সংখ্যালঘুরা নির্যতনের স্বীকার , আর সংখ্যাগুরুরা অপপ্রচারের ।
সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্পদায়িক দাঙ্গা একটি মধ্যযুগীয় বা তারও পূর্বের বৈশ্বিক সংস্কৃতি । মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে জাতীয়তাবাদ । গোড়া মৌলবাদীরাই যে সব সময় সাম্প্রদায়িকতার জন্য সরাসরি দায়ি এমনটা না হলেও তাদের বক্তব্য ও প্রচারনা সাম্প্রদায়িকতা জীয়িয়ে রাখে যুগের পর যুগ ।
যেকোনো ঘটনারই একটা শুরু থাকে । ভারতের অতি সম্প্রতি যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেশ আলোরন সৃষ্টি করেছে , আমি যতদুর জানতে পেরেছি সেটা কয়েকজন যুবকের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা থেকে শুরু হয়েছে । অন্যায় অবশ্যয়ই তারা করেছে তবে এর দায়টা শুধুই তাদের । শাস্তি শুধু তাদেরই পাওয়া উচিত্ । তবে জল গড়ানো শুরু করলে তা সমুদ্রে না পৌছে থামে না । নির্যাতিতদের কিছু অংশ প্রথমেই নির্যাতনের দায়টা পুরো সংখ্যা গুরু জাতির উপর চাপিয়ে দেয় আর সংখ্যাগুরুর কিছু অংশ অপরাধীদের সাফাই গাওয়া শুরু করে । আশ্চার্যজনক হলেও সত্যি যে এই 'কিছু অংশে'র মধ্যে শুধু অশিক্ষিত ক্ষমতাবানরা নয় , এমন মানুষও থাকে যারা সমাজে বুদ্ধীজিবী হিসেবে প্রসিদ্ধ ।
বাংলাদেশের চিত্র অবশ্য অনেকটাই আলাদা । এখানে ভালো খারাপ যাই ঘটুক রাজনৈতিক দলগুলো তার থেকে ফায়দা লুটতে চায় । এইজন্য সরকার সকল নৈরাজ্যের দায় চাপায় বিরোধীদের উপর আর বিরোধীরা এসব ঘটনা সরকারের ব্যার্থতা হিসেবে প্রচার করে ।
সংখ্যাগুরু হিসেবে যখনই শুনি কোনো যায়গায় সংখ্যালঘুর উপর আক্রমন হয়েছে , শুধু খারাপই লাগে না ভীষন লজ্জাও লাগে । ঘটনা গুলো ঘাটলে দেখা যায় বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে কিছু উগ্রপন্থীদের কারনে । তাদের আওয়ামীলিগ বিএনপি বা জামাত ট্যাগিং না দিয়ে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলে ঘটনার মোটামুটি একটা বিহিত হয় ।
কিছু কিছু ঘটনা ঘটে রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের ফাসানোর জন্য । এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ঘটনার দায় এড়াতে পারে না । দলকে বিতর্কের উর্ধে রাখতে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত্ । যদিও বাংলাদেশের রাজনিতিতে এমন দৃষ্টান্ত বিরল ।
কখোনো সংখ্যালঘুয়া নিজেরা বিশৃংক্ষলা ঘটালেও সন্দেহের দৃষ্টি সংখ্যাগুরুদের দিকেই উঠে । এসব ঘটনার পুনরাবৃতি রুখতে তাদেরকেও অবশ্যয়ই বিচারের আওতায় আনতে হবে ।
কিছু কিছু ঘটনায় সংখ্যালঘু কারো বারবারিও থাকে । তবে এসব ঘটনা বিরল ।কারন সংখ্যালঘু এম্নিতেই ছোটো মনে থাকে । তারপরও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কোনো সদস্য বিশৃংক্ষলা ঘটালে তা সংখ্যাগুরুদের সর্বোচ্চ ধৈর্য সহকারে দেখা উচিত্ এবং বিষয়টিকে জাতিগত সংঘাতে রুপ না দিয়ে ব্যাক্তিগত পর্যায়ের বিচারের মাধ্যমেই নিষ্পত্বি করা উচিত্ ।
সবার উপরে মানুষ সত্য । বিভিন্ন রাজনৈতিক , দার্শনিক ও ধর্মীয় মতবাদ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে । এর থেকে বেড়িয়ে আসা সম্পূর্ণ অসম্ভব কিন্ত এসব মতবাদের উর্ধে থেকে আমরা যদি চিন্তা করতে পারি যে আমরা মানুষ , তাহলেই সকল মানুষকে আমরা সমান চোখে দেখতে পারবো ।
>উপরের অংশটুকু ১৪ জানুয়ারী ২০১৪ তারিখে সামহোয়্যারইন ব্লগে প্রকাশিত । মানুষ যদি সত্য হয় তবে মানুষের প্রধান ধর্ম মানবতা । মানুষের কাতারে দাড়াতে হলে, নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে হলে মানবতাকে স্বীকার করতে হবে । হিংস্রতা পশুর ধর্ম । পশুর কোনো কান্ডজ্ঞান থাকে না । সৃষ্টিকর্তা একমাত্র মানুষকেই ন্যায় অন্যায় এবং উচিত্ অনুচিত্ বেছে নেয়ার জ্ঞান দান করেছেন । যার মধ্যে এসব জ্ঞানের অভাব পরীলক্ষিত হয় তাকে মানুষের কাতারে ফেলাটা সঙ্গতিপূর্ণ নয় । বায়োলজিক্যালিই মানুষকে অনন্য প্রাণীর স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এই বিশেষ গুনটির কারনে ।
হাত পা নাক চোখ মনুষ্য সদৃশ হলেই মানুষ হওয়া যায় না ।
সুতারং কিছু হিংশ্র জানোয়ার যদি কোনও কারনে ক্ষেপে গিয়ে মানববসতি আক্রমন করে বসে তবে তাদেরকে নিষ্ঠুর হাতে প্রতিরোধ করাই মানুষের দায়িত্ব । ব্যাক্তি যদি অপরাধ করেও থাকে তবে দায়টা শুধুই তার, তার পরিবার, সমাজ, জাতি বা অন্য কারো নয় । এবং সেই অপরাধের বিচারের জন্য বিচারক আছে , আছে বিচারের মাপকাঠিও । এক ঊর্ধে গিয়ে যদি ব্যাক্তির বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেয়া হয় তবে তা অবিচার ।
অবশ্য বিচার অবিচার বিবেচনার ক্ষমতা পশুর থাকার কথা নয় । সংখ্যাগুরুর তকমা গায়ে সাটানো থাকার কারনে আরো একবার লজ্জিত । এই লজ্জার গ্লানী আমরণ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৮