পহেলা মে । শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস । গতকাল ঝালকাঠিতে তিন বন্ধু যখন এক রিকশায় যাচ্ছিলাম তখন নির্মান শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী ও কাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হচ্ছিলো । আমাদের পরের দিন বরিশাল ফেরার কথা । কথা প্রসঙ্গে আবরার জানতে রিকশাওয়ালার কাছে জানতে চাইলো আগামীকাল অর্থাত্ আজ রিকশাওয়ালা রিকশা চালাবে কিনা ! জবাবে রিকশাওয়ালা যাব বললো তার অর্থ মোটামুটি এইরকম যে, রিকশা ত চালাতেই হবে ! নইলে সংসার চলবে কি করে ? কিন্তু সকাল সময়ে রিকশা নিয়ে নামলে রিকশার ক্ষতি করতে পারে ইউনিয়নের নেতারা ! তাই জীবিকার একমাত্র এই অবলম্বনটি বাচানোর তাগিদে র্যালি তথা ইউনিয়নের তাবত কর্মসূচীর পড়ে রিকশা নিয়ে নামতে হবে !
তার কথার অর্থ মোটামুটি পরিস্কার যে , শ্রমিক দিবস উজ্জাপন তার কাছে একদমই মুল্যহীন । তিনি যতক্ষন তার শ্রম বিরতি দিবেন, তা মে দিবসের আত্বত্যাগের শোক স্বরণে কিংবা অধিকার প্রাপ্তির আনন্দে নয়, বরং ইউনিয়ন নেতাদের ভয়ে এবং নিজের জীবিকার অবলম্বনটি বাঁচানোর জন্য ।
অনেকেই বলে থাকবেন অশিক্ষীতরা মে দিবসের মর্ম বুঝবেন ক্যানো ? কথাটা অবশ্যয়ই সত্যি যে তার মে দিবসের মর্ম বুঝার কথা নয় । এরকমটা শুনলেও অবাক হবো না যে তিনি মে দিবসের কোনো ইতিহাসই জানে না । তার কাছে দিবসের ফর্ম্যালিটির কোনো গুরুত্ব নেই । অথবা মে দিবসের ইতিহাস জানলেও তার জীবিকার তাগির কার এই দিবস গুরুত্বহীন ।
আসলে মে দিবসের শিক্ষা ও প্রতিপাদ্যটা শ্রমিকদের জন্য যতটা না গুরুত্বের তার চেয়ে বহুগুন গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য যারা শ্রমিকদের কাজ থেকে শ্রমটা নেয় । আজও পর্যন্ত অন্তত বাংলাদেশে আমরা শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা দিতে পারিনি । 'বস্তি' ও 'খ্যাত' আমাদের জনপ্রিয় দুটি গালি । অথচ খ্যাত বলতে যাদের বুঝায় ক্ষেতে কাজ করা সেই কৃষক অসীম ধর্য্যের ফসল না হলে দেশের দুঃর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবি । বাংলা সিনেমায় ধনী গড়িবের প্রেম কে বারবার পর্দায় স্বীকৃতি দিলেও দেশের শতভাগ মধ্যবৃত্ত এমনকি স্কুল কলেজে শিক্ষকদের মানসিকতাও সিনেমার ওই ধনী পিতার মতো !
যাই হোক, নতুন প্রজন্মকে আমরা কি শিখাবো ? আর কিছু নয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি শুধু এটা শিখানো হতো যে কিভাবে চিন্তা করতে হয় , তবে চিন্তা করতে হয় তবে বাকিটা তারা নিজেরাই শিখে নিতো । আর সব বাচ্চাদের স্কুলে নেয়ার ব্যাপারেও কতৃপক্ষ যথেষ্ট সচেতন নয় ।
পুজীবাদ সমাজ ব্যাবস্থায় কখোনই শ্রমিকদের সামাজিক স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব নয় ।তবে পুজীবাদ আর টিকতে পারবে না । এই বৈষম্যের ব্যাবস্থা থেকে বেড়োনো একটাই উপায় । শিক্ষা । শিক্ষা যত ছড়াবে এর আলো তত ছড়াবে । যদি সত্যিই কেউ সমাজের উন্নয়ন চাই তবে তার উচিত্ শিক্ষাকে সার্বজনীন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা ।
নিদৃষ্ট কিছু কিছু ক্যাডারের চাপে দিবসের আনুষ্ঠানিক উজ্জাপন , মুখস্ত কিছু বুলি দিয়ে বক্তৃতা আওড়ানো, রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা মিথ্য প্রতিশ্রুতি, ইউনিয়ন নেতার চাপে কর্মবিরতি এবং মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি কর্মবিরতিতেও লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় নয়, মে দিবস হোক বিশ্ব শ্রমিকদের এক সুরে গান গাওয়ার দিবস । প্রতিটা মে দিবসে একটু একটু করে ভেঙ্গে পড়ুক সামাজিক স্তর । প্রতিটা মে দিবসে প্রজন্ম শিখুক শ্রম ও শ্রমিককে ভালোবাসতে, করুণা করতে বা দয়া দেখাতে নয় !