কয়েকদিন আগের ঘটনা , আমি অনেক কষ্ট করে মাথার ঘাম কপালে ফেলে আমার প্রিয় পায়রা নদী নিয়ে একটা কবিতা লেখলাম ।
কবিতাটা এত্ত সুন্দর হয়েছিলো যে বারবার আওরাতে ছিলাম আর নিজেকে বাহবা দিচ্ছিলাম । প্রথম কবিতাটা আমার ঘনিষ্ট বন্ধুকে পড়ানোর জন্য সময়জ্ঞান ফেলেই ওকে ডাকতে গেলাম । সন্ধ্যার পর । আমি ওর বাসার সামনে গিয়ে বারবার হাক দিচ্ছিলাম । আমার তর সইছিলো না ।
প্রায় দের মিনিট পর দরজা খুলে চোখ গরম করে বললো 'শালা , কয়জন মরছে ? শান্তিতে একটু টয়লেটও করতে দিবি না ?'
ওর চেহারা দেখে ভরকে গেলাম । তারপরও বললাম 'দোস্ত একটা কবিতা লিখছি । অনেক সুন্দর হৈছে ।'
'কবিতা শুনাইতে আইছো এই সময় ?'
পরে আমার পিড়াপিড়িতে শুনতে রাজী হলো 'বললো , তুই পড়ে শুনা '
আমি পড়তে লাগলাম
আমাদের ছোটো নদী চলে বাকে বাকে
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে
পাড় হয়ে যায় গরু. . .
হটাত্ ঠাস করে একটা শব্দ শুনলাম । তারপর আরেকটা । সামনে তাকিয়ে দেখি ও দরজা বন্ধ করে চলে যাচ্ছে । প্রথম শব্দটা কোথা থেকে আসলো সেটা বুঝতে পারিনি । তবে ক্যানো জানি কিছুখন পর আমার বা গালটা জ্বলছিলো ।
দুঃখ ভরা মনে বাসায় ভিরে আসলাম ।বুঝতে পারছিলাম না সমস্যাটা কোথায় !
বাসায় আমাকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে ন বছরের ভাগ্নেটা জিজ্ঞেস করলো 'মন খারাপ ক্যানো মামা ?'
আমি জবাব দিলাম না । আমি ওকে বেশি ঘাটাতে যাই না । মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওর পরামর্শ নিতে হয় । তাছারা ও আমার কবিতার বড় এক সমঝদার ।
কিছুক্ষন পর আবার জিজ্ঞেস করলো 'মামা তোমার গালটা লাল হয়ে আছে ক্যানো ?'
এবারও আমি জবাব দিলাম না । কিছুক্ষন পর ও আবার উত্তেজিত কন্ঠে ডাকলো 'মামা !'
ওর কন্ঠে উত্তেজনা দেখে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি আমার কবিতার খাতাটা ওর হাতে । এবার আমার আগ্রহ সৃষ্টি হলো ।
জবাব দিলাম 'কি ?'
'এই যে' আমার লেখা কবিতাটা দেখালো 'এইটা তুমি লিখেছো ?'
ওর আগ্রহ দেখে একটু তাচ্ছিল্যকরেই বললাম 'তুই জানিস না ওটা আমার কবিতার খাতা ?'
ও আরো উত্তেজিতো হয়ে বল্লো 'তুমি লিখেছো কিনা বলো ?'
এবার একটু মেজাজ দেখালাম 'আমি না লিখলে জ্বীনে এসে লিখে দিয়ে যাবে নাকি আমার খাতায় ?'
ওর উত্তেজনা একটুও কমেনি 'তোমার এই কবিতাটা না , আমাদের বাংলা বইতে আছে'
এবার অবাক হলাম 'বলিশ কিরে ! এই ত সন্ধ্যার সময় লিখলাম মাত্র'
ও কথা না বলে দৌরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার দৌরে আসলো । হাতে বাংলা বই । আমাকে কবিতাটা বের করে দেখালো । আমি দেখলাম ঘটনা সত্যিই । কয়েকবার মিলালাম । নাহ! ঠিকই আছে । পরে উপরে চেয়ে দেখি নামটা আলাদা । আমার কবিতার নাম আমাদের পায়রা নদী । আর ওখানে লেখা আমাদের ছোটো নদী । আর তার নিচে ছোটো করে লেখা "রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর " ।
রাগে মাথার চুল ছিরতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ! এই ঠাকুর বেটা কে ? আমার কবিতা লেখার আগেই ও মেরে দিয়েছে । নিজের নামে ছেপেও দিয়েছে । আর টেক্সট বুক কমিটিও যাচাই বাছাই ছারাই কবিতাটি ওর নামে পাঠ্য বইতে ছেপে দিয়েছে । পোড়া দেশে কপিরাইটের কোনো বালাই নেই ।