somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরাবালি, একজন পতিতা ও সোনার হরিনের গল্প

০৩ রা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিরপুরের ওভার ব্রীজটা আজকে বেশ ব্যাস্ত । ফার্মগেটে ভীর বেশি থাকে বলে ওদিকে যায়না চন্দ্রা । অবশ্য ভিরের মধ্যেই কাস্টমার পাওয়া সহজ । বেশি মানুষ দেখলে নিজেকে তাদের সাথে তুলনা করতে ইচ্ছে করে চন্দ্রার । আর মানুষের সাথে তুলনা করলে নিজেকে শুন্য মনে হয় । অবশ্য চন্দ্রিমা উদ্যান, বোট্যানিক্যাল, বলধা গার্ডেন কিংবা রমনা পার্কেও কাস্টমার সহজেই পাওয়া যায়, কিন্তু অন্ধকার চন্দ্রার কাছে দুঃস্বপ্নের মত লাগে । তার উপর পাতিনেতা, পুলিশ ও চাটুকারদের আনাগোনা বেশি ঐদিকটায় । কাজ সারতে পারলে টাকা না দিয়েই চম্পট দেয় ! শালা !
ছোট্ট একটা দীঃর্ঘশ্বাস হজম করে চন্দ্রা । দুঃস্বপ্নের সেই প্রথম রাত তার স্মৃতিপটে এখোনো ভাসে ।
ঢাকা ছিলো তার স্বপ্নের শহর । গ্রামের পরিবেশ, মা-বাবার চাপ, সারাদিন নানান কাজ করেও ক্ষুধার কষ্ট ! বিপরিতে সে দেখতে শুরু করেছিলো রঙ্গিন স্বপ্ন । অজানা অচেনা একজন স্বপ্নের তুলিতে রং লাগাতো প্রতিদিন । অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষনের ডাক এলো ।
হ্যা । মোবাইলেই জয়ের সাথে ওর পরিচয় । জয় ? নাকি অন্যকোনো নাম আছে ওর ? কে জানে ! ওর কাছে পরিচয় দিয়েছিলো অফিসের এক কর্মকর্তা হিসেবে । একজন মানুষ যে লাগাতার সবগুলো কথা মিথ্যা বলতে পারে এই নির্মম সত্যের মুখোমুখি না হলে সে জীবনেও ভাবতে পারতো না ! এখন অবশ্য নিজের দোষও খুজে পেয়েছে চন্দ্রা । একজন মানুষকে একদমই না জেনে এতোটা বিশ্বাস করা শুধু ভুলই নয়, মস্ত অপরাধও বটে । সেই অপরাধের শাস্তি সে পাচ্ছে ।
পদ্মা তীরের কোনো এক ছোট্ট গ্রামে তার নিবাস ছিলো । জয় বলেছিলো লঞ্চ ঘাটে আসলেই যেনো পারুল লঞ্চে উঠে পরে । রঙ্গিন স্বপ্নে মোহাচ্ছন্ন পারুল একবারও ভাবেন বৃদ্ধা মা বাবা কিংবা ছোট বোনের কথা ।
নদীর মাঝে সূর্য্য হারিয়ে যাবার পরই তার দুঃস্বপ্নের শুরু । যেনো সূর্যের সাথে তার রঙ্গিন স্বপ্নগুলোও ডুব দিয়েছে নদীতে । পরেরদিন ভোরে পূর্বাকাশে সূর্য ঠিকই উঠেছিলো, কিন্তু তার স্বপ্ন আর ফিরে আসেনি । লঞ্চের কেবিনে জয় জোড়াজোরি শুরু করলে কিছুক্ষন ধস্তাধস্তির পর হাল ছেড়ে দিয়েছিলো পারুল । জয়ের সেই ভয়ংকর রুপ তার কলিজায় কাপন ধরিয়ে দিয়ে ছিলো । কিন্তু তখনও সে কল্পনাও করেনি এরচেয়ে হাজারগুন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন তার জন্য অপেক্ষা করছে ! ঢাকায় এসে সদরঘাটের কোনো এক বডিংয়ে ওঠার পর একবারের জন্যও বাইরে বেড়োতে দেয়নি জয় । তার শরীরের উপর জয়ের অনধিকার চর্চাটা একসময় স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলো । একসপ্তাহ এভাবে কাটার পর জয় অফিসে যাওয়ার কথা বলে বেড়োলো । বলেছিলো ফিরতে দেরী হবে ।সেই দেরী এতো লম্বা হলো যে তার ফেরার সময়টা আর আসলো না । একদিন, দুদিন, তিনদিন ! নাহ ! জয় চম্পট দিয়েছে । হোটেলের লোক তার কাছে আসলো টাকার জন্য । পারুল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলো । তার কাছে থাকা জয়ের একমাত্র মোবাইল নম্বরটি চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু তার কান্নায় অ্যাতোটুকু মন গলেনি হোটেল ম্যানেজারের । দুদিন উপর্যপূরি ধর্ষন শেষে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলো সে ।
ভেবেছিলো সুইসাইড করবে । কিন্তু কিভাবে করবে ভাবতে গিয়ে আবিস্কার করলো নিজেকে হত্যা করার সাহসটুকু এখোনো অর্জন করা হয়নি ! রাস্তায় উশকো খুশকো অবস্থায় হাটতে ছিলো । কেউ একজন বারবার তার গায়ে ধাক্কা দিছিলো কোনো কারন ছাড়াই । পারুল অসহায় চোখে তার দিকে তাকালে সে জিজ্ঞেস করেছিলো রেট কতো ?
মাথাটা ম্যাজিকের মতো চক্কর দিয়ে উঠলো । দুদিনে তেমন কিছু পেটে পড়েনি পারুলের । আর যে সম্ভ্রম ইতোমধ্যে হাড়িয়েছে তার জন্য মায়া করে লাভ কী ?
এরপর অনেক জল গড়িয়েছে যমুনায় । এই শহর তাকে শিখিয়েছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা । প্রথম কদিন রাস্তায় পার্কে থাকতে হতো রাতে । বলাই বাহুল্য সেটা মোটেও স্বস্তির ছিলো না । কিন্তু ততদিনে ওটাকে কিছু মনে করতো না সে । পরে বস্তির একটা ছোট্ট রুম ভারা নিয়েছিলো কমলাপুরে ।
তিন বছর আগের কথা । যখন ওভারব্রীজে ছেলেগুলো একটা আরেকটাকে বলতো 'ওই দ্যাখ ! একটা মাগী' কষ্টে বুক ফেটে যেতো পারুলের । এখন সেই কষ্টের উপর পাথরের পাহার চাপা দিয়েছে । মা বাবার দেয়া পারুল নামটাও ছুরে ফেলে দিয়েছে । ওই নামে কেউ ডাকলেই মায়ের কথা মনে পড়ে । মা তাকে দিনে হাজারবার ঐ নামে ডাকতো ।
গ্রামের সমাজ, তার পরিবার ও আত্বীয়দের কথা ভেবে এই তিন বছরে তার ঘরে ফেরার কথা মনে হয়নি একবারও । কিন্তু ঘর বাঁধার যে রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে সে ঘর ছেরেছিলো সেই স্বপ্নের প্রেতাত্বা তাকে তাড়িয়ে বেরায় প্রতি মুহুর্তে ।
গাড়ির হুইসেলের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো চন্দ্রার । চন্দ্রা ? হ্যা ! এখন ত সে চন্দ্রাই !
রাস্তার ঐ পাড়ে লোকটাকে দেখা যাচ্ছে । গত কয়েক মাস আগে । মিরপুরে আসার পরথেকেই মাঝে মাঝে লোকটা তাকে ফলো করতো । তিন কোটি লোকের এই ঢাকা । এখানে মেয়েদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার দায়িত্বে বিভিন্ন বয়সের বহু পুরুষ নিজেকে নিয়োযিত রাখে । তাই প্রথমে গা করেনি চন্দ্রা । একদিন কথা বলতে আসলো । কিন্তু (হয়তো লজ্জায়) কথাই বলতে পারছিলো না । চন্দ্রাই সাহসী হয়ে জিজ্ঞেস করছিলো কিছু লাগবে কিনা !
এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই ন্যাকার মত প্রশ্ন করে 'কী ?' যেনো ফিডার খায় ! কিন্তু সে জিজ্ঞেস করেনি । সরাসরিই জানতে চাইছে রেট কতো ? স্বাধারনত চালাক ক্লায়েন্টরা অল্প কিছু দিয়ে কেটে পড়ে । কিন্তু রেট জানতে চাওয়ায় চন্দ্রা এক হাজার হাকিয়ে বসলো । লোকটা আর বাক্যবায় করেনি । এরপর প্রায়ই আসে লোকটা । টাকা দিয়ে কাজ সেরে চলে যায় । আজ লোকটা ঘুড়ঘুর করছে । কাছে আসছে না । আঁড় চোখে তাকিয়ে দেখছে ।
চন্দ্রা এগিয়ে গেলো । 'ক্যামন আছেন'
'ভালো' লোকটির সংক্ষীপ্ত জবাব ।
'এদিকে ঘোড়াঘুড়ি করছেন ? কোনো কাজ আছে নিশ্চয়ই !'
'না মানে , হ্যা ! একটা কাজ ছিলো !'
চন্দ্রা বুঝতে পারছে লোকটা তার সাথে কথা বলতে চাইছে , কিন্তু কথা খুজে পাচ্ছে না ।
'আপনার তারা না থাকলে চলুন কোথাও বসে গল্প করি !'
লোকটি জানতে চাইলো কোথায় !
'স্টোডিয়ামে যাওয়া যেতে পারে'
লোকটা গাঁই গুঁই করছিলো । চন্দ্রা এক প্রকারের জোর করেই নিয়ে গেলো ।
আগে এমনটা কখোনো করেনি । লোকটার কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়ার কারনে তার প্রতি একধরেন দূর্বলতা অনুভব করছিলো চন্দ্রা ।
কথা বার্তায় লোকটা একদমই আনাড়ি । চন্দ্রা অল্পতেই বুঝে ফেললো পকেট খালি হওয়া সত্বেও তাকে দেখতেই লোকটির গোলচত্বরে আসা । চন্দ্রা সাত পাচ না ভেবেই এক প্রকারের জোর করেই তাকে রুমে নিয়ে গেলো । শেষ মুহুর্তে লোকটি বলেই ফেললো তার কাছে টাকা নেই !
'মিরপুর এসেছিলেন ক্যানো?'
লোকটি মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলো ।
'ওভারব্রীজে ওরকম করে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন ক্যানো ?'
এবারও নিরব তিনি । তার অসহায়ত্ব দেখে চন্দ্রা হেসে ফেললো । 'চলুন , আজকে টাকা লাগবে না !'
লোকটি অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো । চন্দ্রা বললো 'আপনি আমাকে মনে করে দেখতে এসেছেন, এটাই আজকে আমার বিনিময় !'
পরেরদিন চন্দ্রা মিরপুরে দাড়িয়ে ছিলো । শুধু পরেরদিন নয় ! পরেরদিনগুলো । প্রান আকুতি করে চাইছিলো লোকটি আবার কবে আসবে ।
কিন্তু তারপর আর তাকে মিরপুর ওভারব্রীজে দেখা যায়নি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×