমলাইটে আসে? আসে না। কারণ ?
কারণ?
Atrocity, বর্বরতা।সেখানে বর্বরতা কম। যে ক্রাইম যত বর্বর সেটা মানুষ তত বেশি খাবে। So, we will bring atrocity. Dangerous type atrocity. People will be astonished. How could be people so cruel? সারা দেশ কাপিয়ে দেবে আমদের এ নিউজ। এমনকি দেশের বাইরেও। আমি তো আশা করি ভারতের মেডিকেলের ছাত্রী ও ফটোগ্রাফার রেইপ থেকেও আলোচিত হবে আমাদের এ ক্রাইম। কি অসুস্থ বোধ করছেন নাকি হাসান সাহেব?
না। মানে। কিন্তু স্যার যদি আসল ঘটনা ফ্লাশ হয়ে যায়? তবে
আরে দূর, কিছুই হবে না।
নিন, একটু হুইস্কি খেয়ে নিন।
অফিসে?
আরে নিন। খেলে সাহস বাড়বে।
(ড্রিঙ্কস চলছে)
স্যার, কি করতে হবে আমাকে?
That’s like a brave and an ambitious man
৬. এসি বেশ বাড়ানো তার পরও গরম লাগছে CEO মুক্তাদির সাহেবের। একের পর এক সিগারেট খেয়ে যাচ্ছেন। সব কিছু প্লান মাফিক করা হচ্ছে।
এ সব কাজে কখোনই নিজেদের ইনভলব করতে হয় না। খুব ভাল করেই এটা জানা আছে তার। থার্ড পার্টি দিয়ে কাজ করাতে হয়।
প্লান মাফিক প্লট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে সারস নদীর পাড়। ঢাকার খুব কাছেই। নয়নাভিরাম দৃশ্য। নদীর পাড়েই ঘন জঙ্গল। এ ধরণের ক্রাইম এর জন্য আদর্শ স্থান।
অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন প্রতিদিন। তাদের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকার সংখ্যাই বেশি। অতি উৎসাহী কেও কেও আবার নদীর পাড়ে জঙ্গলে ঢুকে যায়। তারাই তাদের শিকার।
সব ব্যবস্থা হাসান সাহেব ই করেছেন। এ লাইনে তার অনেক জানাশোনা আছে। এক গডফাদারের সাথে চুক্তি হয়েছে। ৫ জন রেপিস্ট। প্রত্যেককে ৫ লাখ করে টাকা দেয়া হয়েছে। এবং ক্রাইম করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্ডার পার করে দেয়া হবে। গডফাদারকে দেয়া হয়েছে ২৫ লাখ।
সাসপেক্ট সম্পর্কে কিছু বেসিক ধারণা দেয়া আছে। যেমন ঃ সাসপেক্টের সাথে অবশ্যই বয়-ফ্রেন্ড থাকতে হবে। হাসবেন্ড থাকলেও ক্ষতি নেই। আর মাস্ট বি স্টুডেন্ট/পেশাজীবী হতে হবে। তা না হলে তাদের সব প্লান মাঠে মারা যাবে।
দ্রুত সময়ে যাতে লাইফ আপডেট দেয়া যায় তার জন্য কিছু সংবাদ কর্মী কে ওই এলাকার কাছে রাখা আছে। প্লান মাফিক প্রথমে পুলিশ কে জানাতে হবে। পুলিশ আসার পর তার সংবাদ কর্মীরা আপডেট দিবে নিউজ। বাস কেল্লা ফতে।
কিন্তু তিন দিন হয়ে গেল কোন সাসপেক্ট পাওয়া গেল না।
I need atrocity, I need atrocity, I need atrocity……………………………
৭. ফোনের শব্দে চমকে উঠলেন CEO মুক্তাদির। হা, অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ফোন এলো বুঝি। কারণ এ নাম্বার টি যে স্পেশাল। ফোন করেছে তারই এক রিপোর্টার।
কি খবর বল?
Sir, I think I get the target of our mission.
Super. ব্যাখ্যা কর।
বয়স ১৪-১৫, সাথে বয়ফ্রেন্ড অথবা ফ্রেন্ড, ড্রেস বলছে নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের।
স্যার?
Just do it.
৮. ১ ঘণ্টা পর..................... CEO সাহেবের গোপন ফোন আবার বেজে উঠলো।
স্যার, They did their work.
Ok, ডিটেল বল।
৫ জন মিলে নির্যাতন করেছে, স্যার, ভয়ানক নির্যাতন। তার পর হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়েছে। বয়ফ্রেন্ড বেটা বাধা দিয়েছিল। হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। মেয়েটিও বাঁচবে না, sure sir. পুলিশ কে ইনফরম করা হয়েছে। ওঁরা পৌঁচে গেছে। আমরাও ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁচে যাব।
আর রেপিস্টরা। একটি গাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। কাল সকাল নাগাদ বর্ডার ক্রস করবে, প্লান মাফিক, স্যার।
মিডিয়াতে তোলপাড় পড়ে যাবে এবার। আর কিছুক্ষণের মধ্যে লাইভ আপডেট। আচ্ছা, ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী, না। তা কোন স্কুলের?
Red Arrow International School র স্যার।
CEO র হার্ট যেন ধপ করে উঠল। Red Arrow International School র। নাম জানতে পেরেছো কি?
জি স্যার, সালারা আইডি কার্ড টা আমাকে দিয়ে গিয়েছে।
Name: Sultana Muktadir
Class: Standard 9
Section: A
Address: H: 49, R: 12, Sector: 20, Uttara.
CEO মুক্তাদির সাহেব ফোন হাতে স্থির হয়ে গেছেন। বরফ না একেবারে পাথরের মত। বিড় বিড় করে বলছেন, না এ হতে পারে না, এ হতে পারে না।
কিন্তু না, তাই হয়েছে। বড় আদর করে নিজের মেয়ের নাম তিনিই রেখেছিলেন সুলতানা। মেয়ে বড় হবার পরও পিতার নামে শেষাংশ বদলায়নি। এবং কি বাসার ঠিকানাও না।
বুকের বাম পাশ টা যেন কেও খামছে ধরেছে। বুঝতে পারলেন যে তার হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, তিনি মারা যাচ্ছেন। আজীবন তিনি নরকের আগুনে জ্বলবেন। এও বুঝতে পারলেন যে এ পাপবোধ থেকে তার মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই,
মুক্তি নেই।
মৃত্যুর আগে একবারের মত নিজের মেয়ের মুখটি মনে করতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। বুঝতে পারলেন যে ক্ষমা চাওয়ার অধিকারও নেই।
৯. স্যার, স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে। একনাগাড়ে Crime dept এর হেড হাসান সাহেব তার মালিককে সব বলে গেলেন।
স্যার, কি করব এখন?
যা, বলছি মন দিয়ে শুনুন।
১0. Breaking news, Breaking news, Breaking news…………
“এবার গ্যাং রেইপের শিকার হলেন বাংলা ২৪ চ্যানেলের CEO মুক্তাদির আহমেদের মেয়ে সুলতানা আহমেদ। আমরা এখন লাইভ আপডেট এ চলে যাচ্ছি ঘটনাস্থলে........................
আমাদের সাথে আছেন...........................
পুনশ্চ : মুক্তাদির আহমেদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বাংলা ২৪ চ্যানেলের টিআরপি এখন টপ। ব্রেকিং নিউজের স্রষ্টা এখন এখন নিজের ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেছেন।